বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ সুন্দরবনে উদ্ধার হওয়া মৃত বাঘিনীটি শিকারীর দ্বারা হত্যা হয়নি, প্রাণীটির স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদন দিয়েছে বন বিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটি।
সুন্দরবনে উদ্ধার হওয়া মৃত বাঘিনীটি শিকারীর দ্বারা হত্যা হয়নি, প্রাণীটির স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদন দিয়েছে বন বিভাগ গঠিত তদন্ত কমিটি।
সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) জয়নাল আবেদীন মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রাতে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে ওই প্রতিবেদন জমা দেন।
গত ২০ আগস্ট সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের কটকা অভয়ারণ্যের ছাপড়াখালী বনাঞ্চল থেকে মৃত অবস্থায় একটি বেঙ্গল টাইগার উদ্ধার করেন বন বিভাগের টহল দলের সদস্যরা। বাঘটি ছাপড়াখালীর বন্দেআলী খাল থেকে প্রায় ৫০ ফিট ভেতরে পড়ে ছিল।
ঘটনার পর দিন উদ্ধার করা বেঙ্গল টাইগারটির মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনে ময়না তদন্ত ও বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে বন বিভাগের ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
শরণখোলা রেঞ্জের এসিএফ জয়নাল আবেদীনকে প্রধন করে গঠিত কমিটি বলছে, মৃত বাঘিনীটি বয়স ছিল ১০ বছর। ৩০ ইঞ্চি উচ্চতার বাঘটি লেজ ছাড়া লম্বায় ৬০ ইঞ্চি এবং লেজটি ছিল ৩৩ ইঞ্চি। বাঘিনীটির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ধারণের জন্য বন বিভাগের ফরেনসিক ল্যাবরেটরি ও অপরাধ তদন্ত বিভাগের পরীক্ষাগারে মৃত বাঘটির বিভিন্ন নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ওই প্রতিবেদন পাওয়া যেতে পারে। ল্যাব রিপোর্টগুলি পাওয়া গেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে আরো স্পষ্ট হওয়া যাবে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের ডিএফও মো. মাহমুদুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, তদন্ত দল যে এলাকায় বাঘটি পাওয়া গেছে সেখানে ঘুরে দেখেছে। বাঘটি হত্যা করা হয়েছে বা বিষটোপ দেওয়া হয়েছিল এমন কোন আলামত পায়নি। প্রকৃতিক ভাবে বাঘটির সাধারণ মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তারপারও ফরেন্সিক ল্যাবের বাঘটির বিভিন্ন নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। ময়না তদন্ত ও ল্যাবের
প্রতিবেদন হাতে পেলে আরো বিস্তারিত বলা যাবে। বন বিভাগ গঠিত তদন্ত দলের প্রধান শরণখোলার এসিএফ জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, ওই এলাকার প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা আমরা ঘুরে দেখেছি। কোথাও বিষটো বা ফাঁদ কিম্বা তেমন কোন
নমূনা পাইনি। সেখানে বাঘ বা বন্যপ্রাণী ছাড়া কোন পায়ের ছাপও লক্ষ করা যায়নি। উদ্ধার হওয়া মৃত বাঘটির শরীরেও কোন বাহ্যিক আঘাত বা ক্ষত ছিলনা।
‘সরেজমিন অনুসন্ধান ও ময়না তদন্তকারী প্রাণীসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে বিষটোপ বা শিকারীর দ্বারা বাঘটি হত্যা হয়নি বলে প্রতীয়মান হয়েছে। তাই বাঘটির সাধারণ মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।২১ আগস্ট শরণখোলা রেঞ্জ কার্যালয়ে মৃত বাঘিনীটির ময়নাতদন্ত শেষে চামড়া সংরক্ষণ করে দেহাবশেষ মাটিচাপা দেওয়া হয়। সুন্দরবন এলাকায় প্রকৃতিক পরিবেশে বাঘের গড় আয়ু ১৪ থেকে ১৬ বছর বলছে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ।
২০১৫ সালের বাঘশুমারিতে ১০৬টি বাঘ থাকার কথা জানা গিয়েছিল। ২০১৮ সালে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়ে ১১৪ হয়েছে। বনবিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, সুন্দরবনে যে অঞ্চলগুলোতে বাঘের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি এমন ১,৬৫৯ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ‘ক্যামেরা ফাঁদ’ পদ্ধতিতে জরিপ চালানো হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরায় ১,২০৮ বর্গকিলোমিটার, খুলনায় ১৬৫ বর্গকিলোমিটার ও
বাগেরহাটের শরণখোলায় ২৮৬ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে জরিপে অন্তর্ভুক্ত রাখা হয়েছিল।
বাঘশুমারির এই পদ্ধতিতে ক্যামেরার সামনে দিয়ে বাঘ চলাচল করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার ছবি উঠে যায়। পরে এসব ছবি বিশ্লেষণ করে বাঘের সংখ্যা নিরূপণ করা হয়। সর্বশেষ এই জরিপে সুন্দরবনের ২৩৯টি জায়গায় গাছের সঙ্গে ৪৯১টি ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল। ২৪৯ দিন ধরে চালু রাখা ক্যামেরাগুলতে বাঘের ২,৫০০টি ছবি পাওয়া যায়। ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা ১১৪টি বাঘ থাকার কথা অনুমান করছেন।