চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ নড়াইলে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের মামলা মাতবররা সালিস বৈঠকে ৮০ হাজার টাকায় ফায়সালা করেছেন। ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিবারের দাবি, এর মধ্যে পুলিশের জন্য ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। পুলিশের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি করা হবে। তবে পুলিশ বলছে, তারা এ মীমাংসার বিষয়ে কিছু জানে না।
গত বৃহস্পতিবার রাতে নড়াইল সদরের মাইজপাড়া ইউনিয়নের বোড়ামারা গ্রামে মান্নান শিকদারের বাড়িতে সালিস বৈঠকে ফায়সালাটি হয়। মাইজপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি স্থানীয় মাতবর সলেমান মোল্যার সভাপতিত্বে সালিসে আরো উপস্থিত ছিলেন আলি মিয়া, বক্কার মোল্যা, আজিজার মোল্যা, আবু তাহের মোল্যা, মোনায়েম শেখ মোল্যা, ধর্ষণে অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীর পরিবারসহ ২৫-৩০ জন। গতকাল শুক্রবার বোড়ামারায় গিয়ে এ তথ্যের সত্যতা মিলেছে। অভিযুক্ত আমজাদ মুন্সী (৫০) বোড়ামারার মৃত হবিবার মুন্সীর ছেলে।
নির্যাতিত শিশুটির পরিবার জানায়, ৭ ডিসেম্বর প্রথম দফা ও ১১ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফা সালিসে এক লাখ টাকা মামলার বাদীর পরিবারকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে বৃহস্পতিবার রাতে তৃতীয় দফা সালিসে ৮০ হাজার টাকায় রফা হয়। এর মধ্যে ১০ হাজার গ্রাম্য সালিসকারীরা ও ৭০ হাজার টাকা ভুক্তভোগীর পরিবার পাবে। আর পুলিশের জন্য ‘যা করা দরকার তা’ আসামিপক্ষ করবে বলে সালিসে সিদ্ধান্ত হয়।
শিশুটির বাবা জানান, সালিসের সভাপতি সলেমান মোল্যার কাছ থেকে তিনি ৭০ হাজার টাকা বুঝে পেয়েছেন। পুলিশের অংশ আসামিরা মেটাবে। মামলা প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘ঘটনা শুনে মামলা করেছি। এখন গ্রামের লোকের চাপে সালিসে মীমাংসা করতে বাধ্য হয়েছি।’
ধর্ষণে অভিযুক্ত আমজাদ মুন্সীকে তাঁর বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায়নি। তিনি মামলার পরদিন থেকেই পলাতক। তাঁর পরিবার জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে সালিস হয়েছে। শুক্র-শনিবার আদালত বন্ধ। কাল রবিবার পুলিশের মাধ্যমে মামলাটি মিটমাট করা হবে। আমজাদের স্ত্রী পিয়ারী বেগম বলেন, গ্রাম্য মাতবররা সালিসে ৮০ হাজার টাকায় মীমাংসা করেছেন। মাতবররা বলেছেন, অর্ধেক টাকা মামলার বাদীর পরিবার পাবে; বাকি ৪০ হাজার টাকায় পুলিশের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি করা হবে।
এ সময় সালিসে অন্যতম মীমাংসাকারী মাতবর মোনায়েম শেখ সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে এই প্রতিনিধির দিকে তেড়ে আসেন। তিনি সালিসে ছিলেন না দাবি করে বলেন, ‘এগুলো সাংবাদিকের কাজ না। আপনারা এখান থেকে চলে যান। নাহলে খুব ভালো হবে না।’
উল্লেখ্য, গত ২ ডিসেম্বর দুপুরে শিশুটির মা-বাবা বাইরে ছিলেন। এ সময় শিশুটিকে তাদের ঘরে ধর্ষণ করেন আমজাদ মুন্সী। শিশুটির চিৎকারে তার ভাবি দৌড়ে এলে আমজাদ তাঁকে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় ৩ ডিসেম্বর শিশুটির বোন নড়াইল সদর থানায় ধর্ষণ মামলা করেন।
ধর্ষণ মামলায় সালিসে বিচার করা প্রসঙ্গে মাতবর সলেমান মোল্যা বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সালিস হয়নি। আগে দুই দফা বসা হয়েছিল। তেমন ফায়সালা হয়নি। বৃহস্পতিবার মাতবররা আসেনি বলে আমি চলে এসেছি।’ মাইজপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘সালিসের ঘটনা আমার কানে আসেনি। তবে এটি হয়ে থাকলে অন্যায় হয়েছে।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নড়াইল সদর থানার এসআই মাসুদ রানা বলেন, ‘এ ধরনের মামলা আপসযোগ্য নয়। স্থানীয় মাতবররা পুলিশের নাম ভাঙাতে পারেন। তাতে আমাদের কী করার আছে? আমরা যথানিয়মে মামলার চার্জ গঠন করব।’