মোহাম্মদ ঘাউস ছিলেন অটোরিকশা চালক। স্বপ্ন ছিল ছেলে মোহাম্মদ সিরাজ বড় ক্রিকেটার হবে।
সেই স্বপ্ন পূরণও হয়েছে। সদ্যই অস্ট্রেলিয়া থেকে বীরের বেশে দেশে ফিরেছেন এই ডানহাতি পেসার। শুধু কি তাই, দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা সিরাজ এখন বিলাসবহুল বিএমডব্লিউ গাড়িরও মালিক হয়ে গেছেন।
অস্ট্রেলিয়ায় ঐতিহাসিক সিরিজ শেষে কিছুদিন আগে দেশে ফিরেছেন সিরাজ। অস্ট্রেলিয়া সফরে থাকায় বাবাকে শেষ দেখাও হয়নি তার। তাই ফিরেই ছুটে গিয়েছিলেন পরপারে পাড়ি জমানো বাবার কবরের পাশে। বাবার কবর জিয়ারতের সেই মুহূর্ত সমর্থকদের হৃদয় স্পর্শ করেছিল। এবার তিনি আলোচনায় এলেন বিএমডব্লিউ গাড়ির মালিক হয়ে।
স্বপ্ন পূরণ শেষে সম্প্রতি নিজেকে দামি উপহার দিয়েছেন সিরাজ। শুক্রবার তিনি ইন্সটাগ্রামে দুটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। সেখানেই নতুন বিএমডব্লিউ গাড়িতে চড়তে দেখা গেছে তাকে। গাড়িতে চড়ে হায়দরাবাদের রাস্তায় ঘুরেও বেড়িয়েছেন তিনি।
দক্ষিণ ভারতের হায়দরাবাদের অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের বেড়ে ওঠা সিরাজ একসময় খেলাধুলার সরঞ্জাম জোগাড় করতে হিমশিম খেতেন। কিন্তু বাবা মোহাম্মদ ঘাউস ছেলের স্বপ্ন পূরণের জন্য সবরকম ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত ছিলেন। সিরাজও তার বাবার আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। রাজ্য পর্যায় থেকে আইপিএল, সেখান থেকে জাতীয় দলের জায়গা করে নিয়েছেন।
তবে সিরাজের সাফল্য দেখে যেতে পারেননি তার বাবা। অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে সিরাজ জানতে পারেন তার বাবা আর নেই। কিন্তু জাতীয় দলের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং বাবার স্বপ্ন পূরণের তীব্র ইচ্ছার কারণে থেকে যান এই তরুণ ভারতীয় পেসার। সফরে দলের তারকা পেসারদের ইনজুরির কারণে ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্টেই দলের মূল পেসারের ভূমিকায় নামতে হয় তাকে। আর সেই ভূমিকায় নেমে নিয়েছেন ৫ উইকেট। দলও ম্যাচ জিতে সিরিজ বগলদাবা করেছে।
অস্ট্রেলিয়া সফর শেষ করে দেশে ফিরেছে ভারতীয় দল। দলের সঙ্গে দেশে ফিরে রাজকীয় অভ্যর্থনা ঠেলে বাবার কবরের পাশে ছুটে যান সিরাজ। ফুলে ফুলে ঢেকে দেন বাবার কবর। কবর জিয়ারত করার পর উপস্থিত মিডিয়াকর্মীদের তিনি বলেন, ‘দেশের জন্য খেলতে পেরেছি। আল্লাহকে এজন্য ধন্যবাদ। বাবার স্বপ্ন ছিল তার ছেলের খেলা সারাবিশ্ব দেখবে। তিনি বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন। তার দোয়ার কারণেই আমি পাঁচ উইকেট পেয়েছি। এটা আসলেই অবর্ণনীয়। ‘
বাবার মৃত্যুর পর কতটা কঠিন সময় পার করতে হয়েছে সেটাই জানিয়েছেন সিরাজ। তবে পরিবারের সবাই মানসিক শক্তি জোগানোয় শেষ পর্যন্ত সাফল্য এসেছে বলে জানান তিনি, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর ৫ উইকেট নেওয়া তো দূরের কথা, খেলাই প্রায় অসম্ভব ছিল। কিন্তু আমার পরিবারের লোকজন বিশেষ করে আমার মার সঙ্গে কথা বলেছিলাম। সবাই আমাকে মানসিক শক্তি দিয়েছে। আমার মনে হয় আমি বাবার ইচ্ছে পূরণ করতে পেরেছি। ‘
শুধু বাবার মৃত্যু নয়, অস্ট্রেলিয়ায় বর্ণবিদ্বেষমূলক মন্তব্যের শিকারও হয়েছে সিরাজ। এই ব্যাপারটাও তাকে মানসিকভাবে আঘাত দিয়েছিল। স্বাগতিক দর্শকরা গ্যালারি থেকে বর্ণবাদী মন্তব্য করায় ভারতীয় দলের পক্ষ থেকে আম্পায়ারের কাছে অভিযোগও জানায়। এর ফলে গ্যালারি থেকে ছয় দর্শককে বেরও করে দেয় পুলিশ। তবে এসব ঘটনা সত্ত্বেও বিচলিত হননি সিরাজ। বরং মাথা ঠাণ্ডা রেখে দলকে জেতানোয় রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
অনেকদিন থেকেই সিরাজের বাবা মোহাম্মদ ঘাউস অসুস্থ ছিলেন। আইপিএলে সিরাজ যেদিন নজর কাড়া পারফর্ম করলেন, তার ঠিক একদিন আগেই ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে হায়দরাবাদের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। সেখানেই মৃত্যু হয় তার।
গত আইপিএলের অন্যতম আবিষ্কার সিরাজ। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর এই পেসার বল হাতে দলকে বেশকিছু জয় এনে দিয়েছেন। বিরাটের আদরের ‘মিঞা’ ওই আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে এক ম্যাচে দুটি ওভার মেডেন দিয়েছিলেন, যা আইপিএলের ইতিহাসে রেকর্ড। ওই পারফরম্যান্সের ভিত্তিতেই অস্ট্রেলিয়া সফরে ভারতীয় দলে ডাক পান তিনি।
ভারতের জাতীয় দলের হয়ে অবশ্য আরও আগেই অভিষেক হয়েছে সিরাজের। এরইমধ্যে ম্যান ইন ব্লুদের হয়ে ১টি ওয়ানডে ও ৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। আইপিএলে যেদিন কলকাতার বিপক্ষে দুর্দান্ত বোলিং করলেন সিরাজ, সেদিন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তার বাবা বলেন, ‘সবাই বলছে, তোমার ছেলে খুব ভালো খেলছে। টেলিভিশন, পত্রিকায় সব জায়গায় তোমার নাম দেখে খুব ভালো লাগছে। ‘