চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃযশোর-নড়াইল রোডের ঝুমঝুমপুর ময়লাখানার পাশ দিয়ে চলতে গেলে কয়েক বছর আগেও নাকে রুমাল দিতে হতো। এখন কোন দুর্গন্ধ না পেয়ে আশ্চর্য হয় পথচারিরা। আরো আশ্চর্য হয় পাহাড়সম ময়লার স্তুপ দেখতে না পেয়ে। কেউ কেউ মন্তব্য করেন ময়লার ভাগাড় সম্ভাবত সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বাস্তবে ভাগাড় ভাগাড়ই আছে, তবে বদলে গেছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।
যশোর পৌরসভার এই ময়লা ফেলার স্থানে প্রতিদিন জমা হয় ৪০ টন বর্জ্য। যন্ত্রের পরশে বর্জ্য হয়ে যাচ্ছে সার ও বায়োগ্যাস। প্রতিদিন ৫ টন সার উৎপাদন হচ্ছে এই ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট এন্ড কম্পোজ প্লান্ট থেকে।
অপরদিকে উৎপাদিত বায়োগ্যাস দুটি জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুতে রূপান্তরিত হচ্ছে। রূপান্তরিত বিদ্যুৎ দিয়েই চলছে এ প্লান্ট। ফলে এ কার্যক্রম পরিচালনা করতে অতিরিক্ত কোন বিদ্যুৎ লাগছে না। উপরন্তু সার কৃষি কাজে ব্যবহারের উপযোগী হচ্ছে।
যশোর পৌরসভার সচিব আজমল হোসেন জানান ২০১৮ সালে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ প্লান্টটি চালু হয় চলতি বছরের আগস্ট মাসে।
এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৯ একর জমির উপর এটি নির্মিত হয়েছে। প্লান্টটিতে প্রতিদিন ৪২ জন শ্রমিক কাজ করেন। যশোর শহর, উপ-শহর ইউনিয়ন, ও ক্যান্টনমেন্টের কিছু এলাকা থেকে ময়লা আবর্জনা কম্পোস্ট প্লান্টে জমা হয়। এটির প্রবেশমুখে স্থাপিত ওয়েটিং ব্রিজের উপর দিয়ে ট্রাক নেয়া হয়। এ ব্রিজ ময়লার পরিমাপ করে। ময়লা রাখা হয় সটিং প্লাটফর্মে। এ প্লাটফর্ম ট্রমেলের মাধ্যমে ময়লা বাছাই করে কেটে কম্পোস্ট বক্সে দেয়া হয়। বাছাইকৃত ময়লা আবর্জনা ডিসাইক্লিন করে শুকানোর পর নেটিং করে একটি অংশ দিয়ে সার ও আরেকটি অংশ দিয়ে বায়োগ্যাস তৈরি করা হয়। প্রতিদিন ৫ টন সার তৈরি করে গোডাউনে ও বায়োগ্যাস রাখা হচ্ছে সিলিন্ডারে।
এ প্লান্ট ব্যবহারের জন্য পৌর এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে কোন ফি গ্রহণ করা হয় না। তবে উপ-শহর ইউনিয়ন ও ক্যান্টনমেন্টের কিছু এলাকা থেকে ময়লা দেয়া বাবদ মাসিক হারে ফি নেয়া হয়। ওই টাকা দিয়ে কর্মরত শ্রমিকদের বেতন দেয়া হয় বলে জানান পৌরসভার সচিব আজমল হোসেন।
তিনি জানান, কম্পোস্ট প্লান্টে উৎপাদিত সার বাজারে বিক্রির জন্য কৃষি অধিদফতরে আবেদন করা হয়েছে। অনুমতি পাওয়ার পর সার বাজারে বিক্রি করা হবে।
পৌর মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু জানান দেশের বিভিন্ন এলাকাসহ যশোর শহরে যত্রতত্র ময়লা ফেলে পরিবেশ নোংরা করা হতো। ময়লামুক্ত শহর গড়ার লক্ষ্যে ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট এন্ড কম্পোস্ট প্লান্ট নির্মিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ প্লান্টের উদ্বোধন করেন। এ প্লান্টের বদৌলতে যশোর শহরকে দেশের প্রথম বর্জ্যমুক্ত শহর ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি জানান, দেশের কোথাও এ ধরনের প্লান্ট নেই। তবে ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশে এ ধরনের কয়েকটি প্লান্ট আছে।