সাংবাদিকের কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়ে দামি। সমাজের অন্যায় অনাচার তুলে ধরাই সাংবাদিকদের কাজ। এ পেশার কদর থাকায় অনেকে আজ সাংবাদিকতা বেছে নিতে শুরু করেছেন। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেকে আজ কথিত সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সমাজে মহান পেশাকে কলুষিত করে তুলেছে একটি চক্র। নিউজ লিখতে পারা তো দুরের কথা। সংবাদ কি সেটাই জানে না অধিকাংশরাই। কোন একটি সংবাদপত্রের ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের পরিচয়পত্র জোগাড় করে বিরাট মাপের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাঁদা আদায়, সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে হয়রানি সহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন অনেকে। আর এই অপসাংবাদিকতা রোধ করতে এবং সাংবাদিকতা পেশার সুনাম ধরে রাখতে গত ১ অক্টোবর মুলধারার সাংবাদিকদের অংশগ্রহনে গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেবহাটা প্রেসক্লাবের নির্বাচন সম্পন্ন হয়। এতে সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, পুলিশ, সুশীলসমাজের প্রতিনিধি সহ সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতিতে স্বচ্ছ, সুষ্ঠ ও সুন্দর নির্বাচন সম্পন্ন হয়। নির্বাচনে অংশগ্রনকারীরা এই ফলাফল মেনে নিয়ে নির্বাচিত কমিটির নেতৃবৃন্দদের সমর্থন করেন। পরবর্তীতে গঠনতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্বভার গ্রহন করেন নির্বাচিত সাংবাদিক নেতৃবৃন্দরা। এরপর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রায় মাস জুড়ে একের পর তাদের প্রতিনিধিরা প্রেসক্লাবে এসে নবনির্বাচিতদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। দায়িত্বভার গ্রহন করে নির্বাচিত কমিটির নেতৃবৃন্দরা সাংবাদিকদের মান উন্নয়নে যখন কাজ শুরু করলেন ঠিক সেই সময় বিএনপি-জামায়েতের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কথিত সাংবাদিক নামধারী কিছু ব্যক্তি দেবহাটা প্রেসক্লাবকে বিতর্কিত একই নামে একটি ভূইফোঁড় কমিটি ঘোষনা দিয়েছে। যা সম্পূর্ণ ঔধত্যপূর্ণ, সাংঘর্ষিক ও প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্রের পরিপন্থি।
কথিত ঘোষনাকৃত কমিটির নেতৃত্বদানকারীদের অনেকেই সাংবাদিক নন। অনেকে নিজের অপকর্ম ঢাকতে সংবাদপত্রের পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে সাংবাদিক বনে গেছেন। এই কমিটিতে যাদের নাম ব্যবহার করা হয়েছে তাদের কেউ হকার, কেউ এনজিও কর্মী, ঠিকাদার, কেউ হাতুড়ে ডাক্তার, কেউ মৎস্য সেডের কর্মচারী, কেউ টাইলসের দোকানদার, কেউ আবার কাপড়ের দোকানের কর্মচারী, কেউবা কাঁকড়া ক্রেতা। বর্তমানে ভিন্ন পেশার মানুষদের ভাড়া করে সাংবাদিকতায় এনে বিতর্কিত প্রেসক্লাবের ঘোষনা দিয়ে প্রশাসন সহ সমাজের মানুষকে বিভ্রান্ত করছে ঐ কথিত ব্যক্তিরা। এই কথিত কমিটির সভাপতি যে রশিদুল আলম রশিদ, তিনি একজন হকার। বছরের পর বছর পত্রিকা বিলি করে জোটে তার দু’বেলার রুটিরুজি। মূলত সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোর সহ বিভিন্ন অঞ্চলের পত্রিকা বিলি করে সমুদয় টাকা পকেটস্থ করে এই রশিদ। এমন কোন পত্রিকা অফিস নেই যারা এই রশিদের কাছে পত্রিকা বাবদ হাজার হাজার টাকা পাবেন না এবং রশিদ ঐসব পত্রিকার মালিক পক্ষের সাথে প্রতরণা করেননি এমন নজির খুব কমই আছে। বিতর্কিত ঐ কমিটির স্বঘোষিত সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক মুকুল কিছু দিন আগেও হকার ছিলেন। তিনি দেবহাটার মোস্ট ওয়ান্টেড সস্বস্ত্র ও উগ্রবাদী জামায়াত নেতা, কয়েক ডজন হত্যা ও নাশকতা মামলার আসামী জিয়াউর রহমান ওরফে আফগান জিয়ার দেহরক্ষী সরফরাজের অন্যতম সহযোগী। মাদকসেবনে যখন তার জীবন পুরোপুরি অন্ধকার হয়ে যায় তখন কুলিয়ার এক সাংবাদিকের পত্রিকা বিলি করে সেই টাকায় তার জীবনে আলো ফেরে। বনে যান কুলিয়া আঞ্চলিক প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। সে সাতক্ষীরার একটি পত্রিকার কুলিয়া প্রতিনিধি। কোনো নিউজ লেখার যোগ্যতা না থাকলেও সাংবাদিকদের বিভিন্ন কমিটিতে রয়েছে তার পদের লোভ। সে কারণে কুলিয়া আঞ্চলিক প্রেসক্লাবের ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রতিনিধি ও নামধারী সাংবাদিকদের নিয়ে বিতর্কিত কমিটি ঘোষনা দিয়ে মুলধারার সাংবাদিকদের পেশার মানক্ষুন্ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া নেতৃত্বদানকারী আরও একজন সাবেক ইউপি সদস্য যিনি দেবহাটা প্রেসক্লাবের নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে ৪ ভোট পেয়ে পরাজিত হন। তার হাত দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য সংগঠনের জন্ম হয়েছে। এমনকি টিউওয়েল, প্রতিবন্ধী স্কুলে চাকুরী দেওয়ার নামে লাখ লাখ টাকা আত্নসাৎ, সাংবাদিক বানানোর জন্য মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে দীর্ঘদিন ধরে সে এলাকায় না ফিরে কখনো পারুলিয়ায় কখনো নলতায় আত্নগোপন করে থাকেন। এদিকে, এই কথিত কমিটির অনেকেই জানেন না তাদের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়েও ইতোমধ্যে প্রতিবাদ জানিয়েছেন কেউ কেউ।
এসব নিয়ে দেবহাটা প্রেসক্লাবের নির্বাচিত সভাপতি আব্দুর লিটু জানান, একটি মহল দেবহাটা প্রেসক্লাবের উন্নয়ন সহ্য না করতে পেরে এবং সাংবাদিকতার মান ক্ষুন্ন করতে নামসর্বস্ব একটি কমিটি ঘোষনা দিয়েছেন। যার মধ্যে মুল প্রেসক্লাবের ভোটে পরাজিত সহ ২জন সংগঠন বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়েছেন। আমরা কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিং এর মাধ্যমে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করব। কথিত কমিটি প্রত্যাহার করা না হলে দেবহাটা প্রেসক্লাবের সংবিধান ও বর্তমান নির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।