আমেরিকান অনুপ্রেরণাদায়ক বক্তা ও লেখক জিম রণের পরামর্শ ‘নিজের শরীরের যত্ন নাও, কারণ এটিই একমাত্র স্থান-যেখানে তোমাকে বাস করতে হবে।’
এই কথা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, আমাদের শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের যত্ন নেয়া প্রয়োজন। এতে আমাদের সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকা নিশ্চিত হবে। সুতরাং আমরা যদি রোগহীনভাবে বেঁচে থাকতে চাই, তাহলে প্রয়োজন ‘প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টি’।
খাদ্য শব্দের মানে আমরা অবগত হলেও পুষ্টি বিষয়টি নিয়ে অধিকাংশ ব্যক্তির তেমন কোনো আগ্রহই নেই। হাস্যকর হলেও সত্যি, অনেকে এভাবেও ভাবেন, ‘খাদ্য খেয়ে যাই, পুষ্টি নিয়ে পরে ভাবা যাবে!’
বলে রাখা ভালো- কোনো ব্যক্তির বয়স যখন ৪০ পার হয়, তখন তাকে ভাবতেই হবে কোন খাবারে কী পুষ্টি আছে, কোনটা খাব আর কোনটা বাদ দিব।
আসুন জেনে নিই পুষ্টি কী?
আমরা সহজভাবে বলতে পারি, খাদ্য মানুষের শরীরে থাকা কোষ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে মিশে যে প্রভাব বিস্তারকারী ভূমিকা রাখে তাই হলো পুষ্টি। পুষ্টির ইতিবাচক প্রভাব শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এজন্য সঠিক পরিমাণ অনুযায়ী সুষম খাবার বাছাই করা আবশ্যক।
আমেরিকার প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব মেডিসিনের ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন বোর্ড অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির মোট ওজনের সঙ্গে ০.৮ (গ্রাম) গুণ করে যে মান পাওয়া যাবে, সেটি হবে তার দৈনিক প্রোটিনের চাহিদার মান। ১ গ্রাম প্রোটিন থেকে ৪ কিলো ক্যালরি (শক্তি) পাওয়া যায়। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তির ওজন ৫০ কেজি হলে তার প্রোটিনের চাহিদা হবে ৪০ গ্রাম।
প্রতিষ্ঠানটির মতে, ব্যক্তিভেদে প্রয়োজনীয় ক্যালরিতে ৪৫ থেকে ৬৫ শতাংশ শর্করা থাকা উচিত। যেমন- ধরা যাক একজন ব্যক্তির দৈনিক প্রয়োজনীয় ক্যালরি ১৮০০। তিনি যদি ৫৫ শতাংশ শর্করা গ্রহণ করেন, তবে তার দৈনিক শর্করার চাহিদা হবে ২৪৭ গ্রাম। ১ গ্রাম শর্করা থেকে পাওয়া যায় ৪ কিলো ক্যালরি।
অন্যদিকে চাহিদা অনুযায়ী মোট ক্যালরির ২৫ শতাংশ ফ্যাট থেকে গ্রহণ করা ভালো। এক্ষেত্রে ১৮০০ ক্যালরিতে ফ্যাটের চাহিদা হবে ৫০ গ্রাম। ১ গ্রাম ফ্যাটে মিলবে ৯ কিলো ক্যালরি। একইভাবে ভিটামিন, মিনারেলস ও অন্যান্য খাদ্য উপাদানও পরিমিত পরিমাণ থাকা আবশ্যক।
চাহিদা অনুযায়ী দৈনিক এ খাবারের কত শতাংশ কখন গ্রহণ করতে হবে তারও একটি তালিকা থাকা প্রয়োজন।
পুষ্টির ইতিবাচক ভূমিকা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
** ওজনের ভারসাম্য রক্ষার জন্য।
** জীবনযাপনে সুশৃঙ্খল ধারা বজায় রাখতে।
** রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য।
** মানসিক সুস্থতার জন্য।
কী করতে হবে?
উচ্চতা অনুযায়ী ওজন ঠিক রেখে দেহের সুস্থতার জন্য শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি প্রতিদিন গ্রহণ করতে হবে। কেবল ওজন কমানো বা বাড়ানোর জন্য নয় বরং বিভিন্ন রোগের ধরন অনুযায়ী পথ্য পরিকল্পনা করতে হবে।
গর্ভবতী মায়ের প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য অবশ্যই পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রাকৃতিক খাবার গ্রহণ করতে হবে। কারণ গর্ভে থাকা শিশুর সুস্থতা ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি পূরণের বিষয়টা মায়ের পুষ্টির ওপরই নির্ভর করে।
বাড়ন্ত শিশু কিংবা কিশোর-কিশোরীদের সঠিক খাদ্য পরিকল্পনামাফিক জীবনযাপন করতে হবে। এই সময়ে সন্তানের সঠিক বিকাশে সুষম খাবার প্রয়োজন। তার প্রয়োজনীয় পুষ্টির পরিমাণ নির্ধারণ করে সেই অনুযায়ী খাবারের তালিকা করতে হবে। এক্ষেত্রে পরিবারের সব সদস্যদের সচেতন হওয়া উচিত। এছাড়া তালিকা তৈরিতে একজন পুষ্টিবিদের সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে।
জীবনের প্রথম ধাপে সচেতন হলে, ফলাফল হিসেবে আমরা পেতে পারি ভারসাম্যময় সুশৃঙ্খল ও সুস্থ জীবন।
লেখক: রেন্টিনা চাকমা, পুষ্টিবিদ, যশোর।