খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার কাচনাপাড়া গ্রামের অধিকাংশ পরিবার সবজি হিসেবে লাউ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠেছে। এই গ্রামের কৃষকেরা আশা করছেন, এবার এই গ্রাম থেকে তাঁরা প্রায় ১০ লাখ টাকার লাউ বিক্রি করতে পারবেন।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সময় উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়নের কাচনাপাড়া গ্রামে অভাব ছিল। এখন অভাব নেই। নেই কষ্ট। সেই অভাব দূর হয়েছে। সবজি চাষ করে তাঁরা আয় করছেন টাকা। প্রতিটি পরিবারে এসেছে সচ্ছলতা। সেই সঙ্গে পাল্টে গেছে পুরো গ্রামের দৃশ্যপট। চারদিকে এখন সবজির ক্ষেত।
ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, মাচার ওপরে ছেঁয়ে আছে সবুজের সমারোহ। আর নিচে ঝুলছে লাউ। ছোট-বড় ও মাঝারি আকারের হাজার হাজার লাউ। দেখলে, চোখ জুড়িয়ে আসে। আর এই লাউয়ের আবাদ করে লাখপতি বনে গেছেন কাচনাপাড়ার এক উদ্যোমী নারী। মাত্র দেড় বিঘায় জমিতে ওই নারী কৃষক লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন। যদিও এলাকাবাসি বলছেন, লাখ টাকা ছাড়িয়ে লাউ বিক্রি হবে এই ক্ষেত থেকে।
কাচনাপাড়া গ্রামে লাউ চাষে স্বাবলম্বী নারীর নাম পারুল বেগম। ৩০ বছর আগে বিয়ে হয় তাঁর। স্বামী ফার্নিচারের কাজ করতেন। পারুল জানালেন, স্বামী থাকলেও সংসারের দিকে নজর ছিল না তার। মাঝে মাঝে নিরুদ্দেশও হতেন। সেই থেকে খাল-বিলে কাজ করে সংসার চালাতে হয় পারুলের। এরই মধ্যে সংসার বড় হয়, ঘরে আসে এক মেয়ে আর এক ছেলে। তারা বড় হতে থাকে। সঙ্গে চিন্তা বাড়তে থাকে পারুল বেগমের। মেয়েকে এইচএসসি পর্যন্ত পড়ানোর পর বিয়ে দিয়েছেন। আর ছেলে এবং মাকে নিয়ে বর্তমান সংসার পারুল বেগমের।
পারুল বললেন, ভাগ্যবদল করতে আট বছর আগে নিজেই শুরু করেন কৃষি কাজ। নিজের জমিনা থাকায় রাস্তার পাশের পতিত জমি, অন্যের জমি বর্গা নিয়ে সেখানে ফসল ফলান তিনি। গত বছর দেড় বিঘাজমি ১৫ হাজার টাকায় বর্গা নেন। সেখানেই লাউ চাষ করে লাখ টাকা আয় করেছেন। জমি প্রস্তুত, সার, সেচ, কীটনাশক, মাচা তৈরি ও পরিচর্যাসহ অন্যখাতে তার সব মিলে খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকার মত। বাজার থেকে হাইব্রিড জাতের বীজ কিনে চারা উৎপাদন করেন তিনি। সেই চারা এখন বড় হয়ে দিচ্ছে ফলন।
চাষি পারুল বেগম জানান, আমি অন্য কাজ করতে পারতাম। কিন্তু কৃষি কাজ আমার ভাল লাগে। তাই এই দিকে ঝুঁকে গেলাম। এখন ভালই আছি। এলাকার অনেকেই আমার বাগান দেখে নতুন করে লাউ চাষাবাদের স্বপ্ন দেখছে। জীবনে অনেক দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে এখানে এসে দাড়িয়েছি। এখন আর কোন কষ্টই আমার কাছে কষ্ট মনে হয় না। অনেক স্বাধ করেই আমি লাউ চাষাবাদ করেছি। আমি মনে করি আমি সফল।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. আতাবুর রহমান জানান, পারুল বেগম একজন সংগ্রামী নারী। কৃষি কাজে তার কষ্ট দূর হয়েছে। এখন তার লাউ ক্ষেত দেখতে লোক আসে। যে দেখে তারই মন ভরে যায়। এ এলাকায় পারুল বেগম নারীদের জন্য একজন আদর্শ।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোছাদ্দেক হোসেন খুলনা গেজেটকে বলেন, ‘একজন উদ্যোমী নারী চাষি পারুল বেগম। তিনি এ এলাকার নারীদের অহংকার। জীবন যুদ্ধে তিনি সফল। তিনি লাউ ছাড়াও বেগুন, টমেটোসহ অন্য সবজির আবাদ করেন। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে তাকে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারসহ যাবতীয় কৃষি পরামর্শ দিয়ে আসছি। তার লাউ ক্ষেতে না গেলে বিশ্বাস করা যায় না। কি পরিমাণে লাউ হয়েছে সেখানে। প্রতিটি গিটে গিটে লাউ। তাকে দেখে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।’