অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে চান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়তে চাই। যে দেশে কোনো অন্যায় থাকবে না। অবিচার থাকবে না। মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে, সেটাই আমি চাই।
সোমবার (১৮ অক্টোবর) শেখ রাসেল দিবস-২০২১ ’র উদ্বোধন ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের যৌথ উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন।অনুষ্ঠানে শেখ রাসেলের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন টুঙ্গিপাড়ায় যেতাম। গ্রামের যে গরিবে ছেলে, তাদেরকে এক সাথ করে তাদের প্যারেড করাতো। তার খুব আগ্রহ ছিল যে, প্যারেড করোনোর। কাঠের বন্দুক তৈরি করে সে প্যারেড শেখাতো। শুধু তাই না, এরপর তাদের পুরস্কার দেওয়া হতো। সবার জন্য কাপড় কিনে নিয়ে যেতো। কেউ যদি জিজ্ঞেস করত তুমি কী হবে? সে (রাসেল) বলত আমি আর্মি হব। সে একটা আর্মি অফিসার হবে, এটাই তার জীবনের স্বপ্ন ছিল। কিন্তু তার সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি। সে আজকে বেঁচে থাকলে বড় আর্মি অফিসার হতো। কিন্তু সেটা আর হলো না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব থেকে কষ্ট হয়, রাসেল বাবার স্নেহ-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কারণ ৬৪ সালের অক্টোবরে রাসেলের জন্ম। তখন আমার বাবা বাংলাদেশের মানুষের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। বারবার তাকে কারাবরণ করতে হয়েছে। আমরা ছোটবেলা থেকে হয়তো বাবা কিছুদিন ঘরে, কিছুদিন জেলে। আর জেলখানায় মনে হয় আমাদের সঙ্গে বেশি দেখা হতো। সেটাই আমাদের জীবন ছিল। রাসেলের জন্মের পরে বাবা যখন ছয় দফা দিলেন। এরপর সারা দেশ ঘুরে বেরিয়েছেন। জনমত তৈরি করেছিলেন। কারণ তিনি চেয়েছিলেন বাংলাদেশ একটা স্বাধীন দেশ হবে। সেই দেশে শিশু থেকেই সকলেই একটি সুন্দর, নিরাপদ ও উন্নত জীবন পাবে। শিক্ষা-দীক্ষা সবদিক থেকে উন্নত হবে।
তিনি বলেন, ছয় দফা ছিল বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের একটা সংগ্রাম। ছয় দফা দেওয়া পরেই বাবাকে খুব একটা কাছে পায়নি রাসেল। তবুও যতটুকু সময় পেত আমার আব্বা বাচ্চাদের খুব পছন্দ ও আদর করতেন। রাসেলকে তিনি কোলেই রাখতেন। নিজের হাতে দুধ খাওয়াতেন। যেটুকু সময় পেতেন তা করতেন। কিন্তু সেটাতো অল্প সময়ের জন্য। কারাগারে যেদিন রাসেল বাবার সঙ্গে দেখা করে আসতো। সে বলতে পারত। কিন্তু তার ভেতরে যে কষ্ট ও অস্থিরতা সেটা আমরা বুঝতে পারতাম।
কেমন বাংলাদেশ চান সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাংলাদেশ সামনে কেমন হবে তার জন্য প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করে দিয়েছি। বাংলাদেশের আগামী দিনের চলার পথে যেন কোনো রকম আর হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র না হয়। বাংলাদেশের মানুষ যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে। ঘাতকের বুলেটে আর কোনো শিশুকে যেন এভাবে জীবন দিতে না হয়। আমি সমগ্র জাতির কাছে এই আহ্বানই জানাব যে আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। কাজেই তাদেরকে নিরাপত্তা দেওয়া, তাদেরকে ভালোবাসা দেওয়া, তাদেরকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা। তাদের জীবনটাকে সার্থক করা, অর্থবহ করা এটাই যেন সকলের আকাঙ্ক্ষা হয়, এটাই যেন সকলের কর্তব্য পালনকালে সকলের আদর্শ হয় সেটাই আমি চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, একজন শিশুকে হত্যা মানেই লাখো-কোটি শিশুর জীবনে একটা আশঙ্কা এসে যায়। স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা দেখেছি যে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী এদেশের যেভাবে গণহত্যা চালিয়েছিল। তারাও কিন্তু শিশুদের রেহাই দেয়নি। ছোট্ট নবজাতক শিশুকেও তারা হত্যা করেছে। এমন কী মায়ের পেটের শিশুকেও হত্যা করেছে।
সরকার প্রধান বলেন, পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টের পরে কত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এই সেনা বাহিনীতে ১৯ ক্যু হয়েছে। একটা সেনা বাহিনীতে যদি ১৯ বার ক্যু হয় সেই সেনাবাহিনীতে ডিসিপ্লিন আছে বলে এটা কেউ দাবি করতে পারে না। আর এই একেকটা ক্যু ধরে ধরে হাজার হাজার সৈনিক অফিসার হত্যা করা হয়েছে। অনেকের পরিবার লাশও পায়নি। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক নেতা কর্মীদেরও অকথ্য নির্যাতন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের ওপর। তাদের দিনের পর দিন ধরে নির্যাতন করা হয়েছে। আবার ঠিক সেই ঘটনা আমরা দেখেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের পর শুধু হত্যা না, সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাসকেও মুছে ফেলা হয়েছিল। আমাদের অনেকে প্রজন্ম জানতেই পারে না যে সেখানে কত জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, কীভাবে হত্যা করা হয়েছে বা একাত্তর সালে কীভাবে গণহত্যা হয়েছিল আমাদের দেশে। শিশুরা যেন নিরাপদ থাকে।