আইনি জটিলতার কারণে ২৫ দিন মর্গে পড়ে থাকার পর অবশেষে চাকমা কিশোরী লাকিংমে চাকমার লাশ বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে সোমবার বিকাল ৩টার দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গ থেকে লাশটি হস্তান্তর করে তদন্তকারী সংস্থা র্যাব। আর র্যাবের কাছ থেকে লাকিংমে চাকমার লাশ বুঝে নেন পিতা-মাতা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে র্যাব-১৫ এর উপ-পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অর্জুন চৌধুরী বলেন, লাশটি দুটি পক্ষ দাবি করে আসছিল। একপক্ষ তার স্বামী পরিচয়দানকারী এক ব্যক্তি; অপরপক্ষ তরুণীর পিতা-মাতা। যে কারণে এটা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। পরে বিষয়টি তদন্তের জন্য র্যাবকে নির্দেশ দেন আদালত। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়া হয়। পরে আদালতের নির্দেশে বাবা-মায়ের কাছে লাশটি হস্তান্তর করা হয়।
তিনি আরও বলেন, তদন্তে প্রমাণিত হয় নিহত লাকিংমে চাকমার বয়স ১৬ বছর। প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় আইনমতে আদালত তার লাশটি পিতা-মাতার কাছে হস্তান্তর করতে নির্দেশ দেন।
লাকিংমের পিতার নিয়োগকৃত আইনজীবী মো. মহিউদ্দিন জানান, যেহেতু সে অপ্রাপ্তবয়স্কা ছিল, সেহেতু তার ধর্মান্তরিত কিংবা বিয়ে করার মতো নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনো আইনি অধিকার সৃষ্টি হয়নি। ফলে তার পিতাই মেয়ের লাশের দাবিদার। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দাখিলকৃত প্রতিবেদনের ফলে পিতা-মাতাকে লাশ হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
লাকিংমের পিতা লালা অং অভিযোগ করে বলেন, ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শিলখালী চাকমাপাড়ার নিজ বাড়ি থেকে লাকিংমে চাকমাকে অপহরণ করা হয়। এ সময় ঘরে বাবা-মা কেউ ছিলেন না। এ ঘটনায় টেকনাফ থানায় মামলা করতে গেলে তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ থানায় মামলা নেননি। পরে ভুক্তভোগী পরিবার আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। কিন্তু পিবিআই মামলাটি তদন্ত করে অপহরণ নয় মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দেয়।
জানা গেছে, এর মধ্যে গত ১০ ডিসেম্বর লাকিংমে বিষপানে আত্মহত্যা করে। এরপর তাকে হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। পরে মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে লাকিংমের বাবা-মা লাশ নিতে গিয়ে জানতে পারেন এই লাশ নেওয়ার জন্য স্বামী দাবি করে একজন আবেদন করেছেন। এটা নিয়ে তৈরি হয় জটিলতা।
লাকিংমের পরিবারের দাবি, আতাউল্লাহ নাবালক লাকিংমে চাকমাকে অপহরণ করে হত্যা করেছে।
কিন্তু স্বামী দাবি করে আতাউল্লাহ বলেন, গত ২১ জানুয়ারি কুমিল্লায় লাকিংমে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে হালিমাতুস সাদিয়া নাম ধারণ করে এবং একই দিন এফিডেভিট মূলে আমরা (আতাউল্লাহ) বিবাহ সম্পন্ন করি। পরে আমাদের সংসারে একটি সন্তানও রয়েছে। যার বয়স এক মাসের কাছাকাছি। গত ৯ ডিসেম্বর একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানের আগে লাকিংমের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয়। এতে অভিমান করে কীটনাশক পান করে বলে স্বামী আতাউল্লাহর দাবি।
আতাউল্লাহ বলেন, লাকিংমে তার স্ত্রী। বর্তমানে তাকে ইসলাম ধর্ম মতে দাফন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আদালতের নির্দেশে পিতা-মাতার কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
গত ১০ ডিসেম্বর রাতে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মুমূর্ষু লাকিংমেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই দিন থেকে লাকিংমের লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে ছিল।