খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অর্ণবের মা চন্ডী রানী জানেন না তার ছেলেকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করেছে। তিনি জানেন ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। ছেলেকে হারিয়ে তিনি বিলাপ করছেন। তাকে শান্তনা দিচ্ছেন প্রতিবেশী ও পরিবারের সদস্যরা। চন্ডী রানীর কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে আশপাশের পরিবেশ। আর অর্ণবের বাবা ও ছোট ভাই শোকে বিলাপ করছেন। তাদেরকে শান্তনা দিতে দেখা গেছে প্রতিবেশীদের। শনিবার (২৫ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় নগরের বানরগাতি এলাকায় অর্ণবের বাড়িতে গেলে এ দৃশ্য দেখা গেছে।
ঘরের একটু বাইরে বসে কাঁদছিলেন নিহত অর্নবের ছোট ভাই অনীক কুমার সরকার। তিনি জানালেন, আজ তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি ইউনিটের পরীক্ষা খুলনা সিএসএস কেন্দ্রে ছিল। কিন্তু বড়ভাইকে হারিয়ে তিনি শোকে স্তব্ধ হয়ে আছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, বড়ভাইয়ের সাথে আজ তার পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা আর হলনা। তিনি আরও বলেন, শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে অর্ণব বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। রাত সাড়ে ৮ টার দিকে লাবনী নামে এক বড় আপু তাকে ফোন করে বলেন তার ভাই সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, অর্ণবের সাথে কারও শত্রুতা থাকতে পারেনা। তাকে কেন এভাবে হত্যা করা হল। কার কাছে বিচার দিলে এ হত্যাকান্ডের বিচার পাবো। তিনি বলেন, অর্ণব খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ’র ছাত্র ছিল।
এলাকা ঘুরে জানা গেল অর্ণবের বাবা একজন কনস্ট্রাকশন ব্যবসায়ী। পড়াশুনার পাশাপাশি সে বাবার ব্যবসা দেখাশুনা করত। কোন দিন সে কারও সাথে দুর্ব্যবহার করেনি। বড়দের সম্মান করে চলতো বলে এলাকার বেলাল হোসেন এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা যে এত ক্ষোভ নিয়ে তাকে হত্যা করবে তা তারা কখনও কল্পনাও করতে পারেনি। এমন কি তার মৃত্যুর খবর শুনে রীতিমতো তিনি অকাশ থেকে মাটিতে পড়ার অবস্থা বলে এ প্রতিবেদককে জানান।
ওই এলাকার বাসিন্দা ঠিকাদার তসলিম হোসেন হারুন বলেন, নিহত অর্ণবদের আদি বাড়ি রামপাল উপজেলার রাজনগর এলাকায়। তাদের জন্ম এখানে। কোনদিন দেখেনি কারও সাথে সে দুর্ব্যববহার করেছে। তবে যতদুর জেনেছি গত ১৫ দিন আগে অর্ণবের ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন বিয়ে বাড়ি থেকে হারিয়ে যায় যে ঘটনায় সে সোনাডাঙ্গা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাত সোয়া ৯টার দিকে খুলনা নগরীর শেখপাড়া তেঁতুলতলা মোড়ে একটি মোটরসাইকেলে বসে অর্ণব চা পান করছিলেন। এ সময় ১০-১৫টি মোটরসাইকেলে সশস্ত্র লোকজন এসে প্রথমে তাঁকে গুলি করে। গুলি তাঁর গায়ে লাগার পর রাস্তার ওপর পড়ে গেলে সন্ত্রাসীরা তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে রেখে যায়। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পার্শ্ববর্তী খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। অর্ণব খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিনের এমবিএ’র ছাত্র।
সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, অর্ণব হত্যার ঘটনায় আজ শনিবার বেলা দেড়টা পর্যন্ত মামলা হয়নি। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে অর্ণবের মরদেহ বেলা পৌণে একটায় প্রথমে তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সৎকার করার জন্য গল্লামারী শ্মশানঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।