অপরাধে জড়ানো পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ফৌজদারি মামলাও দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যাপারে পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ।
রবিবার দেশের পুলিশ সদস্যদের পদমর্যদাভিত্তিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
আইজিপি বলেন, পুলিশ সদস্যদের মধ্যে কেউ কোনো অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইচ্ছা করলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে পারতাম, ইচ্ছা করলে ঘায়ে ব্যান্ডেজ করতে পারতাম। কিন্তু আমরা এর মধ্যে নেই, এসব একেবারে ক্লিন করতে চাচ্ছি। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ফৌজদারি মামলা দেওয়া হচ্ছে।
এসময় আইজিপি জানান, ভারতে গ্রেপ্তার বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানাকে বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় দেশে ফেরত আনা সম্ভব। তাকে ফেরত আনতে পুলিশের তরফে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
গ্রাহকের এক হাজার কোটি টাকার বেশি আত্মসাতের অভিযোগে কারাগারে থাকা ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিনের আপন ভাই সোহেল রানা। তিনি ই-অরেঞ্জের মূল প্রতিষ্ঠান অরেঞ্জ বাংলাদেশের সভাপতি। গত শুক্রবার কোচবিহার জেলার চ্যাংরাবান্ধা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে তিনি আটক হয়েছেন।
কোচ বিহারের সংবাদ মাধ্যম উত্তরবঙ্গ সংবাদ জানিয়েছে, অবৈধভাবে সীমান্ত টপকে প্রবেশের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করেছে বিএসএসএফ।
সোহেল রানা পালিয়ে ভারত গিয়ে আটক হওয়ায় তাকে ফেরত আনা যাবে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের এগ্রিমেন্ট (বন্দিবিনিময় চুক্তি) রয়েছে। দেশেও সেই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আসামি হিসেবে তাকে ফেরত আনা যাবে বলে আমি মনে করি। এ বিষয়ে পুলিশের তরফে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সোহেল রানা যদি কোনো অপরাধ করে থাকেন তাহলে আইন অনুযায়ি তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
পুলিশের চাকরিরত অবস্থায় পরিদর্শক সোহেল রানা কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে পারেন কী না এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে আইজিপি সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশে চাকরির একটা বিধি আছে। তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোহেল রানা কীভাবে দেশ ত্যাগ করলেন, এতে কারও গাফিলতি রয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান আইজিপি। বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ বিষয়টি তদন্ত চলছে।
এর আগে পুলিশের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে আইজিপি বলেন, আজকের দিনটি প্রশিক্ষণের দিক থেকে পুলিশের জন্য একটি বিশেষ দিন। আজ পুলিশ নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন প্রতিটি পুলিশ সদস্যকে বছরে যেন অন্তত একবার প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়। আমরা সেই লক্ষ্যে পুলিশের ২ লাখ ১২ হাজার সদস্যকে বছরে একবার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। প্রতি সপ্তাহে প্রতি ব্যাচে আমরা ৪ হাজার ৩১৯ জন সদস্যকে প্রশিক্ষণ দিতে পারবো। সে হিসেবে এ বছরে ১৪ সপ্তাহে ৬০ হাজার ৬৬৬ জনকে প্রশিক্ষণ দিতে পারবো। সামনের বছর থেকে বছরব্যাপী এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চলমান থাকবে। পুলিশের সকল সদস্যকে প্রশিক্ষণ দিতে ৪৮ সপ্তাহ প্রয়োজন। কনস্টেবল থেকে অতিরিক্ত আইজি পদমর্যাদার প্রত্যেক পুলিশ সদস্যের বছরে এক সপ্তাহ প্রশিক্ষণ প্রাপ্তির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হয়েছে।
এএসপি এবং তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি (বিপিএ) সারদায়, সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ বিপিএ, টিডিএস, টিটিএস, এসটিএস, পিএসটিএস সকল পিটিসি ও ডিএমপি ট্রেনিং একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হবে।
কনস্টেবল, নায়েক এবং এএসআই পর্যায়ের প্রশিক্ষণ ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের তত্ত্বাবধানে দেশের ১০৮টি পুলিশ ইউনিটের প্রশিক্ষণ ৫৫টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে।
বিপিএ, পিটিসি, সকল ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারসহ দেশের ১০৫টি পুলিশ ইউনিটের সকল পদমর্যাদার প্রশিক্ষণ একযোগে শুরু হবে, যা সারা বছর চলবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এইচআরএম) মাজহারুল ইসলাম। এছাড়াও পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।