অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনা আর গুজব হটিয়ে জীবন্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরেছেন মৌয়াল সিরাজুল সরদার। তিনি খুলনার কয়রা উপজেলার গোবরা গ্রামের বাসিন্দা। গত ১ এপ্রিল সুন্দরবেন মধু সংগ্রহের জন্য সুন্দরবনে যান তিনি। এ অবস্থায় রোববার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাঘের আক্রমনে তার নিহত হওয়ার ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার কয়েকটি পত্রিকায় বাঘের হামলায় মৌয়াল সিরাজুল নিহত হয়েছেন এমন খবর প্রকাশিত হয়। অবশেষে সব খবরকে অসত্য প্রমানিত করে বুধবার স্বশরীরে ফিরে এসেছেন তিনি। মৌয়াল সিরাজুল সরদার বলেন, ‘আমি জানতাম না আমার মৃত্যুর খবর পেপারে ছাপা হয়েছে। মেয়াদ শেষে ফরেষ্ট স্টেশনে পাশ সমর্পন করতি আসলি তারা আমাকে দেখে কানাঘুষা শুরু করে। পরে তাদের মাধ্যমে আসল ঘটনা জানতি পারি।
এখানকার আনুসাঙ্গিক কাজ সেরে বাড়িতে ফিরবো। এদিকে মৌয়াল সিরাজ সরদার ফিরে এসেছেন শুনে তার কাছের ও দুরের আত্মীয় স্বজনরাও ভীড় জমিয়েছেন বাড়িতে। গ্রামের মানুষ ছাড়াও আশপাশের মানুষও কৌতুহল মেটাতে দল বেঁধে উপস্থিত হচ্ছেন ওই বাড়িতে। মানুষের ভীড়ে সিরাজ সরদারের ছোট্ট বাড়িটি এখন কানায় কানায় পরিপূর্ন অবস্থা।
আত্মীয় স্বজনের অনেকেই কান্নাকাটি করতে দেখা গেছে। গ্রামের অনেকেই যারা ফেসবুকে সিরাজ সরদারের মৃত্যুদেহ উদ্ধারের বিষয়ে পোস্ট দিয়েছিলেন তারাও তা মুছে ফেলেছেন। সিরাজ সরদারের বড় মেয়ে সেলিনা খাতুন জানায়, রোববার তারা খবর পান তাদের বাবার নৌকায় বাঘের হামলা হয়েছে। খালেক নামে গ্রামের এক ব্যাক্তি এ খবর ছড়ায়। খালেকের বাবাও মধু সংগ্রহে সুন্দরবনে গেছে। যে কারনে খবরটির গুরুত্ব দেয় স্থানীয় মানুষ। এ খবর বন বিভাগকে জানালে তারা সেখানে উদ্ধারকারি দল পাঠায়। এদিকে গ্রাম থেকে একটি দল সুন্দরবনে চলে যায় খবর নিতে। এর মধ্যে সোমবার দুপুরের পর ফেসবুকে তার বাবার মৃতদেহ উদ্ধার করে বাড়ি আনার খবর ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই ফেসবুকের ছড়িয়ে পড়া খবরটিকে গুরুত্ব দিয়ে সংবাদপত্রেও ছেপেছেন। অথচ এ বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। তবে বন বিভাগের স্টাফরা তাদের বাড়ি গিয়ে পরিবারের সান্তনা দেওয়ার পাশপাশি সার্বিক খোজ খবর নিয়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য আঃ গফ্ধসঢ়;ফার ঢালী বলেন, মানুষ গুজব ছড়িয়ে একটি পরিবারকে কোথায় নিতে পারে তার বাস্তব উদারণ সিরাজ সরদারের পরিবারটি। গত কয়েকদিন ধরে তার স্ত্রী ছেলে মেয়েদের কান্নাকাটিতে এলাকার আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছিল। বাবার মৃতের খবর শুনে তার লাশটি উদ্ধারের জন্য মানুষের কাছে ধর্না দিয়েছিল তারা। গত দু’দিনে না খেয়ে শুকিয়ে গেছে তার স্ত্রী ও সন্তানরা। তিনি গুজব রটনাকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন। সুন্দরবনের কোবাদক ফরেষ্ট স্টেশন কর্মকর্তা নাসির উদ্দীন বলেন, বাঘের হামলায় মৌয়াল সিরাজ সরদারের মৃত্যুর খবরে সংবাদপত্রে আমার উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে। যা আদৌ সঠিক নয়। তবে এ কয়েকদিনের গুজবে অনেককেই হয়রানি হতে হয়েছে। এ ধরনের গুজব রটানাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।