খুলনা পাবলিক কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ফাহমিদ তানভীর রাজিন হত্যার দায়ে দুই কিশোর গ্যাং গ্রুপের ১৭ সদস্যের সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সোমবার (২৩ মে) দুপুরে খুলনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ৩ ও শিশু আদালতের বিচারক আবদুস সালাম এ রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার পর আসামিরা বাদীর পরিবারসহ সাংবাদিকদের দিকে উত্তপ্ত বাক্য ছুড়েছে। তারা আদালতের কাঠগড়া থেকে রাজিনের মাকে হুমকিও দিয়েছে।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হচ্ছে, মঞ্জুরুল ইসলাম ওরফে সাব্বির হাওলাদার (১৬), বিএম মাজিব হাসান রয়েল(১২), শাহারিয়ার জামান তুর্য্য (১৭), রিয়ান শেখ ওরফে রেফাত (১২), ফাহিম ইসলাম মনি (১৪), সানি ইসলাম ওরফে আপন (১৩), জিসান খান (১৫), তারিন হাসান ওরফে রিজভী (১৩), শাকিব খান শিমুল (১৭), অন্তর কুসার দাস(১৫), মোঃ হাকিম(১৭), সৈকত (১৬), শেখ সাকিব (১৭), আসিফ প্রান্ত আলিফ (১৫), শেখ তামিম (১৬), সাকরান সালেহ ওরফে মিতুল (১২), মোস্তফিজুর রহমান নাঈম (১৪)।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে কনসার্ট দেখার জন্য কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা হয় রাজিন। রাতে অনুষ্ঠান স্থলে বসাকে কেন্দ্র করে আসামি তামিমের সাথে রাজিনের হাতাহাতি হয়। রাত ৯ টার দিকে রাজিনকে অনুষ্ঠানের মঞ্চের পিছনে নিয়ে গিয়ে চড় থাপ্পড় মারতে থাকে। একপর্যায়ে সাব্বির বলে আমার কাছে চাকু আছে। অনেকদিন চাকুটি রক্ত খায়না। মামলার অন্যান্য আসামিরা রাজিনের হাত চেপে ধরে। আর সাব্বির চাকুটি রাজিনের পেটে ঢুকিয়ে দিলে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এরপর আসামিরা পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় রাজিনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এরপর নিহতের পিতা শেখ জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ৬ জন আসামির নাম উল্লেখসহ আরও অজ্ঞাতনামা ১০ জনের বিরুদ্ধে খালিশপুর থানায় মামলা দায়ের করেন, যার নং ২০। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খালিশপুর থানার এস আই মো. মিজানুর রহমান ২০১৮ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে হত্যার কারণ হিসেবে দুটি কারণ উল্লেখ করা হয়। নিহত রাজিনের এক সহপাঠী ছাত্রীকে উত্যক্তের প্রতিবাদ করা এবং স্থানীয় কিশোর গ্যাং রয়েল ও সাব্বির গ্রুপের সঙ্গে রাজিনের পূর্ব থেকে দ্বন্দ্ব থাকা।
বিচার চলাকালে আদালত ৩০ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
আসামিদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ : সাংবাদিকদের গালাগালি, রাজিনের মাকে গুলি করে হত্যার হুমকি!
সোমবার (২৩ মে) দুপুরে খুলনা পাবলিক কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র রাজিন হত্যা মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য ছিল। খুলনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ৩ এ। সকাল থেকে খুলনার গণমাধ্যম কর্মিরা ওই আদালত চত্বরে উপস্থিত হতে থাকেন। সাংবাদিকদের সেখানে দেখে উত্তেজিত হতে থাকে রাজিন হত্যা মামলার আসামিরা। তাদের লক্ষ্য করে এজলাস থেকে জুতা নিক্ষেপ করতে থাকে। পরে পুলিশ দরজা বন্ধ করে দেয়।
৩০২/৩৪ ধারায় ১৭ আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত প্রত্যেককে ৭ বছরের কারাদন্ড প্রদান করেন। রায় ঘোষণার পর আদালত কক্ষ থেকে আসামিরা ন্যায় বিচার পায়নি বলে চিৎকার করতে থাকে। একপর্যায়ে একজন সাংবাদিক উপস্থিত হলে তাকে উদ্দেশ্যে করে পানি নিক্ষেপ করে। পরে পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করতে এজলাসের রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়।
দুুপুর ২ টার দিকে পুলিশ আসামিদের নিয়ে কারাগারে উদ্দেশ্যে রওনা হলে সাংবাদিকদের দেখে আসামিরা গালাগালি করতে থাকে। কারাগারে যাওয়ার পথে আসামিরা আদালত চত্বর থেকেই ন্যায় বিচার পায়নি বলে শ্লোগান দিতে থাকে। আসামিদের এরূপ আচারণ দেখে আদালত চত্বরে উপস্থিত মানুষ হতবাক হয়ে যায়।
এদিকে নিহত রাজিনের মা রেহেনা খাতুন বিচারে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আদালত কক্ষ থেকে বের হওয়ার সময় আসামিদের একজন তাকে দেখে নেওয়াসহ গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়। আসামিদের আত্মীয় স্বজনদের ভয়ে কোর্ট এলাকা থেকে তিনি বের হতে পারেনি। পরে পুলিশের সহায়তায় ইজিবাইকে চড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। এর আগে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, এ কোন ধরণের বিচার ব্যবস্থা। আমি এখানে আমার সন্তান হত্যার বিচার চাইতে এসেছি। উপরন্তু পুলিশের উপস্থিতিতে আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যকে আসামিরা হত্যার হুমকি দিচ্ছে! তিনি এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন।