মোঃ এনামুল হক :: মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ভূমি নীতিমালা লঙ্গন করে ও কোন ধরণের অনুমতি ছাড়াই পশুর চ্যানেলে পাইলিং দিয়ে ভরাট করে রাস্তা নির্মাণের কাজ করছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এতে মোংলা বন্দরের নেভিগেশন ও রাস্তার দুই পাশের দুইটি এলপিজি ফ্যাক্টরী মারাত্মক দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে। বন্দরের শিল্প এলাকার মাঝ দিয়ে ও পশুর চ্যানেল ভরাট করে এ রাস্তা করতে দেয়ায় নারাজ বন্দর কর্তৃপক্ষও। সেই সাথে দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে এ রাস্তা নির্মাণের বিরোধীতা করে তা অচিরেই বন্ধের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন যমুনা ও ওমেরা এলপিজি ফ্যাক্টরী কর্তৃপক্ষ।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ফদির উদ্দিন জানান, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রেক্ষিতে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে মোংলা বন্দরের শিল্প এলাকার ওমেরা ও যুমনা এলপিজি কোম্পানীর মাঝ দিয়ে রাস্তা নির্মাণ- সম্প্রসারণ ও ফেরি ঘাট স্থাপনার কাজ চলছে। কাজ শুরু প্রথমেই বন্দর কর্তৃপক্ষ তাতে বাঁধা দিলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) এ কাজের বিষয়ে মৌখিক অনুমতি দেয়ায় আবারো কাজ শুরু করা হয়। এখন সেখানে পুরোদমে কাজ চলছে। মুলত বন্দর শিল্প এলাকার অপর পাড়ের বাসিন্দাদের (খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার) খুলনায় সহজ যাতায়াতের জন্যই ফেরি ঘাট নির্মাণ, সংযোগ রাস্তা ও ফেরি চলাচলের জন্য এ প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছেন সওজ মন্ত্রনালয়।
এদিকে বন্দর শিল্প এলাকার ওমেরা ও যমুনা এলপিজি ফ্যাক্টরীর মাঝ দিয়ে এ রাস্তা নির্মাণ না করার জন্য গত সপ্তাহে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম মুসার সাথে সাক্ষাৎ করে অভিযোগ জানিয়েছেন ওমেরা এলপিজির মালিক আজম জে চৌধুরী। তার এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে বন্দর কর্তৃপক্ষও সেখান দিয়ে সওজ’র রাস্তা নির্মাণ ও ফেরিঘাট স্থাপন কাজ বন্ধের নির্দেশনার কথা জানিয়েছেন।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম মুসা বলেন, সওজ বিভাগ বাগেরহাটকে বন্দর শিল্প এলাকার মধ্যদিয়ে এসব স্থাপনা নির্মাণের কোন অনুমতি দেয়া হয়নি। তারা কেমন করে এ কাজ করছে বুঝছিনা। এটি হলে বন্দরের পশুর চ্যানেলের নেভিগেশন ব্যবস্থা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। এছাড়া চ্যানেলের মধ্যে সংযোগ সড়ক ও ফেরিঘাট এবং পল্টুন স্থাপন করলে পশুর নদীর নাব্যতা কমে যাবে। এছাড়া এলপিজি ফ্যাক্টরীগুলোর উপরও দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়বে। তাই কোনভাবেই এখানে এটা করতে দেয়া হবেনা।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ শাহীনুর আলম বলেন, সওজ’র বাগেরহাট নির্বাহী প্রকৌশলী বন্দর শিল্প এলাকার মধ্যদিয়ে রাস্তা নির্মাণের জন্য লিখিত পত্র দিলেও আমরা তা নির্মাণের কোন অনুমতি দেয়নি।
এদিকে ওমেরা ও যমুনা এলপিজি ফ্যাক্টরীসহ তাদের জেটিতে গ্যাস পরিবহনকারী জাহাজে দুর্ঘটনায় আশংকায় এ রাস্তা নির্মাণ বন্ধের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়েও লিখিত অভিযোগ করেছেন ‘এলপিজি অপারেটরস এসোসিয়েশন বাংলাদেশ’। গত ৩০ আগস্ট নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে এটি বন্ধের দাবী জানিয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন ‘এলপিজি অপারেটরস এসোসিয়েশন বাংলাদেশ’র প্রেসিডেন্ট আজম জে চৌধুরী। তিনি বলেন, ওমেরা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড ও যমুনা স্পেসটেক’র মধ্যবর্তী স্থানে যাত্রী পরিবহণের জন্য লাউডোব ঘাট স্থাপনের কাজ করছে সওজ বিভাগ। তাই স্পর্শকাতর এলপিজি প্ল্যান্টের মধ্যদিয়ে এ রকম একটি যাত্রী পরিবহণ ঘাট স্থাপন শুধুমাত্র এই দুইটি প্ল্যান্টেরই নয়, সমস্ত মোংলা বন্দরের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। তাছাড়াও এলপিজি পরিবহনকারী বিদেশী জাহাজও এ যাত্রী পরিবহণ ঘাট স্থাপনে আপত্তি উত্থাপন করেছেন। এছাড়া ঘাট নির্মাণের কারণে তৎসংলগ্ন এলপিজি ফ্যাক্টরীর জেটিসহ পশুর নদীতে নাব্যতা হ্রাস পাবে। তাই এসব বিষয়াবলী বিবেচনা করে ঘাটটি (লাউডোব) অন্যত্র স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ সকল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।
তবে সওজের বাগেরহাট নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ফরিদ উদ্দিন বলেন, সম্ভাব্য এ ঝুঁকির সম্মুখীনের বিষয়টি বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টরা মন্ত্রণালয়ে উত্থাপন করলে মন্ত্রণালয়ই পরর্বতী সিদ্ধান্ত নিবেন এখানে ফেরি চলাচল করবে না বন্ধ থাকবে। আমি এখন যেটি করছি আমার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রেক্ষিতে কাজ করছি, সুতরাং এসকল ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে ফেরি চলাচল বন্ধ কিংবা চলার সিদ্ধান্ত দিবেন মন্ত্রনালয়।