রাজধানীর পল্লবীর দিয়াবাড়ি এলাকায় মেট্রোরেলের পিলারসংলগ্ন লেকপাড় থেকে শিশুর লাশ উদ্ধারের ঘটনার নেপথ্যের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরকীয়ার বলি হয়েছে ছয় মাস বয়সী আমেনা। শিশুটির কান্নাকাটির কারণে তার মা ও কথিত প্রেমিকের অন্তরঙ্গ মুহূর্তে ব্যাঘাত ঘটে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা শিশুটিকে প্রথমে স্যুপের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে অচেতন করে। পরে বালিশ চাপা ও গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে আমেনাকে।
হত্যাকাণ্ডের এক মাসের মাথায় শনিবার (৪ জানুয়ারি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এ ঘটনায় জড়িত শিশুটির মা ফাতেমা বেগম ও তার প্রেমিক মো. জাফরকে শুক্রবার গভীর রাতে পল্লবী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ফাতেমা আজ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। জাফরকে ছয় দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পল্লবী থানা পুলিশ।
ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, গত ৬ ডিসেম্বর বিকেল সোয়া ৩টার দিকে দিয়াবাড়ির লেকপাড় থেকে একটি ব্যাগের মধ্যে কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায় শিশুর মৃতদেহ পাওয়া যায়। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় পুলিশ দেখতে পায়, মৃতের গলায় সন্দেহজনক আঘাতের দাগ। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পল্লবী থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে।
তিনি জানান, তদন্তের একপর্যায়ে শিশুটির নাম-পরিচয় ও বয়স জানতে পারে। এরপর গোপন তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার গভীর রাতে পল্লবী এলাকা থেকে শিশুটির মা ফাতেমা বেগমকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন, নিবিড় তদন্ত ও ফাতেমাকে জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হন, জাফর নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে শিশুটির মায়ের পরকীয়া রয়েছে। এর জের ধরেই শিশু হত্যার ঘটনা ঘটে। ওই রাতেই জাফরকে গ্রেপ্তার করে পল্লবী থানা পুলিশ।
তালেবুর রহমান আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তার দুজনই বিবাহিত এবং পল্লবী এলাকায় বসবাস করেন। জাফর একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। ফাতেমা আগে ওই কারখানায় কাজ করার সুবাদে জাফরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ফাতেমার স্বামী গ্রিল মেকানিক হিসেবে কাজ করায় অনেক সময় তাকে কর্মসূত্রে বাসার বাইরে থাকতে হয়। এই সুযোগে তারা দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়ায় লিপ্ত। গত ৫ ডিসেম্বর রাত ৮টায় জাফর অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর উদ্দেশ্যে ফাতেমার বাসায় যান। ওই সময় শিশুটি কান্নাকাটি করলে তারা বিরক্ত হন। এ কারণে তারা শিশুটিকে নির্মমভাবে হত্যার পর বিছানার চাদর দিয়ে লাশ মুড়িয়ে কাপড়ের শপিং ব্যাগের ভেতর ঢোকায়। শেষে জাফর শপিং ব্যাগে করে লাশটি নিয়ে মেট্রোরেলের একটি পিলারের কাছে ফেলে আসে।