চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃশত বাধা পেরিয়ে সাফল্য ধরে রেখেছেন বাগেরহাটের অদম্য মেধাবী ইমা আক্তার। কিন্তু মেডিকেলে ভর্তি হয়েও তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণের পথে এখন সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দারিদ্র্য। বাগেরহাট সদর উপজেলার রনবিজয়পুর গ্রামের চা বিক্রেতা কওসার শেখের মেয়ে ইমা আক্তার। তিনি ২০১৭ সালে সুন্দরঘোনা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ এবং ২০১৯ সালে বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজ থেকে গোল্ডেন এ প্লাস নিয়ে এইচএসসি পাস করেন। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছেন।
ইমার পরিবার ও এলাকাবাসী জানায়, হজরত খানজাহান আলীর (রহ.) মাজার মোড়ে চা বিক্রেতা কওসার শেখ ও বাগেরহাট আদর্শ বিদ্যালয়ে আয়ার (মাস্টার রোলে) কাজ করা আমিরুন বেগম দম্পতির ছোট মেয়ে ইমা আক্তার। খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কের পাশে রণবিজয়পুর গ্রামের সড়ক বিভাগের মাত্র দেড় কাঠা জমির ওপর তাদের বসতবাড়ি। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে বড় মেয়ে ফাতেমাকে দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে দিতে বাধ্য হন তারা।
এখন অদম্য মেধাবী ছোট মেয়ে ইমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন তাদের। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণে অনেক সিঁড়ি অতিক্রম বাকি রয়েছে। এসব সিঁড়ি অতিক্রম করতে প্রধান অন্তরায় আর্থিক অসচ্ছলতা। অনেকের সহযোগিতায় এই পর্যন্ত লেখাপড়া চালিয়ে মেডিকেলে ভর্তি করতে পারলেও বইপত্র কেনাসহ মেডিকেলে পড়ার নানা ধরনের খরচ এখনো বাকি রয়েছে। স্বপ্ন পূরণে কে তাদের এত বড় আর্থিক সহযোগিতা করবে? এটাই এখন তাদের একমাত্র চিন্তা।
কওসার শেখ বলেন, সরকারি জমিতে ঘর তৈরি করে তিনি বসবাস করেন। ১২-১৩ বছর ধরে মাজার মোড়ে এই চায়ের দোকান এবং স্ত্রী একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে আয়ার কাজের টাকা দিয়ে তাদের সংসার কোনো রকমে চলে। মেয়েকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেন তিনি। ইমা আক্তার বলেন, জীবনে দারিদ্র্যতার সঙ্গে যুদ্ধ করেই এই পর্যন্ত এসেছে। অভাব আর অনটনের জীবনযুদ্ধে তার বেশ কয়েকটি বিজয় এসেছে। আর সবচেয়ে বড় বিজয় হলো মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পাওয়া। সেটি অবশ্য পূরণ হয়েছে। তার স্বপ্ন ডাক্তার হয়ে গরিবের সেবা করা। আর কত যুদ্ধ করতে হবে এমনটাই প্রশ্ন করেন ইমা।
ইমার এই মুহূর্তে সবচেয়ে প্রয়োজন বই কেনার টাকার- এমন সংবাদ শুনে তার বাড়িতে ছুটে যান বাগেরহাট পৌরসভার প্যানেল মেয়র আব্দুল বাকী তালুকদার। তিনি ইমার পরিবারের হাতে বই কেনার কিছু অর্থ তুলে দেন। কিন্তু ব্যয় বহুল মেডিকেলে পড়ার আরও অনেক খরচ বাকি রয়েছে।
আব্দুল বাকী তালুকদার বলেন, এরকম একজন মেধাবী ছাত্রী আমাদের সকলের জন্য সম্পদ। তার লেখাপড়া চালিয়ে নেয়া সমাজের বিত্তবানদের দায়িত্ব। এই পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।