মোঃ এনামুল হক,মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধিঃ সুন্দরবনে জেলেদের হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করে জোর পূর্বক চাঁদা আদায়ের পর অবশেষে সেই চাঁদার টাকার অর্ধেকের বেশি ফেরত দিলেন বনবিভাগের ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকতার্) রবিউল ইসলাম। জেলেদের কাছ থেকে নেয়া ৮৮ হাজার টাকার মধ্যে গত সোমবার ৬০ হাজার টাকা ফেরত দেন পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের ভদ্রা ক্যাম্পের ওসি রবিউল ইসলাম। সোমবার খুলনায় বনবিভাগের বয়রাস্থ বন সংরক্ষকের কার্যালয়ের নিচে বসে মোংলার চাঁদপাই বন ব্যবস্থাপনা কমিটির (সিএমসি) সদস্য ওবায়দুলের মধ্যস্থতায় ওসি রবিউল ওই টাকা ফেরত দেন। নির্যাতনের শিকার জেলে নির্মল, আলআমিন ও আলমগীর মঙ্গলবার দুপুরে টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এছাড়া বনবিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছেও এই স্বীকারোক্তি দেন ভুক্তভোগী জেলেরা।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারী ও ১লা মার্চ এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর ২ মার্চ ওসি জেলেদের ডেকে টাকা ফেরত দেন।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারী ফরেস্ট ক্যাম্পে হাত-পা বেঁধে পায়ের পাতায় পিটিয়ে চাঁদা স্বরুপ জেলে ইয়াসির সর্দারের কাছ থেকে ৩০ হাজার, শ্যামল সর্দারের কাছ থেকে ৩০ হাজার, নির্মল রায়ের কাছ থেকে ৪০ হাজার এবং রমেশের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা জোর করে নেয় ওসি রবিউল। ওই সময় জলদস্যুদের হাতে জিম্মি আছে বলে এসব জেলেদের বাড়ীতে ফোন করিয়ে টাকা আনিয়ে তা হাতিয়ে নেয় ওসি। তবে সেই সময়ে ওসি রবিউল দাবি করেছিলেন, তিনি কোন জেলেকে আটক ও নিযার্তন করেনি, এমনকি কোন টাকাও নেননি।
এদিকে মঙ্গলবার এসব কর্মকান্ডের বিষয়ে জানতে পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের ভদ্রা ক্যাম্পের ওসি রবিউল ইসলামের মোবাইল ফোনে (বন্ধ পাওয়া যায়) যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তবে পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মোঃ সোহাগ সালেহ বলেন, জেলেদের কাছ থেকে পুরো ঘটনা শুনেছি, টাকা ফেরত দেওয়ার ঘটনাতেই মনে হচ্ছে ভদ্রা ক্যাম্পের ওসি রবিউলের বিরুদ্ধে উত্থাপতি অভিযোগ সত্য। এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে বন আইনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আর পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ বশির আল মামুন বলেন, তদন্ত করে ওসি রবিউলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ২১ ফেব্রুয়ারী পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই ষ্টেশন ও ঢাংমারী ষ্টেশন থেকে বনের অভ্যন্তরীণ খালে সাদা মাছ ধরার জন্য পাশ পারমিট (বনবিভাগের অনুমতিপত্র) নিয়ে পাঁচটি নৌকাসহ এ সকল জেলেরা মাছ ধরতে যান। পরে পশ্চিম সুন্দরবনের ভদ্রা ক্যাম্পের ওসি রবিউল এবং ওই ক্যাম্পের ট্রলার মাঝি বাদশা তাদের ১০জন জেলেকে ধরে নিয়ে ক্যাম্পে আটকে রাখেন। অবৈধভাবে বনের ভিতরে মাছ শিকারের অজুহাত দেখিয়ে তাদের কাছে ওসি রবিউল দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু জেলেরা তাদের বনবিভাগ প্রদত্ত বৈধ পাশ পারমিট দেখালে তাতে আরো ক্ষীপ্ত হন ওসি। ওই সময় জেলেদের পাঁচটি নৌকায় থাকা প্রায় সাড়ে তিন মণ কোরাল, কাইন ও জাবাসহ কয়েক প্রজাতির সাদা মাছ ওসি রবিউল লুটে নেয় বলেও জেলেরা অভিযোগ করেন। এছাড়া ওসি গত ২৫ ফেব্রুয়ারী ওসির ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বরে দুপুর ২ টা ৩১ মিনিটে ১৫ হাজার এবং ২ টা ৩৬ মিনিটে আরেকটি বিকাশ নম্বরে ১২ হাজার ২৫০ টাকা নেন। ওসির চাহিদা অনুযায়ী ৮৮ হাজার টাকার মধ্য থেকে বাকী টাকা ভদ্রা ক্যাম্পের ট্রলার মাঝি বাদশার স্ত্রীর মাধ্যমে নেন বলেও জেলেরা জানান।