নির্বাচন কমিশন গঠন কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যারা সার্চ করবে তারাই নিরপেক্ষ না। আজ শুক্রবার জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। সময় নেই, সে জন্য তারা অতি দ্রুত—আগে বললেন, আইন করার সময় নেই, দেখা গেল ৭ দিনের মধ্যে একটা আইন করে ফেললো। বস্তুত এটা নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন না। সার্চ কমিটি গঠন করা হয়, এই সার্চ কমিটি কাদের নিয়ে করছেন? কাদের নাম দিয়েছেন? যিনি কমিটির প্রধান, তিনি বিচারক। তার পিতা ছিলেন ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এমপি। তিনি নিজে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তার ছোট ভাই বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাহলে নিরপেক্ষ হলো কে? ছহুল আহমেদ, তিনিও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। যারা সার্চ করবে তারাই তো নিরপেক্ষ না।
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, আমরা অত্যন্ত কঠিন সময়-দুঃসময় পার করছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর হয়েছে এবং সেই ৫০ বছর পালন করা হচ্ছে সরকারিভাবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী তারা পালন করছে না, তারা মূলত তাদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী পালন করছে। এই দুইটার মধ্যে একটা যোগসূত্র স্থাপন করে যে কথাটা তারা প্রতিষ্ঠা করতে চায়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা মানেই হচ্ছে একজন ব্যক্তি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সমস্ত কৃতিত্ব একটি দলের আর কারো নয়। যারা যুদ্ধ করলেন, তারা প্রাণ দিলেন, যারা ৯ মাস পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অত্যাচারে অত্যাচারিত হলেন, আমার লাখ লাখ মা-বোন সম্ভ্রম দিলেন—এদের ত্যাগ কিছু না।
সব কিছু হচ্ছে তাদের। তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। এ দেশটাই যেন তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি, এটা তারা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। খেয়াল করে দেখবেন, যে সরকারি উদযাপন চলছে সেখানে একবারও কি ওসমানী সাহেবের নাম উচ্চারণ করা হয়? হয় না। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাজউদ্দিন সাহেব প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তার নাম উচ্চারণ করা হয় না। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী; এদের নাম একবারও তাদের মুখে আসে না। আমরা এটা আগেই টের পেয়েছি, আমরা যারা মুক্তিযদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম, পরবর্তীকালে যখন দেশ স্বাধীন হলো, তখন তারা স্লোগান দিতে শুরু করল ‘এক নেতা এক দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। একটা মতবাদ চালু করল মুজিববাদ। যেটা এ দেশের মানুষ গ্রহণ করেনি। তারা এটাকে চাপিয়ে দিতে গিয়ে অংসংখ্য তরুণ-কিশোরকে হত্যা করেছে, বলেন তিনি।
ফখরুল আরও বলেন, ৩০ হাজার মারা গেছে। তখন থেকে শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া, এই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। মানুষ মুক্তিযুদ্ধে চেয়েছিল একটি স্বাধীন বাংলাদেশ। একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। যেখানে আমরা নিজেদের কথা বলতে পারবো। নিজেদের ভোট নিজেরা দিতে পারবো। আমাদের অবস্থার পরিবতর্ন করতে পারবো, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি করতে পারবো। সেই জায়গা থেকে তারা সম্পূর্ণ সরে গিয়ে তাদের-শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতিষ্ঠা করার জন্য সবাইকে লুট করতে শুরু করল। তখন যখন কথা হতো লোকে বলতো, আওয়ামী লীগকে দেখে মনে হয় যেন ‘বর্গি’ এসেছে। এক সময় বার্মা থেকে বর্গি আসতো। আজকে আবার সেই বর্গি সব কিছু তছনছ করে দিচ্ছে। আজ বাংলাদেশ শ্মশানে পরিণত হয়েছে। ১৯৭১ সালের আগে আওয়ামী লীগের স্লোগান ছিল ‘বাংলাদেশ শ্মশান কেন’। আজ সেই প্রশ্নের জবাব আমরা চাই।
শরিক দলগুলো উদ্দেশে তিনি বলেন, এই অবস্থা থেকে যদি বেরুতে হয়, এই অবস্থা থেকে যদি আমাদের মুক্তিযুদ্ধে স্বপ্ন যদি বাস্তবায়িত করতে হয়, ১৮ কোটি মানুষকে যদি সত্যিকার অর্থে মুক্তি দিতে হয়, তাহলে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে, ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।
ফখরুল আরও বলেন, পত্র-পত্রিকা খুললেই দেখবেন দুর্নীতি-দুর্নীতি-দুর্নীতি। এই কথা যারা বলবে তাদের চরম বিপদ নেমে আসে। দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন উপপরিচালক শরীফুজ্জামান, তার অপরাধ হচ্ছে সে বহু দুর্নীতি উদঘাটন করেছে এবং যা হয় তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। যেটা সম্পূর্ণ বেআইনি।
আইনমন্ত্রী এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রীর শিল্প উপদেষ্টার টেলিফোন আলাপ ফাঁস হয়েছে। আইনমন্ত্রী স্বীকার করেছেন। তিনি বলছেন, এটা একটা ইনোসেন্ট কনভারসেশন। নির্দোষ ফোন আলাপে কী কী আছে দেখা হোক। সেখানে বলা হচ্ছে এই ফাইলটা ওখান থেকে আনতে হবে। এটাতে অমুকে জড়িত এবং নাম উচ্চারণ করে বলেছে, উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম উচ্চারণ করা হয়েছে। দুজন বিচারকের নাম উচ্চারণ করা হয়েছে। স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন তদন্ত হবে কারা এটা ফাঁস করেছে। সেটা করেন, সেই সঙ্গে ফোন আলাপের বিষয়বস্তু কী আছে, সেটার ওপরে তদন্ত করেন। আর আগে যেসব ফোন আলাপ ফাঁস হয়েছে, সেগুলো তদন্ত করেন কারা ফাঁস করেছে, দাবি জানান ফখরুল।