চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃমিলের জন্য পাট ক্রয় ১১ লাখ দশ হাজার ৮শত টাকা। এই পাট ক্রয় করতে গিয়ে কর্মকর্তার সম্মানী,যাতায়াত ,আপ্যায়ন আর পাট ব্যাপরীদের উপহার বাবাদ ব্যয় দেখানো হয়েছে ১৩ লাখ ৯১ হাজার টাকার । এই চিত্র খুলনা বেসরকারী খাতের সোনালী জুট মিলের। এমিলের গুদামে পাট রেখে ৪০ কোটি টাকা ঋন দেয়ার দায়ে দুদকের মামলায় সোনালী ব্যাংকের ৫ কর্মকর্তা এখন জেল হাজতে আর মিল মালিক বিদেশে । অস্বচ্ছতা অনিয়ম ভরা এই পাটকলটি গত ছয় বছর ধরে ঠিকদারদের আর লুটপাটের স্বর্গরাজ্যতে পরিনত হয়ে এবার বেহাত হতে চলেছে । ফলে সোনালী জুট মিলে অনিয়ম আর লুটপাটের কারনে সোনালী দিন ফেরাতে পারছে না।
কয়েক হাত বদলের পর মিলের দায়িত্ব গ্রহন করেন বাগেরহাটের উমেদার থেকে জমিদার হওয়া বহুল আলোচিত বাগেরহাটের আব্দুল মান্নান তালুকদারে নিউ বসুন্ধধারা গ্রুপ । কোন চুক্তি পত্র ছাড়াই তিনি মিলটি পরিচালনা করছিলেন। ২০১৮ সালে এনটিভির ক্রাইম ওয়াসে মান্নান তালুকদারের এমএল এস অবৈধ ব্যবসা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং দুদক তদন্তে নামে। পরবর্তীতে দুদকের ১১০ কোটি টাকা মানি লন্ডারিং মামলায় মান্নান জেল হাজতে । পরবর্তীতে জুট মিল পরিচালনার ঠিকদার নিযুক্ত হন পুরবী টেডিং, হাসান ট্রেডাস হয়ে সেলিম এন্টারপ্রাইজ । তারা কেউই চুক্তির মেয়াদ পূর্ন করতে পারেননি। বরং মিলের স্থাপর সম্পত্তি বিক্রি করে লুটপাট করার অভিযোগ রয়েছে ।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০ সোনালী জুট মিলের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী এস এম এমদাদ হোসেন মিল পরিচালনার জন্য হাসান ট্রেডাস এর মাহমুদুল হাসানের সাথে মিল পরিচালনার চুক্তি পত্র করেন মিল চার লাখ ১৫ হাজার টাকা মাসিক ভাড়ার ভিত্তিতে । সেই হিসাবে ইনভেন্ট্রি করে মিলটি মালিক কতৃপক্ষ ঠিকাদারকে বুঝিয়ে দেন। ছুক্তি অনুযায়ী ১ মার্চ থেকে মিল চালূ, পূজি বিনিয়োগ করার কথা ছিল। কিন্তু মিল কতৃপক্ষর অভিযোগ হাসান ট্রেডার্স মালিক মাহমুদুল হাসান কোন অর্থ বিনিয়োগ করেন নি।হাসান ট্রেডার্স সাব ঠিকদার নিয়োগ করে বিভিন্ন মোকাম হতে জুট মিলে দেখিয়ে পাট বাকিতে এনে মে-জুন মাস হতে নিয়মিত পরিবর্তে নিয়মিত চালুর পরিবর্ততে মাঝে মধ্যে চালু করেন।
মিল ভাড়া পরিশোধ না করায় এবং মিল পুরাপুরা চালু করতে ব্যর্থ হওয়াই সোনালী জুট মিল চেয়ারম্যান এস এম এমদাদ হোসেন হাসান ট্রেডার্স এর সাথে ঠিকাদারী চুক্তি বাতিল করে সেলিম এন্টারপ্রাইজের নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ করেন জুলাই মাসেই ।
জুন মাসের শেষ দিকে রাষ্টায়াত্ব জুট মিলগুলি বন্ধ হয়ে হলে বেসরকারী জুট মিল গুলির উৎপাদিত পন্যর কদর বৃদ্ধি পায় । এই সময় মিল ছেড়ে যাওয়া হাসান ট্রেডার্স একটি মহলের প্রচেষ্টায় পুনরায় মিল নিয়ন্ত্রন নেবার প্রচেষ্টা চালায় । যার ফলশ্রুতিতে তিনি খুলনা বিভাগীয় শ্রম দপ্তর পরিচালকের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
শ্রম ও কর্ম সংস্থাপন মন্ত্রনালয় খুলনা বিভাগীয় পরিচালকের দপ্তর হতে ৭ জুলাই পরিচালক মিজানুর রহমান দপ্তরে এক বৈঠক অনুষ্টিত হয় । এই বৈঠকের পর শ্রদ দপ্তর হতে সোনালী জুট মিলস লি: একটি পত্র দেন ১৪ জুলাই আলোচনায় বসার জন্য । স্বারক নং ৪০. ০২. ০০০০. ১০৩. ৩৫. ০০১. ২০. ৭৪৫[৩] এই চিঠিতে বলা হয় যে, বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরে পরিচালক মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে সোনালী জুট মিল নিয়ে এক সভা অনুষ্টিত হয়, সভায় উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্ম সংস্থান মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিমন্ত্রী মহোদেয়র সহকারী একান্ত সচিব মো: সাহাবুদ্দিন আহমেদ, শিল্প পুলিশ ও কেএমপি পুলিশ প্রতিনিধি, হাসান ট্রেডার্স এর মাহমুদুল হাসান, সেলিম এন্টারপ্রাইজ এবং জুট মিল সিবিএ সভাপতি সাধারন সম্পাদক ।
চিঠির বর্ননাতে বলা হয় যে সভায় মিলের সৃষ্ট সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় । আলোচনান্তে সোনালী জুট মিলের চেয়ারম্যান এস এম এমদাদ হোসেন ও হাসান ট্রেডার্স স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্র ভংগর বিষয় যে কারন উল্লেখ করা হয়েছে তা যাচাই করতে একটি ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি ১১জুলাই মিলে সরে জমিনে গিয়ে কাগজপত্র পরীক্ষা করবেন। এবং এই পর্যবেক্ষন শেষে ১৪ জুলাই শ্রম দপ্তরে বৈঠক তা উপস্থাপন করা হবে ।
১৪ জুলাই বিভাগীয় শ্রম দপ্তর পরিচালক মো: মিজানুর রহমান সভাপতিত্বে অনুষ্টিত সভার কার্ষ বিবরনী বলা হয় যে , চুক্তিপত্রর শর্ত ভংগ করার দায়ে সোনালী মিল চেয়ারম্যান এস এম এমদাদ হোসেন মেসার্স হাসান ট্রেডার্স এর চুক্তি বাতিল করে মো: আলম এবং তাসলিন আলমের সাথে নতুন চুক্তি করেন। ফলে সৃষ্ট সমস্যা সমাধান কল্পে এই বৈঠক ।বৈঠক চলাকালে মিলের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী এস এম এমদাদ হোসেন বুলবুল বিদেশ থেকে শ্রম দফতরের পরিচালক মিজানুর রহমানকে মোবাইল করেন। যা শ্রম পরিচালক লাউন্ড স্পীকারে দিয়ে সকলকে শোনানো হয় । এমদাদ হোসেন হাসান ট্রেডার্স এর সাথে চুক্তি বহল না করার ব্যাপারে দৃঢ়তা পোষন করেন।
এমদাদ হোসেন হাসান ট্রেডাসকে মিল পরিচালনার দায়িত্ব দিতে অস্বীকার করায় সিদ্ধান্ত হয় যে মিল পরিচালনা করবেন মো: আলম ও তাসনিম হাসান । তবে চার মাস হাসাস ট্রেডার্স যে মিলটি ঠিকাদারীতে পরিচালনা করেছেন তার দেনা পাওয়া বুঝে দেবার জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটির হিসাবের সঠিকতা নিরুপন করবেন। এই কমিটির আহবায়ক করা হয়েছে শ্রম ও কর্ম সংস্থান প্রতিমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব শাহবাদুদিন আহমেদ ।
এই কমিটির কাছে হাসান ট্রেডার্স চারমাস মিল পরিচালনা করা জন্য তার বিনিয়োগ হিসাবে এক কোটি ৭ লাখ ২৩ হাজার টাকার পাওনা বলে হিসাব দাখিল করেছেন। মাহমুদুল হাসান তার এই হিসাবে চার মাস মিলে উৎপাদনের জন্য পাট ক্রয় করেছেন ১১ লাখ ১০ হাজার টাকা ।
এই পাট ক্রয় করতে তার হিসাব নিম্ন রুপ:
———————————————
গাড়ী ভাড়া ২৬০.০০০.০০
মোটর সাইকেল ও প্রাইভেট কারের জ্বালানী তেল ১১৮.০০০.০০
ঠিকাদারের সম্মনী ৩১৭.৩০০.০০
পাটের মোকামে যাতায়ত খরচ ১২০,০০০.০০
বায়ারদের পিছনে খরচ [BUYERS] ১৭৬ .০০০.০০
পারিতোষিক খরচ ২০০,০০০.০০
অগ্রিম পাট ক্রয়ের ক্ষতি পূরন ৫০,০০০.০০
ক্রেতাদের নিকট থেকে অগ্রিম অর্ডারের ১৫০.০০০.০০
==============================================
১৩.৯১,৩০০.০০
এব্যাপারে সোনালী জুট মিলের চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী এম এস এমদাদ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি শ্রম অধিদপ্তরের এই ধরনের বৈঠক এবং কমিটি গঠন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, বলেন ,মালিক পক্ষ কি ভাবে মিল পরিচালনা করবে তা তাদের এক্তিয়ার। তিনি মাহামুদুল হাসনের দেয়া হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, বলেন তার সাথে ভাড়াটিয়ার চুক্তি,কিন্তু ভাড়াতো দেয়নি এবং মিলটি পুনাঙ্গ ভাবে চালুও করেনি। বলেন ১১ লাখ দশ হাজার টাকার পাট ক্রয় করতে প্রায় ১৪ লাখ টাকা ব্যয় অবিসাশ্য ব্যাপার। হাইব্রিড এক নেতার ইন্ধনে হাসান ট্রেডার্স এর মাধ্যমে মিলটি দখল করার প্রক্রিয়াই এই হিসাব দেখানো হয়েছে । নিজে নিজেকে সন্মুখ যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে বলেন সরকারের দেয়া ব্যাংক ঋনের ব্লাক সুবিধা নিয়ে তিনি দ্রুত মিলটি পুনাঙ্গ ভাবে চালু করবেন। তবে স্থানীয় একটি মহল তাকে নানা ভাবে বাধা বিঘ্ন সৃষ্টি করছে ।
এ ব্যাপারে ঠিকাদার হাসান ট্রেডার্সএর মহামুদল হাসান জানান সোনালী জুট মিলের চেয়ারম্যান এম এম এমদাদ হোসেন বুলবুল পলাতক টাউট এবং ধরন্ধার ব্যক্তি। তাহেল এমন লোকের সাথে চুক্তি বদ্ধ হলেন কেন ? এমন প্রশ্ন রাখলে বলেন আগে জানতাম না। গাড়ী ভাড়া, গাড়ীর তেল আবার যাতায়াত ভাড়ার দৃষ্টি অকর্ষন করলে তিনি জানান, তার আরো বেশী খরচ হয়েছে । ১১ লাখ টাকা পাট কিনতে ১৪ লাখ টাকা অন্যান্য ব্যায় ? দৃষ্টি আকর্ষন করলে তিনি বলেন প্রথমবার খরচ আরো বেশী হয়েছে । মিলের ভাড়াটিয়া হিসাবে সম্মানী দৃষ্টি আকর্ষন করলে তিনি প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বলেন এক মন্ত্রীর ভাগ্নে পাটের ব্যবসা করে এবং তাকে ৫০ হাজার বস্তা দেবার জন্য তিনি মিলের পক্ষে অগ্রিম টাকা নিয়েছেন।
সুত্র-Tayeb Abu ফেসবুক ওয়াল