চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃবাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ অসংখ্য মানুষের দাবি জানিয়ে নিহত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন তেল, গ্যাস, খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। বুধবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে ফাহাদ হত্যার ঘটনায় নিপীড়নবিরোধী অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আনু মহাম্মদ বলেন, আবরার অসংখ্য মানুষের দাবি নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছে, বক্তব্য রেখেছে এবং অসংখ্য মানুষের পক্ষে যে কথা বলে নিহত হয়েছে। যে পরিস্থিতি আবরারের মতো ছেলেদের নিহত করে, ঘরে ঘরে খুন-ধর্ষণের মতো পরিস্থিতিকে জায়েজ করতে থাকে, দেশকে পুরো নিরাপত্তাহীন করে তোলে সেই পরিস্থিতি পরিবর্তনে অসংখ্য মানুষকে আবরারের নাম নিয়ে দাঁড়ানো অবশ্য কর্তব্য।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবরারের দেওয়া স্ট্যাটাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আবরার ফেসবুক স্ট্যাটাসে যে বার্তা দিয়ে গেছে আমাদের সৌভাগ্য যে তার শেষ কথাটি আমরা জানতে পেরেছি। তার এক নম্বর স্ট্যাটাসের বক্তব্য ছিল- বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর মংলা এখন ভারত দেশি প্রতিষ্ঠানের মতোই ব্যবহার করতে পারবে। আবরার তথ্যযুক্তি দিয়ে কথা বলেছে, কোনো কটূক্তি করেনি, কাউকে গালি দেয়নি, কাউকে অপমান করেনি।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, ‘আবরার তার স্ট্যাটাসে প্রধানমন্ত্রীর নামও নেয়নি। সে শুধু তথ্যযুক্তি দিয়ে জানতে চেয়েছে এই বন্দর ব্যবহার করার আগের ঘটনাগুলো কী কী? এই বন্দর ব্যবহার করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ কী কী বিপদে পড়তে পারে।’
তিনি বলেন, ‘দুই নম্বর সে পানি নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছে। আবরার বলেছে, আমাদের যেখানে পানির সংকট, সেখানে পানি চলে যাচ্ছে ভারত। ভারতকে পানি দিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মন্ত্রীরা বলছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীও দেখলাম বললেন, পররাষ্ট্র সচিব বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- এটা মানবিক কারণে দেয়া হয়েছে। মানবিক কারণে এর আগে তিতাস নদীতে বাঁধ দিয়ে, তিতাস নদীকে নষ্ট করেছে। ভারতের বিদ্যুৎ সরঞ্জাম এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেয়া হয়েছিল। মানবিক কারণে এর আগে বহু কাজ এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘মানবকি কারণে এখন যে পানি আমাদের ভারতের কাছে প্রাপ্য সেই পানির কোনো সুরাহা না করে ফেনী নদী থেকে পানি এখন ভারতকে দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে মানবিক কারণে। মানবিক সরকার আপনাদের মানবিকতা বাংলাদেশের জন্য কোথায়? বাংলাদেশের জন্য আপনাদের মানবিকতা কোথায়?’
আনু মহাম্মদ বলেন, আবরারের স্ট্যাটাসের তিন নম্বর বিষয় ছিল গ্যাস নিয়ে। বাংলাদেশে জ্বালানি সংকটের কারণে এলপিজি রপ্তানি করা হচ্ছে ভারতে। কীভাবে রপ্তানি করা হচ্ছে।তিনি বলেন, এলপিজি আমদানি করা হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে। এলপিজির ব্যবসা বসুন্ধরা ও বেক্সিমকোসহ প্রভাবশালী ব্যবসায়ীগোষ্ঠীর, যারা ব্যাংক খালি করলে তাদের কোনো অপরাধ হয় না। যারা সন্ত্রাস এবং এই যে দাপট, গণতন্ত্রহীনতা, যার প্রধান সুবিধাভোগী হচ্ছে এ সমস্ত ব্যবসায়িকগোষ্ঠী। তারা সেই এলপিজি আমদানি করবে বৈদিশিক মুদ্রা দিয়ে, তারপর সেটা প্রসেসিং হবে সুন্দরবন নষ্ট করে। সুন্দরবনের পাশে এলপিজির প্ল্যান্টে সেই এলপিজি প্রোডাকশন হবে।
আনু মুহাম্মদ বলেন, সুন্দরবন নষ্ট করে সেটা ভরা হবে। ভরে তারপর সেটা ভারতে রপ্তানি করা হবে। এটার কী যুক্তি থাকতে পারে? কীভাবে একজন বাংলাদেশের নাগরিক এর বিরুদ্ধে কথা না বলে থাকতে পারে। আবরার সেই কাজটাই করেছে।
আবরার ফাহাদ তার স্ট্যাটাসে কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন বলে উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘কাশ্মীরে যখন লাখ লাখ মানুষ একাত্তর সালের মতো পরিস্থিতির শিকার। একাত্তর সালে বাংলাদেশের যে অবস্থা ছিল কাশ্মীরে সেই অবস্থা। সেই কাশ্মীরের জন্য আপনাদের মানবতা কোথায়?
কাশ্মীর ইস্যুতে র্যাবের মহাপরিচালক কথা বলতে নিষেধ করেছেন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘র্যাবের মহাপরিচালক পরিষ্কার বলেছেন বাংলাদেশে কাশ্মীর নিয়ে কোনো কথা বলা যাবে না। কেন কথা বলা যাবে না কাশ্মীর নিয়ে? কাশ্মীরসহ পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় যদি নির্যাতন হয়, অন্যায় হয় তার বিরুদ্ধে কথা বলা পৃথিবীর যে কোনো মানুষের একটা সাধারণ দায়িত্ব। সেই দায়িত্ববোধ থেকে বাংলাদেশের মানুষ যাতে কথা বলতে না পারে সে জন্য র্যাব-পুলিশ হুমকি দিচ্ছে।’
আজ বাংলাদেশের তিনদিকে ভারতের কাঁটাতার বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আরেকদিক খোলা ছিল, সেখানে ভারতের জাহাজ। আর সেই জাহাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তাদের রাডার। সেই রাডার দিয়ে আমাদের ওপর সার্বক্ষণিক নজরদারি হবে। বাংলাদেশের ভেতরে র্যাব-পুলিশের নজরদারিতে ভারত সন্তুষ্ট নয়। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার যে নজরদারি এখনো চলছে তাতেও তারা সন্তুষ্ট নয়। তারা প্রকাশ্যে রাডার বসিয়ে বাংলাদেশের ওপর নজরদারি করবে নিরাপত্তার নামে।
ভারতের এই তিনদিকে কাঁটাতার, একদিকে জাহাজ আর রাডার, এটাই তো আমাদের নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ বলে মন্তব্য করে জাবির এই অধ্যাপক বলেন, এসবের বিরুদ্ধে যে তরুণরা কথা বলবে, সেই তরুণরাই বিশ্ববিদ্যালয়ে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অধিকার লড়াইয়ে শামিল হতে পারে। কারণ প্রশ্ন যারা তুলতে পারে, যারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারে, যারা ক্ষমতার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেদের দায় থেকে কথা বলতে পারে, তারাই পরিবর্তন আনতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার (৬ অক্টোবর) রাত ৭টার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবরার ফাহাদের কর্মকাণ্ড তদারকির নামে তাকে ডেকে নেওয়া হয় বুয়েটের শেরে বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে। সেখানে ডেকে নিয়ে প্রথমে তার ফেসবুক এবং মেসেঞ্জারে তদারকি চালান বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৮টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে চলে আবরারের ওপর অমানবিক নির্যাতন। এক সময় নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মারা যান আবরার ফাহাদ।