চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর শ্রীলঙ্কা সিরিজ, কোচ নিয়ে টানাপোড়েন, পরের বিশ্বকাপের জন্য আগাম প্রস্তুতিসহ নানাবিধ বিষয় নিয়ে এখন আলোচনার মূলে বাংলাদেশ ক্রিকেট। এরই মধ্যে খালেদ মাহমুদ সুজনকে অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে চূড়ান্ত করেই রাত পোহালেই লঙ্কানদের উদ্দেশ্যে উড়াল দেবে টাইগার বাহিনী। আজ সিরিজ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে মুখোমুখি হয়েছেন টাইগারদের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা ও কোচ সুজন।
লঙ্কান সিরিজের আগে টাইগার দলের অবস্থা, সাকিবের অনুপস্থিতি ও অবসর ভাবনা ও বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন দু’জন। সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য দেয়া হলো।
প্রশ্ন: আপনার শারীরিক অবস্থা কেমন এখন? সাকিবকে ছাড়া দল নিয়ে ভাবনা…
ম্যাশ: দুই দিন অনুশীলন করেছি, সমস্যা হয়নি। আশা করি ইনশাআল্লাহ সব ঠিকঠাক আছে এখন পর্যন্ত। আর সাকিবের যেটা হচ্ছে যা, অবশ্যই বিশ্বকাপেরই অন্যতম সেরা পারফরমার। সম্ভবত সেরা পারফর্মারও সে ছিল। তাকে ছাড়া অবশ্যই টিমের সবদিক সব সময় চিন্তা করতে হতো। এখন হয়তো বা একই জিনিস হবে। দুইটা দিকই চিন্তা করতে হবে। বিগ লস। আমার কাছে মনে হয় যে, এখন যারা আছে তাদের ওপরও আস্থা রাখতে হবে। এবং আশা করি, তারাও তাদের সেরাটা চেষ্টা করবে।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপের পর শ্রীলঙ্কা সিরিজ, ইনটেন্সিটি কতটা থাকবে, সিরিজ কতটা গুরুত্বপূর্ণ হবে?
ম্যাশ: ইনটেন্সিটি চিন্তা করলে অবশ্যই বিশ্বকাপের সাথে সিরিজের অনেক পার্থক্য থাকে। প্রফেশনাল টিম হিসেবে এগুলো অবজার্ভ করতে হবে। আমাদের পেক্ষাপটে এগুলো চিন্তা করা খুব কঠিন। কারণ, যেহেতু আমাদের রেজাল্ট ভালো হয়নি বিশ্বকাপে। ওই জায়গায়টা আমাদেরও চিন্তার জায়গা আছে। আমাদের খুব বেশি চিন্তাভাবনা হয় এগুলো নিয়ে। আমাদের একটা সুযোগ আছে যে, আবার পজিটিভ দিকে আসার। আশা করি সবার সেই মানসিকতা আছে। সেখানে ভালো খেলে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারব।
প্রশ্ন: সিরিজটা কেমন হবে বলে আশা করছেন?
ম্যাশ: আমার কাছে মনে হয়, দুই দলই ইকুয়ালি থাকবে। কারণ, যেহেতু তারা হোমে খেলছে। হোমে তারা সব সময় ভালো খেলে। একই সাথে তাদের যে টিমটা আছে, তারা একসাথে অনেক দিন ধরে খেলছে। তাদের জায়গা থেকে তারা ব্যালেন্সড। আর ওদেরও বিশ্বকাপে ভালো কিছু স্মৃতি আছে, ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে, কিছু ম্যাচ ওরা খুব ভালো খেলেছে। আর নিদাহাস ট্রফির পর থেকে একটা উত্তেজনা সব সময় কাজ করে অন ফিল্ডে। এটাও কাউন্ট হয় অনেক সময়। সবকিছু মিলে আমার মনে হয়, কারও জন্যই সহজ হবে না। নির্দিষ্ট দিনে যারা ভালো খেলবে তারাই জিতবে। তবে আমি বলব, দুইটা দলই ইকুয়ালি শুরু করবে।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপের পর আরেকটা বিশ্বকাপ…
আমার কাছে মনে হয় যে, চার বছর অনেক সময়। কিছু খেলোয়াড় তৈরি করা ছাড়া… এখন যারা আছে, আমি ছাড়া মাক্সিমাম পরের বিশ্বকাপে খেলার সামর্থ্য রাখে। আমার কাছে মনে হয়, এই জাতীয় দল থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ অনূর্ধ্ব-১৯ বা এ দলের দিকে বেশি ফোকাস করা। কারণ, পরের চার বছরে যদি আমরা ভালো করতে চাই, অবশ্যই এখন থেকে কিছু খেলোয়াড় বেরিয়ে আসতে হবে। তারা যেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে স্ট্যাবিলিটি পায়, সেই জায়গা তৈরি করে দিতে হবে। অন্যথায় সব সময় একটা দলের দিকে ফোকাস থাকলে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সারভাইব করা কঠিন। এখন সাকিব নেই দলে, তার মানে দুইটা অপশনই খুঁজতে হবে। এটা দারুণ সুযোগ সাকিব খেলছে না যে যাবে তার জন্য। একই সাথে অনূর্ধ্ব-১৯, এ টিম, এইচপিকে ফোকাস করা, যদি আপনি পরের বিশ্বকাপে ভালো করতে চান।
প্রশ্ন: সিনিয়রদের বিশ্রাম দিয়ে তরুণদের সুযোগ দেওয়া যেত কি না?
ম্যাশ: আপনারা যেটা বলছেন, বিশ্বকাপের চিন্তা এখন কেউ ভুলতে পারছে না, এবং সরাসরি বিশ্বকাপে যাওয়া কঠিন। এই সিরিজগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওই ইন্টারন্যাশনাল লেভেলে তৈরি করার জন্য কিছু সময় লাগবে। বিশ্বকাপের আগে এবং বিশ্বকাপের পরে আমার মনে হয় না অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়েছে, বাইরে কিছু তরুণ খেলোয়াড়কে খেলাতে হবে। যদি সেরকম থাকতো তাহলে বিশ্বকাপেই তাদের নিয়ে যাওয়া যেত, যদি একসেপশনাল কেউ বের হতো। এখন সময় যেটা পরের বিশ্বকাপের আগে হয়তো বা পরের এক বছর কিংবা দুই বছরে কিছু খেলোয়াড় যদি আমাদের ওখান থেকে তৈরি করা যায়; তাহলে হয়তো বা তারা পরের দুই বছর যদি খেলতে পারে, তাহলে হয়তো পরের বিশ্বকাপে তারা খুব ভালো সার্ভিস দিতে পারে। এখন আমার কাছে মনে হয় যে, বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য এই সিরিজ জেতাটা জরুরি। এটাও মাথায় রাখতে হবে।
প্রশ্ন: শেষ বিদেশ ট্যুর কি না…
ম্যাশ: যে যেরকম ভাবে নেবে। আমারটা আমি এখনো ওভাবে বলতে পারছি না। কারণ চিন্তা করিনি এখনো কিছু। খেলতে যাচ্ছি, ওখানে খেলারই চিন্তা করছি। আর এরপর অনেক দিন খেলাও নেই, এটাও একটা ব্যাপার। সেরকম কিছু হলে আসার পর চিন্তা করব। হয়তো বা আপনাদের কাছে এটা একটা নিউজ, আমার কাছে হয়তো বা এটা না, আমার কাছে অনেক কিছুই। আমার কাছে এই খেলাটা ছাড়া অনেক কিছুর একটা ব্যাপার। সুতরাং অবশ্যই আমাকে একটু সময় নিয়ে চিন্তা করতে হবে। শ্রীলঙ্কা লাস্ট ট্যুর এটা বলতে পারি। যেহেতু আর খেলা নাই। শ্রীলঙ্কা অবশ্যই শেষবারের মতো যাচ্ছি, বিশ্বকাপের মতোই বলছি। আসার পরে হয়তো একটু সময় পাব, সময় নিয়ে চিন্তা করে… যেটা বললাম আপনাদের কাছে হয়তো বা একটু লেখালিখি করলেই শেষ, আমার কাছে হয়তো বা তা না। তো দেখা যাক।
প্রশ্ন: বোলিং নিয়ে দুশ্চিন্তা…
ম্যাশ: সামনের বিশ্বকাপ মাথায় রেখে আমাদের স্পিন বোলিং বা লেগ স্পিনে আমাদের নজর দিতে হবে। এখন এগুলো খুঁজে বের করার সঠিক সময়। অবশ্যই পেস বোলিং নিয়ে চিন্তা ছিল। সাইফউদ্দিন-মুস্তাফিজ শীর্ষ পাঁচ-ছয়ে আছে। মুস্তাফিজ শীর্ষ পাঁচেই আছে। আমার জায়গাটা দল অবশ্যই সাফার করছে। আমি যেহেতু নতুন বলে অপারেট করি। তাঁরা নতুন বলে অপারেট করি না। আমি যদি এই জায়গায় নতুন বলে দুই একটা ব্রেক থ্রু দিতে পারতাম তাহলে দলের পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারতো। আমার মনে হয় এই দুটি জায়গায় দল স্ট্রাগল করেছে। বাকি যারা আছে তাঁরা অবশ্যই পারফর্ম করেছে। টিমের যদি চারজন কনসিস্টেন্ট পারফর্মার থাকে তাহলে সাকিব-মুশফিক,সাইফউদ্দিন-মুস্তাফিজ। এরা ছাড়াও অনেকে পারফর্ম করেছে। আমি মনে করি আমরা ভালোই পারফর্মেন্স করেছি। যেহেতু তিনজন ছিল। দুজন এক্সট্রা অর্ডিনারি পারফর্মেন্স করেছে। অন্য যারা আছে তাঁরা যেটা করতে পারতো তাঁর চেয়ে বেশিই করেছে।
প্রশ্ন: কোচ হিসেবে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে কি না, আর বিশ্বকাপের পর বিসিবির রিভিউ হয়েছে কি না…
সুজন: ছোট আলোচনা হয়েছে, যেটা বোর্ড মিটিংয়ে এখনো হয়নি। সেটাতে অবশ্যই একটা ডিরেকশন ছিল যে, পরের বিশ্বকাপ চার বছর যেহেতু সময় আমাদের লং টার্ম একটা পরিকল্পনা করতে হবে। তবে টু আর্লি, কারণ আমাদের যেহেতু বিশ্বকাপের পর আইসিসির মিটিং চলছে। প্রেসিডেন্টরাও এখনো ফিরে আসেননি ইংল্যান্ড থেকে। এটা তো বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা হয় আসলে। বোর্ড তো এখনো মিটিং করতে পারেনি বলে এখনো আলোচনা হয়নি। তবে মাশরাফি যেটা বলল যে, চার বছর অনেক সময়। এই সফরটা অল্প সময়ের মধ্যেই যেহেতু হচ্ছে, নতুন খেলোয়াড়দের বিবেচনা করার সময়টা হয়তো হয়নি। আর এই সফরটা আমার কাছে মনে হয় বিশ্বকাপের পর খুবগুরুত্বপূর্ণ। আগামী চার বছরে একটা মাস্টার প্লান তো করাই হবে। এর মধ্যে অনেকগুলো বিশ্বকাপই আমরা খেলব- দুইটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, একটা চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আছে, বিশ্বকাপ আছে। সুতরাং এগুলো মাথায় নিয়ে ভবিষ্যৎ তৈরি করার ক্ষেত্রে বা খালি খেলোয়াড় তৈরি করা না, আমাদের পাইপলাইনটা শক্ত করার জন্য। কারণ লম্বা সময় আমাদের প্রচুর খেলা খেলতে হবে, টেস্ট ম্যাচ আছে টি-টোয়েন্টি আছে, ২০২১ এর পর থেকে মনে হয় অনেক ওয়ানডেও আছে একসাথে। যেটা হয় যে ইনজুরি অনেক সময় সমস্যা তৈরি করে, ব্যাকআপ খেলোয়াড় তৈরি করে রাখাটা তাই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং আমাদের এ টিম, এইচপির দিকে নজর রাখতে হবে।
প্রশ্ন: আর…
আর আমার ব্যাপারটা আকরাম ভাই যেহেতু ক্রিকেট অপারেশনের চেয়ারম্যান, বোর্ডে কেউ নাই এখন, আমাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে এই ট্যুরটার জন্য আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন। আমি নিজেও বলেছিলাম আমি করতে চাই না যদিও ছোট সময়ের জন্য। ছোট সময়ে পরিকল্পনা করা যায় না। বোর্ডের এখন একটা ক্রাইসিস আমি বলব, কোচ ম্যানেজমেন্ট করার জন্য আমরা ভালো কাউকে পাচ্ছি না। বোর্ডের দিকে তাকিয়ে কিংবা ক্রিকেটের দিকে তাকিয়ে, যেহেতু আমি টিমের সাথে পাঁচ বছর ধরেই আছি। টিমকে সাপোর্ট করা, এটাই এখন আমার দায়িত্ব। হয়তো ম্যানেজার ছিলাম, সেখান থেকে একটা অন্য দায়িত্ব। মাঠে যেহেতু থাকতে হয়, আর আমার পেশা যেহেতু কোচিং। এটা আমার জন্য আনন্দের ব্যাপার, চ্যালেঞ্জেরও।