অনলাইন ডেস্কঃমাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়াই নগরীতে অধিকাংশ বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে প্যাথেডিন, মরফিন ও রেকটিফাইড স্প্রিডেস্ক ব্যবহার চলছে। এসব অনুনমোদিত ড্রাগের যথেচ্ছা ব্যবহার হলেও এ যাবত কোন অভিযান পরিচালনা করেনি খুলনার মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। কতিপয় কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে লাইসেন্স না নিয়েই এতোদিন অবৈধভাবে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করেছে খুলনার অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক। কিন্তু হাসপাতাল পরিচালনার বর্তমান নীতিমালায় মাদকের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক হওয়ায় অসম্পূর্ণভাবে লাইসেন্সের আবেদন করেই কার্যক্রম পরিচালনা করছে হাসপাতাল মালিকরা। ফলে এক বছর মেয়াদের লাইসেন্সের আবেদন করেই নির্ধারিত সময়ে পার করে ফেললেও তার কোন সুরাহা করতে পারেনি অধিদপ্তর।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ অনুসারে প্যাথেডিন, মরফিন, রেকটিফাইড স্প্রিড মজুদ অথবা বিক্রি করতে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর হতে কোন ফার্মেসীকে লাইসেন্স সংগ্রহ বাধ্য বাধকতা রয়েছে। এছাড়া হাসপাতাল ও ক্লিনিকে বাধ্যতামূলক বাধ্য বাধকতা রয়েছে।
স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর ও বিপিএমপিএ সূত্রে জানা যায় মহানগরীসহ জেলায় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যা শতাধিক। যার মধ্যে মহানগরীতে ৬০টির বেশি হাসপাতাল ক্লিনিক রয়েছে যারা অপারেশন করে। এর মধ্যে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ক্লিনিকের সংখ্যা মাত্র ২০টি যার মধ্যে ৩টি সরকারি। এদিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের মাদকের লাইসেন্স থাকলেও সদর হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন হয়নি ৫ বছরের বেশি সময়।
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর খুলনা থেকে জানাযায়, এ পর্যন্ত খুলনা জেলায় মাদক দ্রব্য লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ৩৩টি ফার্মেসীর এবং সরকারি ও বেসরকারি মিলে মাত্র ২০টি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের লাইসেন্স আছে, যা মোট সংখ্যার ২০ শতাংশের কম।
এদিকে লাইসেন্স ছাড়া অবৈধভাবে প্যাথেডিন, মরফিন বা রেকটিফাইড স্প্রিড ব্যবহার ও মজুদ রাখলেও কোন অভিযান নেই মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের। এমনকি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় অবৈধ এসব ড্রাগ পাওয়া গেলে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিসকে ফোন দিলেও তারা আসেনি। সম্প্রতি নগরীর খানজাহান আলী রোডে ন্যাশনাল হাসপাতালে নারকোটিক্স লাইসেন্স না থাকা সত্ত্বেও সেখানে প্যাথেডিন পায় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও ভ্রাম্যমাণ আদালত। তৎক্ষণাৎ অধিদপ্তর খুলনাকে জানালেও তারা ঘটনাস্থলে আসেনি। কোন ব্যবস্থাও নেয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ক্লিনিক মালিক বলেন, তারা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লাইসেন্স আগে কখনই নিতেন না। মাঝে মাঝে তারা ঝামেলা করলে কয়েকজনকে খুশি করলেই হতো। কিন্তু এখন হাসপাতালের লাইসেন্স নেয়ার পূর্বে মাদকের লাইসেন্স নেয়া বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার পরামর্শেই অসম্পূর্ণ আবেদন করে রেখেছেন কালক্ষেপনের জন্য।
খুলনা জেলা ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক মোঃ আব্দুর রশীদ বলেন আমরা কোন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অভিযান চালাই না। আমরা শুধু ফার্মেসীগুলোতে যাই। অনুমোদনহীনভাবে যারা প্যাথেডিন মরফিন, ইফিডরিন সংগ্রহ মজুদ ও বিক্রি করে ম্যাজিস্ট্রেট-এর মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। কিন্তু এর মূল দায়িত্ব মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের। হাসপাতাল ক্লিনিকের যথেচ্ছা ব্যবহার বন্ধ করা ও লাইসেন্স দেয়ার দায়িত্বও তাদের।
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান বলেন, আমরা কোন হাসপাতাল ক্লিনিক ও ফার্মেসীতে অভিযান চালাই না এটা ওষুধ প্রশাসনের কাজ। আমরা লাইসেন্স দেই তবে তারা তদারকি করে অন্য সংস্থা।
খুলনা জেলা সিভিল সার্জন এস এম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কোন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে লাইসেন্স বিহীনভাবে প্যাথেডিন ও মরফিন রাখলো কিনা বা ব্যবহার করলো কি না এটা দেখার স্পেশাল দায়িত্ব মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের। আমরাও যখন সার্বিক বিষয় তদন্ত করি তখন এটাও দেখি কিন্তু এটার মূল দায়িত্ব মাদক অধিদপ্তরের।
সূত্র-দৈনিক সময়ের খবর