সালাত এমন একটি ইবাদত যার মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য গ্রহণ করা সম্ভব হয়। এ ইবাদত, আল্লাহর সঙ্গে কথা বলার অনন্য একটি মাধ্যম। মুমিন জীবনের অন্যতম একটি ইবাদত হলো সালাত। ইসলামের প্রথম স্তম্ভ সালাত এবং কিয়ামতের দিন প্রথম বিচার ফয়সালা হবে সালাতের মাধ্যমে।
রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন প্রথম নামাজের হিসাব হবে’ (তিরমিজি)। দৈনন্দিন জীবনে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে বিঘ্নতা, অলসতা ও নানা ধরনের চিন্তার সম্মুখীন হতে হয়। এর প্রধান কারণ হলো সালাতে একনিষ্ঠতা, মনোযোগ না থাকা। একনিষ্ঠ ছাড়া সালাত কখনো আল্লাহ কবুল করবেন না।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা একনিষ্ঠতার সঙ্গে আমার ইবাদত কর’ (সূরা বাইয়্যিনা-৫)। সালাতে পূর্ণাঙ্গ মনোযোগ সাধনে পাঁচটি কৌশল রয়েছে। প্রথম কৌশল হলো, অন্তরের মধ্যে এ অনুভব করা এটা শেষ নামাজ। মৃত্যু এমন একটি বিষয় যা কখন আসে বলা যায় না।
দুনিয়া এখন গ্লোবাল ভিলেজের মাধ্যমে হাতের মুঠোয়, কিন্তু মৃত্যু এর বাইরের একটি অজানা, অধরা বিষয়। সালাতে যখন দাঁড়াবে তখন এটা অনুভব করতে হবে এটাই বিদায়ী নামাজ। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যখন তুমি সালাতে দাঁড়াও তখন তুমি বিদায়ী সালাত পড়’ (মুসনাদে আহমদ)। হতে পারে এটি জীবনের শেষ নামাজ।
সালাতে মনোযোগ বৃদ্ধির দ্বিতীয় কৌশল হলো এই অনুভব করা সালাত হলো আল্লাহর সঙ্গে বান্দার কথোপকথনের মাধ্যম। যদিও সেটা আমরা কানে শুনি না, তবুও এ মনোভাব ধারণ করতে হবে অন্তর দ্বারা আমরা কথা বলছি। বান্দা যখন বলে, সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি এ বিশ্বজগতের মালিক।
তখন আল্লাহ বলেন, বান্দা আমার প্রশংসা আদায় করেছে। এভাবে প্রতিটি কথার উত্তর দিয়ে থাকেন। এ অনুভবটা অন্তরের মধ্যে লালন করতে পারলে নামাজে মনোযোগ বৃদ্ধি হবে। সালাতে মনোযোগ বৃদ্ধির তৃতীয় কৌশল হলো ধীরস্থিরভাবে সালাত আদায় করা। সালাত মুমিন জীবনে সবরের (ধৈর্য) শিক্ষা দেয়। নম্র, ভদ্র হয়ে বিনয়ের সঙ্গে আদায় করতে হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মুমিনগণ তাদের সালাতে বিনয় অবলম্বন করে’ (সূরা মুমিনুন-২)।
যত্নসহকারে সালাত আদায় না করলে সালাতে মনোযোগ সাধন হবে না। কেরাত, রুকু ও সেজদায় ধীরস্থিরতা অবলম্বন করতে হবে। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘লোকদের মধ্যে সবচেয়ে বড় চোর ওই ব্যক্তি যে, ধীরস্থিরভাবে নামাজ পড়ে না ও রুকু-সেজদায় দেরি করে না’ (তাবরানি)।
তাসবিহ্ তাহলিলগুলো অর্থসহ জানার মাধ্যমে ধীরস্থিরভাবে সালাত আদায় করতে হবে। যার ফলে মনোযোগ অন্যদিকে ঝুঁকে পড়ার সুযোগ থাকবে না। সালাতে মনোযোগ বৃদ্ধির চতুর্থ কৌশল হলো এ অনুভব করা, আমি আল্লাহর সঙ্গে দেখা করছি।
আল্লাহতায়ালা সার্বক্ষণিক আমাদের প্রতি দৃষ্টি রাখেন, কিন্তু দুনিয়ার কোনো চর্মচক্ষু দ্বারা তাকে প্রত্যক্ষ করা সম্ভব নয়। সালাতের ক্ষেত্রে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এমনভাবে যেন তাকে তুমি দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও তবে তিনি যেন তোমাকে দেখছেন’ (বুখারি, মুসলিম)।
আল্লাহর সামনে যখন মাথা নত করতে হয় তখন এই ভয় করতে হবে তিনি আমাকে দেখতে পাচ্ছেন। পৃথিবীর সব চোখ ফাঁকি দেওয়া যায় কিন্তু আল্লাহর চোখ কখনো ফাঁকি দেওয়া সম্ভব নয়।
বান্দা যখন সেজদা দেয় তখন আল্লাহর কুদরতি পায়ের ওপরে দেয়। সুতরাং এই ক্ষেত্রে খুবই সজাগ থাকতে হবে। এই অনুভব লালন করতে পারলে ভয় বৃদ্ধি পাবে ও পূর্ণাঙ্গ মনোযোগ সাধন হবে।
লেখক : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ, মিরসরাই, চট্টগ্রাম