যশোর সদর উপজেলা এলাকায় গেজেটভুক্ত ২৩৯ মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে ১৮৮ জনকে যাচাই বাছাইয়ের আওতায় আনা হয়েছে। আগামী ৩০ ও ৩১ জানুয়ারি দু’দিন সাক্ষী-প্রমাণসহ সদর উপজেলা মিলনায়তনে তাদের হাজির থাকতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তালিকার ৪৪ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম ভারতীয় লাল মুক্তিবার্তায় থাকায় তাদের যাচাই বাছাইয়ের বাইরে রাখা হয়েছে। এছাড়া মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য সাক্ষী-প্রমাণ অনেকটা শিথিল করা হয়েছে। তাদের যাচাই-বাছাইয়ের জন্য কমিটিও চূড়ান্ত করা হয়েছে।
যশোর জেলা প্রশাসন ও সদর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের আগ পর্যন্ত যেসব মুক্তিযোদ্ধা গেজেটভুক্ত হয়েছেন তাদের ব্যাপারে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল জামুকার পক্ষে নানা তথ্য দেয়া হয় মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে। ওই সময়ের মধ্যে তালিকাভুক্ত হওয়া অনেক মুক্তিযোদ্ধার ব্যাপারে সরাসরি নানা অভিযোগ ও অনেকের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। জামুকার চিঠি চালাচালির এক পর্যায়ে যশোর সদর উপজেলার গেজেটভুক্ত ২৩৯ জন মুক্তিযোদ্ধাকে যাচাই বাছাই তালিকায় আনা হয়। সব শেষে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে ২৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধাকে যাচাইয়ের আওতায় আনতে পত্র আসে যশোরে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের আপত্তির কারণে ২০১০ সালের আগের গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন করে যাচাই বাছাইয়ের আওতায় আনার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
২০১৭ সালের যাচাইয়ে বাদ পড়া মুক্তিযোদ্ধারা আদালতের নির্দেশে ভাতা চালুর বিষয়টি নিয়ে আরও জোরেসোরে যাচাই বাছাইয়ের দাবি তোলে জামুকা। এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করে নতুন বছরের শুরুতেই জেলা প্রশাসক ও সদর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়ে ২৩৯ জন মুক্তিযোদ্ধার কাছে এই চিঠি পৌঁছে দেয়া হয়। এ হিসেবে সর্বশেষ সদর উপজেলা এলাকার ১৮৮ জন মুক্তিযোদ্ধাকে যাচাইয়ের আওতায় আনতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে যাচাই-বাছাই কমিটি করা হয়েছে। এরমধ্যে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন মুক্তিযুদ্ধকালীন যশোর জেলা মুজিব বাহিনীর কমান্ডার আলী হোসেন মনি। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল জামুকা তথা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সবুর মোস্তফা হেলালকে ওই কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুজ্জামানকে করা হয়েছে সদস্য সচিব।
এছাড়া, যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের মনোনীত একজন মুক্তিযোদ্ধা থাকবেন। গত ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি জামুকার প্রতিনিধি হিসেবে যশোর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা রাজেক আহমেদের নাম সভাপতি হিসেবে উল্লেখ করে উপজেলায় চিঠি আসলেও তা পরিবর্তন করা হয়েছে। ২৮ জানুয়ারি তার পরিবর্তে নাম এসেছে সবুর মোস্তফা হেলালের নাম।
আগামী ৩০ জানুয়ারি ও ৩১ জানুয়ারি সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত যাচাই বাছাইয়ের কার্যক্রম চলবে। লাল মুক্তিবার্তায় নাম থাকা মুক্তিযোদ্ধারা ছাড়া বাকিদের সাক্ষী প্রমাণসহ হাজির হতে ইতিমধ্যে চিঠি দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে যশোর সদর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান জানান, যাচাই বাছাই তালিকায় প্রথমে ২৩৯ জনকে রাখা হলেও পরে ২৩৫ জনের ব্যাপারে পত্র এসেছে। এরমধ্যে ৪৪ জনের নাম লাল মুক্তিবার্তায় থাকায় তাদের বাদ রেখে ১৮৮ জন মুক্তিযোদ্ধাকে চিঠির মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার মাধ্যমেই এ কমিটি বাছাই কার্যক্রম চালাবে।