এম.পলাশ শরীফ :: উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের শরণখোলায় তিন বন্ধু প্রথমবারের মত তরমুজ চাষ করে সকলের নজর কেড়ে নিয়েছেন। উপজেলার জিলবুনিয়া গ্রামের লোকমান, মামুন ও মানিক নামের তিন বন্ধু নদীতে মাছ শিকারের পেসা ছেড়ে তরমুজ চাষে সফলতা পেয়েছেন। বলেশ্বর নদীর বেড়িবাধের পাশের পতিত মাঠের তিন বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ওই চাষ শুরু করেন তারা। এক ফসলী ও পতিত জমিতে তরমুজ চাষে সফলতা দেখে আগামীতে তিন ফসলী জমিতে চাষাবাদের জন্য এখনই কৃষকদের পরমর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।
সরেজমিন শরণখোলা উপজেলার একমাত্র তরমুজ ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, লতাপাতার ফাঁকে ফাঁকে লুকিয়ে রয়েছে হাজার হাজার তরমুজ। দেখে বোঝার উপায় নেই অনবিজ্ঞ চাষীরা চাষ করেছেন এই তরমুজ। এ সময় মাঠে তরমুজের গাছ পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন লোকমান, মামুন ও মানিক নামের তিন বন্ধু।।
সফল তিন চাষি বলেন, অভিজ্ঞতা ছাড়াই চার মাস আগে তিন বন্ধু মিলে ৬০ হাজার টাকা করে বিনিয়োগ করে তরমুজ চাষ শুরু করি। ৮ হাজার করে মোট ২৪ হাজার টাকায় তিন বিঘা জমি নগদ টাকায় রেখেছি, ৩৫ হাজার টাকার বীজ, সার ও বালাই নাশক বাবদ ৮০ হাজার টাকা, নেটের বেড়া ও পানি সেচ মিলে মোট ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশাকরি প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হলে ৫ লক্ষাধিক টাকা বিক্রি করতে পারব।
আপনারা তো মাছের উপর নির্ভনশীল, তো মাছ ধরার পেশা ছেড়ে তরমুজ চাষে ঝুকলেন কি ভাবে জানতে চাইলে তারা বলেন, নদীতে এখন আর আগের মত মাছ পাওয়া যায় না। তাই বন্ধুদের সাথে পরামর্শ করে তরমুজ চাষ শুরু করেছি। আল্লাহর রহমতে ফলন ভাল হয়েছে। এ পর্যন্ত আমরা প্রথম ধাপে ৪০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। দ্বিতীয় ধাপে কেটে জমিয়ে রাখা তরমুজের মূল্য এক লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা হবে। এছাড়া আরো দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার তরমুজ মাঠে রয়েছে বলে জানান তারা।
লোকমান আরও বলেন, এখানে তরমুজ আকারে যেমন বড় হয়, তেমনি খেতেও অনেক সুস্বাদু। পাইকাররা এসে ক্ষেত থকেই প্রতিমন ১২ হাজার টাকা দরে কিনে নিচ্ছেন। আমাদের এলাকার জমিতে একবার আমন ধান ফলানোর পরে সারা বছর পতিত অবস্থায় পড়ে থাকে। তাই পতিত এ জমি ব্যবহার করে শরণখোলায় পরিকল্পিত তরমুজ চাষের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করা সম্ভব বলে দাবী করেন তিনি।
লোকমান ও মানিকের আরেক বন্ধু মামুন বলেন, তিন জনের সমান বিনিয়োগ, তিন জনেই মাঠে সমান কাজ, তিন জনেই সমান ভাগে লাভের টাকা নিই। নিজেদের মধ্যে কোন মনমালিন্য নেই আমাদেরে।
নদী ও খালে তো লবন পানি তাহলে কিভাবে তরমুজের চাষ করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে চাষীরা বলেন, এই ক্ষেতে নদীর কোন পানি ব্যবহার করা হয়নি। বৃষ্টি পানি আটকে থাকা দুটি পুকুর থেকে এই সেচের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তরমুজ ক্ষেত দেখতে আসা মির আছাদুল হক বলেন, এই প্রথমবারের মত আমাদের এলাকায় বানিজ্যিক ভাবে তরমুজ চাষ হয়েছে। সামনের দিনে আমরাও পতিত জমিতে তরমুজের চাষ করব। আমার মতো আরো নতুন উদ্যোক্তা আগামীতে তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়েছে।
শরণখোলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আছাদুজ্জামান মিলন বলেন, তরমুজ চাষী তিন জনই খুব পরিশ্রমী। এ তরমুজ ক্ষেত দেখতে মানুষ ভিড় করছে। কেউ কেউ ক্ষেত থেকে টাটকা তরমুজ কিনছে। সব মিলিয়ে যেন একটা উৎসবের আমেজ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ওয়াসিম উদ্দিন বলেন, বলেশ্বর ও ভোলা নদীর তীরবর্তী শরণখোলা উপজেলায় তরমুজ চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এ অঞ্চলের পানিতে সহনশীল মাত্রার লবনাক্ততা আছে। যা তরমুজ চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। এছাড়া কম সময়ে, কম পরিশ্রমে অধিক লাভবান হওয়ার জন্য তরমুজ একটি ভালো অর্থকরী ফসল। তরমুজ চাষে আগ্রহী চাষীদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তাও দেয়া হবে বলে জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।