বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত হলো হাসিনা সরকারের পদত্যাগ। ১০ দফা দাবিতে দেশব্যাপি চলমান যুগপৎ আন্দোলন এক দফার আন্দোলনে পরিণত হতে চলেছে বলে দাবি করেন তিনি।
শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারী) খুলনায় বিএনপি আয়োজিত বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন।
গয়েশ্বর রায় বলেন, অবৈধ সংসদ বাতিল করতে হবে। দল নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন এবং নতুন নির্বাচন কমিশন করতে হবে। তাদের ঘোষিত তফসিলে আগামী নির্বাচন হবে। এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধানকে ভূলুন্ঠিত করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে এই সংবিধান সংশোধন করা হবে।
গয়েশ্বর রায় তার বক্তৃতায় গ্যাস বিদ্যুৎ সহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, ফ্যাসিষ্ট সরকারের পতন সহ ১০ দফা দাবিতে চলমান যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারী শনিবার সারা দেশের থানায় থানায় পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তি, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের দমন পীড়ন, আওয়ামী সন্ত্রাস নির্যাতনের প্রতিবাদ, বিদ্যুৎ গ্যাস ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য কমানোসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপি কেন্দ্রীয় ভাবে দেশের সকল বিভাগীয় সদরে এই সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করে।
নগরীর কে ডি ঘোষ রোডে জেলা পরিষদ ও কেসিসি মার্কেটের সম্মুখস্থ সড়কে স্থাপিত মঞ্চে সকাল ১১টা থেকে সমাবেশের কাজ শুরু হয়। শুরুতেই জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা জাসাসের শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। দুপুর সোয়া ১২ টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় সমাবেশের কাজ।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন খুলনা মহানগর বিএনপির আহবায়ক শফিকুল আলম মনা। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ও অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা মেহেদী আহমেদ রুমী, বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক সোহরাব উদ্দিন, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, সহ কোষাধ্যক্ষ মাহমুদ হাসান খান বাবু, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সহ তথ্য গবেষণা সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, সহ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, সহ প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, যশোরের আহবায়ক অধ্যাপক নার্গিস ইসলাম, সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক জাহানারা সিদ্দিকী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান, সাহারুজ্জামান মোর্তজা, সাবেক এমপি কাজী আলাউদ্দীন, মাগুরা জেলা বিএনপির আহবায়ক আলি আহমেদ, মেহেরপুর সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন, আবুল হোসেন আজাদ, সাতক্ষীরা আহবায়ক সৈয়দ ইফতেখার আলী, বাগেরহাটের আকরাম হোসেন তালিম, যশোরের দেলোয়ার হোসেন খোকন, নড়াইল সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম, আয়েশা সিদ্দিকা মানি, খান রবিউল ইসলাম, ফরিদা ইয়াসমিন রুনু, বাগেরহাটের এম এ সালাম, চুয়াডাঙ্গার সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ, যশোরের সদস্য সচিব সাবেরুল হক সাবু, ঝিনাইদহের সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, কুষ্টিয়ার ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন, মেহেরপুরের জাভেদ মাসুল মিল্টন প্রমুখ।
সমাবেশ পরিচালনা করেন জেলা বিএনপির আহবায়ক আমীর এজাজ খান, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আবু হোসেন বাবু ও মহানগর যুগ্ম আহবায়ক চৌধুরী শফিকুল ইসলাম হোসেন।
স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহানগর সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক তারিকুল ইসলাম জহীর, যুগ্ম আহবায়ক সৈয়দা রেহানা ঈসা, স্বেচ্ছাসেবক দল জেলা সভাপতি শেখ তৈয়েবুর রহমান, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি একরামুল হক হেলাল, যুবদলের মহানগর সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা চৌধুরী সাগর, মহিলা দলের মহানগর সভাপতি আজিজা খানম এলিজা, খুলনা জেলা মহিলা দলের সভাপতি অ্যাডভোকেট তছলিমা খাতুন ছন্দা, শ্রমিক দল মহানগর সভাপতি মো: মুজিবর রহমান, কৃষক দল জেলা সভাপতি মোল্লা কবির হোসেন, কৃষক দলের মহানগর সভাপতি আক্তারুজ্জামান তালুকদার সজীব, শ্রমিক দল জেলা সভাপতি উজ্জ্বল কুমার সাহা, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল মান্নান মিস্ত্রি। কোরআন তেলাওয়াত করের জেলা ওলামা দল সভাপতি মাওলানা ফারুক হোসেন।
গয়েশ^র রায় বলেন, মেগা প্রকল্পের নামে এই সরকার রাষ্ট্র ও জনগনের সম্পদ লুটপাট করছে। বিদেশে পাচার করছে। তাদের লুটের সম্পদ প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো, মামাতো, ফুপাতো ভাই আর তাদের ছেলেদের কাছে। রাষ্ট্রীয় পোশাক পরে পুলিশ সব চোরদের পাহারায় নিয়োজিত হয়েছে। বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ^াসী ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করছে। পুলিশ বিএনপিকে কর্মসূচি পালন করতে দেয়না। কিন্ত আওয়ামী লীগের তথাকথিত শান্তি সমাবেশ করতে পুলিশের অনুমতি লাগেনা।
খুলনা সহ সারা দেশের কারাগারে অসংখ্য নেতাকর্মী বন্দী থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদেরকে মুক্ত করতে হলে হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে হবে। দেশটা কথায় স্বাধীন হয়নি, ভাষণে স্বাধীন হয়নি। দেশ স্বাধীন হযেছে যুদ্ধ করে। এই ফ্যাসিবাদকে উৎখাত করতে হলে আমাদেরকে কঠোর হতে হবে।
সমাবেশ থেকে বক্তারা কারাবন্দী মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, জেলা সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী, মাহবুব হাসান পিয়ারু, মাসুদ পারভেজ বাবু, হাসানুর রশিদ মিরাজ, ইবাদুল হক রুবায়েদ, শফিকুল ইসলাম শফি, ইসতিয়াক আহমেদ ইস্তি, মোঃ তাজিম বিশ^াস সহ যশোর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল, মাগুরার কারাগারে আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন।
সমাবেশে আসার পথে ঝিনাইদহে শাসক দলীয় সন্ত্রাসীদের হামলায় ১১ টি বাস ও ৪টি মাইক্রো ভাংচুর এবং শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। মাগুরায় পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের বহনকারী তিনটি বাস থানায় নিয়ে আটকে রাখে। সমাবেশ থেকে এসকল ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
এদিকে রাতভর সমাবেশ মঞ্চ নির্মাণের কাজ চলে। সকাল থেকেই বিভিণœ জেলা ও থানা থেকে একের পর এক মিছিল আসতে থাকে। কে ডি ঘোষ রোড ছাড়িয়ে সমাবেশ ছড়িয়ে পড়ে স্যার ইকবাল রোড, খান এ সবুর রোড, ভৈরব স্ট্যান্ড রোড হেলাতলা, রেল স্টেশন সহ নগরীর বিস্তীর্ণ এলাকায়।