আজ (৮ মে) বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস। পরিযায়ী পাখির আবাসস্থলকে নিরাপদ রাখা ও বিচরণস্থল সংরক্ষণে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রতিবছর ‘বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস’ পালিত হয়। ‘পাখির মতো গান গাই, উড়ে যাই সুউচ্চ দিগন্তে’- প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পালন করা হবে এবারের দিবসটি।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বর্তমান বিশ্বের জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে পাখিদের আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে পরিযায়ী পাখিরা মারাত্মক খাদ্য সংকটের মধ্যে পড়েছে। এই অবস্থা দূর করতে দিবসটি পালনের উদ্দেশ্য। পরিযায়ী পাখিদের সম্পর্কে বিশ্বজুড়ে সচেতনতা বাড়াতে ২০০৬ সাল থেকে এই দিবস পালন শুরু করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, আবাসিক ও পরিযায়ী পাখিদের বিচরণ ও সংরক্ষণে সরকার সর্বদাই সচেষ্ট। পাখি ও এর আবাসস্থল সংরক্ষণে সব ধরনের কার্যক্রমকে সাফল্যমণ্ডিত করে তুলতে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আবাসিক ও পরিযায়ী পাখিদের বিচরণ ও সংরক্ষণে আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
দিবসটি উপলক্ষে বন অধিদপ্তর একটি ওয়েবিনারের আয়োজন করেছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
এদিকে, পাখিদের বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলেন, পরিযায়ী পাখিদের আগে অতিথি পাখি বলা হতো। কিন্তু নিবিড় গবেষণায় দেখা গেছে যে, এরা অতিথি নয়। বরং যে দেশে যায় সেখানে তারা ডিম পাড়ে এবং সেই ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা বের হওয়া পর্যন্ত বাস করে। অর্থাৎ বছরের বেশ কয়েকমাস এসব পাখি ভিনদেশে থাকে; নিজ দেশে বাস করে স্বল্প সময়ের জন্য।
পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, সাধারণত হেমন্তের শুরুতে বাংলাদেশে পরিযায়ী পাখি আসার মওসুম শুরু হয়। এসব পাখির মধ্যে রয়েছে খঞ্জন, সুইচোরা, চ্যাগা ও চা পাখি, চখাচাখী মানিকজোড়, গেওলা ও গুলিন্দা।
পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলার সমতল ও সুন্দরবনকে লক্ষ্য করে প্রায় আটটি পথ ধরে পাখিরা এখানে আসে। দেশের হাওর এলাকা ও বিস্তৃত সুন্দরবন এলাকা পরিযায়ী পাখিদের অন্যতম আকর্ষণ। এছাড়া, সুনামগঞ্জের হাওর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চিড়িয়াখানাসহ বেশ কিছু এলাকায় এই পাখিদের দেখা যায়।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এবার সারাবিশ্বের পাখিপ্রেমীরা এক ভিন্নধর্মী ‘বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস’ পালন করছে।
করোনার কারণে মানুষের চলাচল কমে আসায় প্রকৃতি সেজেছে নতুন সাজে। অনেক জায়গায় এখন মানুষের আনাগোনা নেই বললেই চলে। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের বনভূমি এবং পর্যটন স্থানগুলোতে কমেছে লোকের আনাগোনা। এতে করে প্রকৃতি নিজেকে নতুন করে সাজিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ছেয়ে গেছে সাগরলতায়, সৈকতের একেবারে কাছে দেখা গেছে বিরল জাতের ডলফিন। সেন্টমার্টিনে ফিরে এসেছে কচ্ছপের ঝাঁক, কাঁকড়া। সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে বলেও দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) বলছে, প্রত্যেক বছর বাংলাদেশের স্বাদু পানির হাওর-বাওর, বিল এবং জলাশয়গুলোতে দুই লাখেরও বেশি হাঁস এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বিচরণ করে। বিশেষ করে টাঙ্গুয়ার হাওর এবং হাকালুকি হাওরে। এছাড়া, আরো ১ লাখের বেশি পাখি সামুদ্রিক অঞ্চলে বেড়াতে আসে। কিন্তু নানাভাবেই ক্ষতি করা হয় এসব পাখিদের। আইন থাকা স্বত্বেও অনেকেই মানেন না সেসব। শুধুমাত্র আইনের প্রয়োগ কিংবা সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করলেই কেবল পরিযায়ী পাখি এবং তাদের আবাসস্থল রক্ষা করা সম্ভব না, সেই সঙ্গে জরুরি সবার সচেতনতা।