আবারো বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টা পর্যন্ত দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে কোনো পেঁয়াজবাহী ট্রাক দেশে প্রবেশ করেনি বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা।
ভারত সরকারের পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত কোনো পেঁয়াজ রপ্তানি করা হবে না বলে জানিয়েছেন এই ব্যবসায়ীরা।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ বলেন, ভারত সরকার গত সোমবার হঠাৎ করে কোনো কিছু না জানিয়ে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়। পরে শুক্রবার একটি নোটিফিকেশন জারি করে যে, গত রোববার টেন্ডার হওয়া পেঁয়াজগুলো তারা রফতানি করবে। সেই মোতাবেক অনুমতি দেয়ায় শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) হিলি স্থলবন্দর দিয়ে মাত্র ১১টি ট্রাকে ২৪৬ টন পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করে। যে ১১ ট্রাক পেঁয়াজ রফতানি করেছে তার অধিকাংশ পেঁয়াজই ইতোমধ্যে পচে নষ্ট হয়ে পানি ঝরছে। এ কারণে আমদানিকারকরা এসব পেঁয়াজ নিয়ে এসেও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, এখনও ২০০’র বেশি পেঁয়াজবাহী ট্রাক দেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের অভ্যন্তরে বিভিন্ন সড়কে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এছাড়া যে ১০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য আমাদের এলসি দেয়া রয়েছে তার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানা যায়নি। এগুলোর বিষয়ে তারা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বা কী করবে তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।
তিনি বলেন, আজ (রোববার) বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ প্রবেশ করবে কিনা সে বিষয়টি আমাদের জানা নেই। কারণ শুধু গত রোববারের টেন্ডার হওয়া পেঁয়াজ রফতানির জন্য অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু নতুন করে কোনো নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত ভারতীয় কাস্টম বন্দর দিয়ে কোনো পেঁয়াজ রফতানি করতে দেবে না।
হিলি স্থলবন্দরে পেঁয়াজ কিনতে আসা লুৎফর রহমান ও সিদ্দিক হোসেন বলেন, ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় কয়েক দিন ধরেই পেঁয়াজের বাজার বেশ চড়া। পেঁয়াজ আমদানির খবরে কিছুটা কমলেও আমদানি না হওয়ায় দাম আবারও বেড়ে যায়। শনিবার বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হওয়ার কারণে বন্দরের আড়তগুলোতে পেঁয়াজের দাম গতকালের চেয়ে কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমেছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সুমন মিয়া জানান, পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা বেড়েছিলো গত দুইদিন ধরে। তাই দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমেছে। এখন সরবরাহ বন্ধ হলে দাম আবারো বাড়বে।
এদিকে গত সোমবার থেকে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় হু হু করে দাম বেড়েছিলো দেশের বাজারে। দেশি পেঁয়াজের কেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজ ৮০ টাকার উপরে উঠে যায়। এরপর শনিবার থেকে ভারত রপ্তানি করবে এমন খবরে দাম কিছুটা কমে দেশি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ আর আমদানি করা পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় নেমে আসে।
এবছর যাতে গত বছরের মত পরিস্থিতি না হয় সেজন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে বার বার আশ্বস্ত করা হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে। বাজার মনিটরিং জোরদারের পাশাপাশি আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এর আগে গত বছরও ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিলো। তখন বাংলাদেশে এক পর্যায়ে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় দাম উঠেছিলো এই পণ্যটির। এরপর মিশর, পাকিস্তান, চীন, মিয়ানমার ও তুরস্কসহ কয়েকটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেছিল সরকার। পেঁয়াজের বাজারে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জরুরি ভিত্তিতে বিমানেও আনা হয়েছিলো পেঁয়াজ।