চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃসাতক্ষীরায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত দ্বীপ আজাদ ও সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে থানায় খুন, ছিনতাই ও অস্ত্রবাজির নানা অভিযোগ রয়েছে বলে দাবি করেছেন সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘তারা এলাকায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ হিসাবে পরিচিত ছিল। তারা একজন প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় থাকার কারণে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেত না।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নিহত দ্বীপ মুন্সীপাড়ার সোহাগ হত্যা মামলার আসামি। কালীগঞ্জে বিকাশের ২৬ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় মামলা আছে। এছাড়া দুই জনের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির বিভিন্ন অভিযোগ ছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, দ্বীপ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় অস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মীর মোস্তাক আহমেদ রবির পক্ষে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। দ্বীপ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমানের ডান হাত হিসাবে পরিচিত ছিল। সে সব সময় পিস্তল নিয়ে ঘুরতো। সাদিক ও মীর মোস্তাক আহমেদ রবির লোক হওয়ায় কেউ কিছু বলার সাহস করত না।
এই প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন, ‘বন্দুকযুদ্ধে নিহত দ্বীপ আজাদ ও সাইফুল ইসলাম ছাত্রলীগের কর্মী নয়, তারা চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তারা কখনো ছাত্রলীগের কোনো পদে ছিল না। তারা বিবাহিত। তবে আমার কাছে অনেকে অভিযোগ করেছেন, তারা সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে বেড়াত।’
‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত এই দুই জন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিকের দেহরক্ষী কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন, ‘তারা সাদিকের সঙ্গে ঘুরত, কিন্তু তার দেহরক্ষী কিনা বলতে পারব না। কে কার দেহরক্ষী রাখবে, সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কারও কোনো কু-কর্মের দায়ভার জেলা ছাত্রলীগ নেবে না।
নিহত দ্বীপ আজাদের বাবা মইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ছেলে বিবাহিত নয়। তার বয়স কম। সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় ঈদগাহের পাশে আমার ডেকোরেটরের ব্যবসা আছে, সে সেখানে বসত। দোকানটি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিকুর রহমানের বাড়ির সামনে হওয়ায় সেও অনেক সময় এখানে এসে বসত। আমার ছেলে সন্ত্রাসী কিনা, সেটা আমার জানা নেই। আমার ছেলের মৃত্যুর ব্যাপারে কাউকে দোষারোপ করতে চাচ্ছি না।তিনি আরও বলেন, ‘বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সাদা পোশাকধারী কিছু লোক আমার দ্বীপকে তুলে নিয়ে যায়। পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর কোনো সন্ধান পাইনি। একজন ফোন করে বলে বাইপাস সড়কে আপনার ছেলের লাশ পড়ে আছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি বলেন, ‘তারা সন্ত্রাসী ছিল না। সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনসুর আহমেদ বলেন, ‘বন্দুকযুদ্ধে নিহত দুই জন ছাত্রলীগের কর্মী ছিল কিনা, সেটা আমার জানা নেই। এটা ছাত্রলীগ ভালো বলতে পারবে। তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত কিনা, সেটাও ভালো জানি না। তবে তাদের দুই জনকে (সাইফুল ইসলাম ও দ্বীপ আজাদ) ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিকের সঙ্গে ঘুরতে দেখেছি। যে কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এ দিকে, শনিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে শহরের মুনজিতপুর এলাকায় দ্বীপ আজাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। তার লাশ নিতে অপেক্ষা করছে পরিবার।
পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘দ্বীপ আজাদ ও সাইফুল ইসলাম চিহ্নিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। শনিবার (৩০ অক্টোবর) শ্যামনগর বিকাশের শাখা ব্যবস্থাপকসহ তিন জন সাতক্ষীরার একটি ব্যাংক থেকে ২৬ লাখ টাকা নিয়ে শ্যামনগর ফিরছিলেন। তারা কালীগঞ্জে পৌঁছালে তিনজনের একটি মোটরসাইকেল তাদের গতিরোধ করে ফাঁকা গুলি ছুড়ে টাকা ছিনতাই করে নেয়। এ ব্যাপারে বিকাশের শাখা ব্যবস্থাপক আবু বকর সিদ্দিক বাদী হয়ে ১ নভেম্বর অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। তদন্তের প্রয়োজনে সাইফুল ইসলাম ও দ্বীপ আজাদকে আটক করি। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে সাতক্ষীরা শহরের বাইপাস এলাকায় গেলে তাদের সহযোগীরা আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পরে আমরা পাল্টা গুলি ছুড়ি। তাদের সহযোগীদের বন্দুকের গুলিতে তারা আহত হয়। হাসপাতাল নেওয়ার পথে সাইফুল ও দ্বীপ আজাদ মারা যায়। ঘটনাস্থল থেকে দুটি চাকু, চার রাউন্ড গুলি, দুটি পিস্তল ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।’