দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর হলেও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে এ বন্দরের ভূমিকা অপরিসীম এবং অপার সম্ভাবনার কেন্দ্রস্থল। মোংলা বন্দরের ইনার বারে ৮.৫০ মিটার সিডি (চার্ট ডেটাম) গভীরতায় ড্রেজিং করা হলে মোংলা বন্দরের জেটিতে স্বাভাবিক জোয়ারের সহায়তায় ৯.৫০-১০ মিটারের অধিক ড্রাফটের জাহাজ নির্বিঘ্নে হ্যান্ডেল করা সম্ভব হবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে ও সর্বোচ্চ ৯.৫০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডেল করা হচ্ছে। সে বিবেচনায় পশুর চ্যানেলের ইনারবারে ড্রেজিং করা হলে মোংলা বন্দরকে চট্টগ্রাম বন্দরের সমান সক্ষমতার একটি কার্যকর বিকল্প বন্দরে পরিণত করা সম্ভব।
পদ্মাসেতু, খানজাহান আলী বিমানবন্দর, রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, খুলনা-মোংলা রেললাইন, পদ্মা সেতু সংলগ্ন ভাঙ্গা-মোংলা মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণ, রিকন্ডিশন গাড়ী আমদানি, দেশের চলমান মেগা প্রকল্পের মালামাল আমদানি, ঢাকার গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিসহ নানাবিধ সুফলে যখন মোংলা বন্দরের কর্মচাঞ্চল্য বেড়েছে, ঠিক তখনই মোংলা বন্দরের এ
উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের ষড়যন্ত্রের পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। একটি কুচক্রী মহল বন্দরের এ উন্নয়ন অগ্রযাত্রা থমকে দিতে চলমান ইনারবার ড্রেজিং প্রকল্প বাধাগ্রস্ত করতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। এ ড্রেজিং প্রকল্প বাধাগ্রস্ত হলে মোংলাবন্দরে আবারো অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা বন্দর কর্তৃপক্ষের
একটি বন্দরের প্রধান চালিকাশক্তি হলো তার চ্যানেল-নৌপথ। সেই চ্যানেলটি যদি সুরক্ষিত না থাকে তাহলে বন্দরের পণ্যবাহী বড় বড় বিদেশি জাহাজের আগমন মারাত্মকভাবে বাধা গ্রস্ত হবে।
এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বন্দরের আমদানী-রফতানিসহ জাতীয় অর্থনীতি ও আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে।
পশুর নদ সুন্দরবন বেষ্টিত হওয়ায় এবং সুন্দরবন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হওয়ায় ড্রেজিং মাটি কোন অবস্থাতেই সুন্দরবনের মধ্যে ফেলা যাবে না। বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় ড্রেজিংয়ের মাটি পশুর নদের তীরবর্তী জমিতে ফেলতে হচ্ছে। নদীর মাটি পলিমিশ্রিত হওয়ায় সেখানে ফসলের উৎপাদশীলতা আরও বাড়বে। ইনারবারড্রেজিংএরবানিয়াশান্তামৌজায়ড্রেজিংমাটিফেলারক্ষতিপূরণ নির্ধারণ কমিটির প্রতিবেদন অনুসারে ৩০০ একর জমির মধ্যে ১৮৫ একর জমি দুই ফসলি এবং ১১৫ একর জমি এক ফসলি। সেখানে তিন ফসলী কোন জমি নেই।২ বছর পর জন্য ড্রেজিং মাটি ফেলতে ব্যবহৃত হবে এবং কৃষকদের ১০ বছরের ফসলের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।২ বছরপরব্যবহার শেষেজমির মূল মালিকগণ তাদের মালিকানা ফেরত পাবেন। এ জমিতে কোনো বসতি না থাকায় কোনো পরিবার বাস্তুহারা হওয়ার আশঙ্কা নেই। উল্লেখ্য মোংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলে ড্রেজিং করে নদের তীরবর্তী স্থানে পলিমাটি মিশ্রিত বালি ফেলার কারণে সেখানে তরমুজসহ অন্যান্য বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। পশুর নদে ড্রেজিংয়ের কাজ বন্ধ হলে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হবে। এ কারণে প্রকল্পের কাজ চলমান রাখা জরুরি। পশুর নদের পশ্চিম তীরে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। অদূর ভবিষ্যতে তা বাণিজ্যিক শ্রেণীর জমি হিসেবে ব্যবহারের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। ড্রেজিং কাজ বন্ধ হলে মোংলা বন্দর তথা দক্ষিনাঞ্চলসহ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্ববহ এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। এর ফলে দক্ষিনাঞ্চল তথা সামগ্রিকভাবে দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হবে। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি কয়লা আমদানীতেও এই ড্রেজিং খু্বই গুরুত্বপূর্ণ।
ইনার বার ড্রেজিং কাজ বন্ধ হলে মোংলা বন্দর অচল হয়ে যাবে ও বন্দর কেন্দ্রিক ইপিজেড অচল হয়ে যাবে। মোংলা ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শিল্প প্রতিষ্ঠান রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র অচল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বন্দরকে কেন্দ্র করে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকা নির্বাহের উপরেও পড়বে বিরূপ প্রভাব। মোংলা-খুলনা রেল লাইন, খানজাহান আলী বিমান বন্দর ও মোংলা ইকোনোমিক জোন থেকে পাওয়া যাবেনা কোন কাঙ্খিত সুফল।