ফকির শহিদুল ইসলামঃ
দেশের তিন বিভাগের ২৬ জেলায় চলা পেট্রোল পাম্পের ধর্মঘট ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত স্থগিত করেছেন আন্দোলনকারীরা। সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সঙ্গে পেট্রোল পাম্প মালিকদের এক আলোচনায় ধর্মঘট প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত হয় ৷ রাজশাহী, রংপুর এবং খুলনা বিভাগে ধর্মঘটে থাকা পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে জ্বালানি তেল আমদানি ও সরবরাহকারী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন-বিপিসির সমঝোতা বৈঠকের পর ধর্মঘট স্থগিতের এই ঘোষণা আসে। এর আগে সোমবার বেলা ১১টা ৩০ মিনিটের দিকে কারওয়ানবাজারে বিপিসির লিয়াজোঁ কার্যালয়ে কোম্পানির পরিচালক (বিপণন) সৈয়দ মেহদী হাসানের সভাপতিত্বে এই বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন
বাংলাদেশ জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতির সভাপতি সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম, মহাসচিব মিজানুর রহমান রতন, পেট্রল পাম্প ও ট্যাংক লরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি এম এ মোমিন দুলাল,বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ডিলার ডিস্ট্রিবিউটর ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম-মহাসচিব ও খুলনা বিভাগীয় ট্যাংকলরি ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফরহাদ হোসেন , পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, খুলনা বিভাগের সহ-সভাপতি এম মাহবুবুল আলম, সিনিয়ন সহ সভাপতি মোহাম্মদ সোবহান আব্দুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক শেখ মুরদা হোসনেসহ রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর ও খুলনা অঞ্জলের অন্যান্ন প্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ পেট্রোলপাম্প ও ট্যাংকলরী মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ১৫ দফা দাবিতে তিন বিভাগে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। ধর্মঘটের কারণে স্বল্প ও দূরপাল্লার যানবাহন নিয়ে বেকায়দায় পড়েন চালকরা।রাজশাহী, রংপুর এবং খুলনা তিন বিভাগে প্রায় এক হাজার ৩শ পেট্রোল পাম্প একযোগে বন্ধ রাখা হয়েছিল। সেইসঙ্গে ডিপো থেকে তেল উত্তোলনও বন্ধ ছিল।
এদিকে ধর্মঘট ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত স্থগিত হওয়ায় দেশের তিন বিভাগের ২৬ জেলায় পেট্রোল পাম্পগুলো তেল বিক্রি শুরু করেছেন । কাশিপুর যমুন ডিপো ইনচার্জ মোঃ নজরুল ইসলাম এবং পদ্মা অয়েল কোম্পানীর ব্যাবস্থাপক(অপারেশন) মোঃ আনোয়ার হোসেন জানান,ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ধর্মঘট স্থগিত হওয়ায় জ্বালানী তেল পরিবেশকরা ডিপো থেকে তেল উত্তোলন শুরু করেছে । খুলনার পদ্মা, মেঘনা, যমুনা তেল ডিপো থেকে বেলা দুইটায় ট্রাংকলরী লোড পয়েন্ট থেকে জ্বালানী তেল তেল উত্তোলন শুরু করায় ট্রাংকলরীর লন্বা লাইন দেখা গেছে ।
খুলনা বিভাগের ১০ জেলাসহ বৃহত্তর ফরিদপুরের ৫ জেলায় একই সঙ্গে পেট্রোল পাম্পে তেল বিক্রির ঘোষনায় স্বস্থি ফিরে এসেছে ।
বাংলাদেশ পেট্রোলপাম্প ও ট্যাংকলরী মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ১৫ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—জ্বালানি তেল বিক্রিতে কমপক্ষে সাড়ে ৭ শতাংশ কমিশন দেওয়া, জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা কমিশন এজেন্ট নাকি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান- বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করা, প্রিমিয়াম পরিশোধ সাপেক্ষে ট্যাংক-লরি শ্রমিকদের জন্য ৫ লাখ টাকার দুর্ঘটনা বীমা, ট্যাংক-লরির ভাড়া বৃদ্ধি, পেট্রোল পাম্পের জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের লাইসেন্স গ্রহণের নিয়ম বাতিল, পেট্রোল পাম্পের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স নেওয়ার নিয়ম বাতিল, পেট্রোল পাম্পে অতিরিক্ত পাবলিক টয়লেট করা, জেনারেল স্টোর ও ক্লিনার নিয়োগের বিধান বাতিল করা, সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃক পেট্রোল পাম্পের প্রবেশ দ্বারের ভূমির জন্য ইজারা নেওয়ার নিয়ম বাতিল, ট্রেড লাইসেন্স ও বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়া অন্য দপ্তর বা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নেওয়ার নিয়ম বাতিল, আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাংক ৫ বছর অন্তর বাধ্যতামূলকভাবে ক্যালিব্রেশনের নিয়ম বাতিল করা।
এছাড়া দাবির মধ্যে আরও রয়েছে ট্যাংক-লরি চলাচলে পুলিশি হয়রানি বন্ধ করা, সুনির্দিষ্ট দপ্তর ছাড়া ডিলার বা এজেন্টদের অযথা হয়রানি বন্ধ করা, নতুন কোনো পেট্রোল পাম্প নির্মাণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় জ্বালানি তেল মালিক সমিতির ছাড়পত্রের বিধান চালু করা, পেট্রোল পাম্পের পাশে যে কোনো স্থাপনা নির্মাণের আগে জেলা প্রশাসকের অনাপত্তিপত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা এবং বিভিন্ন জেলায় ট্যাংক-লরি থেকে চাঁদা গ্রহণ বন্ধ করা।