জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ও লবণাক্ততার আগ্রাসনে উপকূলে বাল্যবিবাহ বাড়ছে বলে মনে করেন নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ। তারা বলেছেন, সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর নানামূখী পদক্ষেপ সত্ত্বেও উপকূলে বাল্যবিয়ে কাঙ্খিত হারে কমছে না। কারণ সেখানে লবণাক্ততা ও পরিবশে বিপর্যয়ের কারণে মানুষ কর্মসংস্থান হারাচ্ছে। সুপেয় পানির সংকট বাড়ছে। সচেতনতার অভাব রয়েছে। ফলে অবিভাবকরা মেয়েদের স্কুলে না পাঠিয়ে শশুর বাড়িতে পাঠাতে বেশি আগ্রহী হচ্ছে। বুধবার ‘বাল্যবিবাহের শিকার উপকূলের শিশু ও করণীয়’ শীর্ষক এক অনলাইন সংলাপে এ সব কথা বলেন তারা।
বাল্যবিয়ে বন্ধে সামাজিক আন্দোলন জোরদার করার লক্ষ্যে উন্নয়ন সংস্থা ‘ফেইথ ইন একশন’, নাগরিক সংগঠন ‘সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন’ এবং পার্লামেন্টনিউজ আয়োজিত সংলাপটি সঞ্চালনা করেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র। আলোচনায় অংশ নেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প কর্মকর্তা হালিমা খানম, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, টিম এসোসিয়েটসের টিম লিডার পুলক রাহা, সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস) চেয়ারম্যান জেসমিন প্রেমা, নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক শাহনাজ সুমী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাকিলা পারভীন, স্ক্যান সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল, ফেইথ ইন একশনের নির্বাহী পরিচালক নৃপেন বৈদ্য, ইনসিডিন বাংলাদেশের কো-অর্ডিনেটর মো. রফিকুল আলম, অনির্বাণ লাইব্রেরির সভাপতি প্রধান শিক্ষক রহিমা আক্তার শম্পা, ফ্যামিলি টাইস ফর উইমেন ডেভেলপন্টের নির্বাহী পরিচালক খুজিস্থা বেগম জোনাকি, মহিলা পরিষদের জোৎস্না দত্ত, নাগরিক উদ্যোগের সাকিল আহমেদ, ফেইথ ইন একশনের জ্যাকব টিটো, পাইকগাছা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি মো. আব্দুল আজিজ, কিশোর-কিশোরী ক্লাবের রিংকু রানী মণ্ডল, সচেতন সংস্থার রিয়াদ হোসেন।
সংলাপে জানানো হয়, ‘ফেইথ ইন একশন’ নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু অধিকার ও সুরক্ষায় ২০১৯ সালে খুলনা জেলার কয়রা উপজেলায় কাজ শুরু করে। যা পরবর্তীতে পরিবর্তন হয়ে মুক্তির আহ্বান প্রকল্প নামে কয়রা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ২৩টি গ্রামে পরিচালিত হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় বাল্যবিবাহ হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রম হ্রাসসহ সচেতনমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
এই কার্যক্রম পরিচালনাকালে দেখা গেছে, ওই সকল গ্রামের গত জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আত্ম-সহায়ক নারী দল, গুচ্ছ পর্যায়ে সংগঠন, শিশু সুরক্ষা কমিটি এবং শিশু ও কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্যদের মাধ্যমে ২২ জন শিশুর বাল্যবিয়ে বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরপরও ওই এলাকায় ৬৭টি বাল্যবিয়ে হয়েছে। এরমধ্যে ৬৪ জন মেয়ে ও ৩ জন ছেলে শিশু রয়েছে।
বাল্যবিয়ের জন্য অর্থাভাব ও সচেতনতার অভাবকে দায়ি করে সংলাপে বলা হয়, পরিবারের লোকজন শিশুদেরকে লুকিয়ে, এমনকি আত্মীয়বাড়ি নিয়ে গিয়ে বিয়ের আয়োজন করে। এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রভাবশালী ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবও বাল বিয়ে বন্ধের পথে বাধা হিসেবে কাজ করছে। বাল্যবিয়ে বন্ধে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুকি মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, লাবণাক্ততার আগ্রাসন রোধ, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আইনের যথাযথযথ প্রয়োগ নিশ্চিত এবং সচেতনতা বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয় সংলাপে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, পরিবারের বোঝা কমাতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেয়েদের বাল্যবিয়ে দিয়ে অবিভাবকরা সন্তানের জীবনকে বিপদের মধ্যে ফেলছে। তাই অবিভাকদের আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। একইসঙ্গে মেয়েদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
সরকারের প্রকল্প কর্মকর্তা হালিমা খানম বলেন, প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসকেরা বাল্যবিয়ে নজরদারি করছেন। একেবারে ইউনিয়ন থেকে উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে এই নজরদারি চলছে। সরকারের হেল্পলাইন নম্বরে (১০৯) আসা কলের সংখ্যা বাড়লেও বাল্যবিয়ে বেড়েছে এমন তথ্য নেই। তিনি বাল্যবিষয়ে বন্ধে সরকারের কার্যক্রমে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।