সরকার ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দিলেও বাড়তি দামেই বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। শনিবার সকালে ডুমুরিয়া একাধিক কাঁচা বাজারে এমন চিত্র দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারের নির্ধারণ করা দামে আমরা কিনেও আনতে পারিনি, তাহলে ওই দামে বিক্রি করবো কী করে।
ডুমুরিয়া কাঁচা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, যথারীতি আলু বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা করে, যেখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা করে। এছাড়াও ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা করে, যেখানে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। এছাড়াও ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি হালি ৫৫ টাকা করে, যেখানে সরকারি নির্ধারিত দাম ৪৮ টাকা।
আলুর দাম প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী আনন্দ কুমার বলেন, আলু বর্তমানে ৪২ থেকে ৪৫ টাকা পাইকারি দরেই কিনে আনতে হয়েছে। ৪৪-৪৫ টাকার নিচে কিনতে পারাই কঠিন, তাহলে সরকার নির্ধারিত ৩৫ টাকা করে বিক্রি করবো কী করে? আমরা কি লস দিয়ে বিক্রি করবো? আমরা যদি কমে কিনতে পারি তাহলে অবশ্যই কমে বিক্রি করবো।
তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত দামের তালিকা এখনও আমাদের কাছে আসেনি। আমরা যদি ওই দামে কিনতে পারি তাহলে তো বেশি দামি বিক্রি করার কোনো মানে হয় না। দাম কম থাকলে বরং বিক্রি আরও বেশি হয়। টিপনা নতুন রাস্তা বাজারের ক্রেতা মোশারফ হোসেন ডিম কিনতে দাম জানতে চাইলে ব্যবসায়ী মোনতাজ শেখ জানান, এক হালি ৫০ টাকা সরকার তো দর বাঁইধা দিয়েছে পিসের দাম ১২ টাকা। আমরা ১২ টাকায় কিনিচি। এক পিস নিলে দাম ১৩ টাকা। কোনটা নিবেন কন, হালি না পিস।
খর্নিয়া কাঁচা বাজারের মুদি পণ্য বিক্রেতা আব্দুল মালেক বলেন, সরকারের হিসাব আমাদের জানা নাই। আমরা বেশি দামে কিনলে বেশি দামে বিক্রি করি, কমে কিনলে কমে বেচি। হিরামন নামের দোকানদার বলেন, কাল মাত্র দাম কমিয়েছে শুনেছি। একটু সময় দেন। এগুলো মাল (পণ্য) শেষ হোক। আমরা যখন পাইকারিতে কম দামে কিনতে পারবো, তখন অটোমেটিক খুচরায় কমে যাবে। সরকারকে বলেন, পাইকারি বাজার তদারকি করতে।
সরকার নির্ধারিত দাম প্রসঙ্গে আপনারা অবগত কি না? জানতে চাইলে আঠারো মাইল বাজারের ব্যবসায়ী সেলিম খান বলেন, বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই অবগত। বিষয় হলো সরকার নির্ধারিত এই দাম আমাদের কাছে আসতে সময় লাগবে অন্তত এক সপ্তাহ। সরকার নির্ধারিত যে পেঁয়াজের দাম, সে দামে আমরা আজকে কিনেও আনতে পারিনি। তাহলে কীভাবে সেই দামে বিক্রি করবো?
তিনি বলেন, আলুর যে সিন্ডিকেট, ভোক্তা পর্যায়ে আসার আগেই দামের পাঁচটি স্তর রয়েছে। ৩০ টাকার আলু যদি এই পাঁচটি স্তরে ২ টাকা করেও লাভ করা হয়, তারপরও ১০ টাকা বেশি দামে আমাদের বিক্রি করতে হবে।’ কোনো কিছুর দাম বাড়লে খুচরা বাজারে সঙ্গে সঙ্গেই দাম বেড়ে যায়, দাম কমার ক্ষেত্রে তাহলে কেন ধীরগতি?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এই বিক্রেতা বলেন, আমাদের খুচরা বাজারে যেকোনো পণ্যের দাম আড়তের সঙ্গে মিলিয়ে বিক্রি করতে হয়। আড়ৎ যদি রাতারাতি দাম কমিয়ে দেয়, তাহলে আমরাও কমে বিক্রি করতে পারি। আবার আরও যদি রাতারাতি দাম বাড়িয়ে দেয়, তাহলে আমাদেরও বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে। দামটা আসলে সরাসরি আড়তের সঙ্গে নির্ধারিত।
ডিমের পাইকারি বাজারে ভিন্ন ভিন্ন দাম দেখা গেছে। ভ্যানে করে দোকানে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ১২ টাকা পিস হিসাবে। কিন্তু মাগুরখালী বাজারে ১৩ প্রতি পিস ১২ টাকা ২০ পয়সা হিসাবে বিক্রি করছে।
মির্জাপুর ছোট একটি বাজারে হরি নামের এক ডিম বিক্রেতা বলেন, সরকার ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করেছে, আমিও ১২ টাকা বিক্রি করবো। তবে ১০০ পিস নিতে হবে একসঙ্গে। কারণ পাইকারি ডিম কিনেছি ১২ টাকা দরে। এরপর ভাড়া ও অন্যান্য খরচ আছে। আমিতো আর লোকসানে বেচবো না। লোকসানের টাকা কি সরকার আমাকে দেবে?
ডিম বিক্রেতা মোস্তফা বলেন, ডিম প্রতি ডজন বিক্রি করছি ১৫৫ টাকা করে, হালিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা করে। সরকারের নতুন দাম নির্ধারণ বিষয়ে কিছুই জানি না। আমরা যদি কম দামে কিনে আনতে পারি, তাহলে কম দামে বিক্রি করতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে খুচরা বাজারে তদারকি করার আগে পাইকারি বাজার এবং আড়ৎগুলোতে কী দামে বিক্রি হচ্ছে, সেটি আপনাদের দেখা উচিত।
তিনি আরও বলেন, শুনেছি সরকার আলু পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। বাজারে এসে তার কোনো প্রতিফলন দেখছি না। যেখানে আলু বিক্রি করতে বলা হয়েছে ৩৫ টাকা করে, সেখানে আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি। এখনও দামের কতটুকু পার্থক্য ভাবাই যায় না। আজকে যদি দাম না কমিয়ে উল্টো বাড়ানো হতো, তাহলে ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়তি দামে বিক্রি শুরু হয়ে যেত। বর্তমানে ব্যবসায়ীদের চরিত্রটাই এমন হয়ে গেছে।
এই ডিম বিক্রেতা বলেন, বাজারে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কেউ কারও নির্দেশনা মানে না। যে যেভাবে পারছে দাম বাড়াচ্ছে, আর বিক্রি করছে। মানুষ তাদের কাছে অনেকটাই জিম্মি।