চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ ঘুষ কেলেঙ্কারি মামলার আসামি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে অবশেষে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ সোমবার রাত সোয়া ১০টার দিকে মিরপুরের দারুসসালাম এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন দুদকের উপ-পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য।
এর আগে বাছিরকে গ্রেপ্তার করতে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম রাজধানীর শাজাহানপুর ও আজিমপুরে তিন দফা অভিযান চালিয়েছিল।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, ৪০ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেনের ঘটনায় বাছিরসহ পুলিশের বিতর্কিত ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে গত ১৬ জুলাই মামলা দায়ের করা হয়। ফরেনসিক পরীক্ষায় ঘুষ লেনদেন নিয়ে তাদের কথোপকথনের অডিও’র সত্যতা পাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করা হয়।
পুলিশের বিতর্কিত ডিআইজি মিজানুর রহমান মিজানের জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধান কর্মকর্তা ছিলেন খন্দকার এনামুল বাছির। মিজানের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার ঘটনায় ফেঁসে যান তিনি।
২০১৭ সালে অভিযোগ উঠলেও ২০১৮ সালে জানুয়ারিতে ডিআইজি মিজানের সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। তদন্তের শুরুতে মিজানের সম্পদ অনুসন্ধানের দায়িত্বে ছিলেন দুদক উপ-পরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী। এই ফরিদের বিরুদ্ধেও ঘুষ দাবির অভিযোগ করেছিলেন মিজান। পরে ফরিদকে বাদ দিয়ে এই মামলা তদন্তে বাছিরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠার পর বরখাস্ত হন বাছির। পরে মিজানের সম্পদ অনুসন্ধানের দায়িত্ব পান দুদক পরিচালক মনজুর মোরশেদ।
গত ৯ জুন মিজান-বাছিরের ঘুষ লেনদেনের কথোপকথনের একাধিক অডিও প্রকাশ করেন স্বয়ং মিজান। এ বিষয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রতিবেদনও প্রচার হয়। মিজান দাবি করেন, দুদকের মামলা থেকে বাঁচতে বাছিরকে দুই দফায় (২৫ লাখ ও ১৫ লাখ) টাকা ঘুষ দিয়েছেন।
এরপর ৯ জুন এর অডিও প্রকাশের ঘটনা অনুসন্ধানে দুদক সচিব দিলোয়ার বখতকে আহবায়ক করে তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন হয়। এই কমিটির সুপারিশে তথ্য ফাঁসের অভিযোগ এনে ১০ জুন বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করে দুদক।
এরপর ১১ জুন বাছির দাবি করেন ঘুষ লেনদেনের কথোপকথনে ব্যবহৃত কণ্ঠ সম্পূর্ণ বানোয়াট। ১২ জুন মিজানের সম্পদ অনুসন্ধানের দায়িত্ব পান দুদক পরিচালক মনজুর মোরশেদ। পরবর্তীতে মিজান-বাছিরের ঘুষ লেনদেনের (অডিও প্রকাশ) ঘটনায় দুদকের অনুসন্ধান কমিটি গঠন হয় ১৩ জুন। তিন সদস্যের অনুসন্ধান কমিটির প্রধান হলেন দুদক পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যা।
অন্য দুই সদস্য হলেন-সহকারী পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান ও মো. সালাউদ্দিন। গত ১৬ জুন মিজান-বাছিরের ঘুষ লেনদেনের কথোপকথনের অডিও ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারে (এনটিএমসি) পাঠায় দুদক। ২৫ জুন মিজানকে সাময়িক বরখাস্ত করার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ২৬ জুন বাছিরের বিদেশ সফরে নিষেধাজ্ঞা দেয় দুদক। মিজানের আর্দালি সুমনকে ২৬ জুন জিজ্ঞাসাবাদ করে অনুসন্ধান কমিটি।
ঘুষ লেনদেনের নতুন অডিও প্রকাশের ঘটনার সূত্র ধরে ৩০ জুন দুদকের সাবেক পরিচালক আব্দুল আজিজ ভুঁইয়া ও জায়েদ হোসেন খানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অনুসন্ধান কমিটি। ১ জুলাই অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে হাজির হননি বাছির। বাছিরকে দ্বিতীয় দফায় ১ জুলাই নোটিশ পাঠিয়ে ১০ জুলাই দুদকে হাজির হতে বলা হয়।
১ জুলাই বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ মিজানের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করেন। ২ জুলাই পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করলে ঢাকা মহানগর সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েস তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ঘুষ লেনদেন নিয়ে মিজান-বাছিরের অডিও সংলাপের ফরেনসিক প্রতিবেদন দুদকে জমা হয় ৪ জুলাই।
অডিও সংলাপের কণ্ঠ পরীক্ষা করে এনটিএমসি। পরীক্ষায় প্রমাণিত হয় মিজান-বাছির ঘুষ লেনেদেন নিয়ে কথা বলেছেন। গত ১০ জুলাই দুদকে হাজির না হয়ে আইনজীবীকে দিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠান বাছির। ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগ অনুসন্ধানে মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ জুলাই আদালতে আবেদন করেন দুদক পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যা।
শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েস ১৫ জুলাই জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। ১৪ জুলাই বাছির আবারও নোটিশ পাঠায় দুদক। এবার ১৭ জুলাই সরাসরি দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সামনে হাজির হতে বলা হয়। ১৫ জুলাই কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অনুসন্ধান কমিটির প্রধান দুদক পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যা। ১৬ জুলাই মিজান-বাছিরের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। ১৭ জুলাই অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে দুদকে হাজির হওয়া থেকে বিরত থাকেন বাছির।