হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আমির মরহুম আল্লামা শাহ আহমদ শফির ওপর কোনও নির্যাতন হয়নি। তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় হাটহাজারীর দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
বাবুনগরী বলেন, ‘আল্লামা শফি যখন অসুস্থ হন তখন শূরা সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। অনতিবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের উদ্দেশ্যে আমাদের এই সংবাদ সম্মেলন। এই মামলার যিনি বাদি ওনার নাম জানা আছে। এছাড়া ওনার কিছু সহযোগীর নাম আমরা জানি, তবে সবার নাম এই মূহুর্তে বলতে পারছি না’।
আল্লামা শাহ আহমদ শফীর স্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে মিথ্যাচার, হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও হেফাজত নেতাদের জড়িয়ে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হেফাজতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক নুরুল আফছার আজাহারী।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, মাদ্রাসার তৎকালীন শিক্ষা পরিচালক আল্লামা মুফতি নুর আহমদকে পাশ কাটিয়ে সহকারি শিক্ষা পরিচালক মাওলানা আনাস মাদানী দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদের নানাভাবে হয়রানি করে আসছিলো। সে একক সিদ্ধান্তে ছাত্রদের ভর্তি ফরম এবং দাওরায়ে হাদিস ছাত্রদের বোর্ড পরীক্ষার ফরম আটকে রাখে। অনেক ছাত্রদের বোর্ডিংয়ের খাবার এবং সিট বাতিল করে। তাদের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারি কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে আল্লামা আহমদ শফি’র ইন্তেকালের দুদিন পূর্বে ১৬ সেপ্টেম্বর ছাত্ররা বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা তাদের সুনির্দিষ্ট দাবি তৎকালীন মুঈনে মুহতামিম আল্লামা শেখ আহমদের মাধ্যমে আল্লামা শাহ আহমদ শফির কাছে পেশ করেন। তিনি শূরা আহ্বান করে মাওলানা আনাস মাদানীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেন এবং ছাত্রদের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন। বাকি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ১৯ সেপ্টেম্বর পুনরায় শূরা অধিবেশন আহ্বান করেন। এ ঘোষণার পর মাদ্রাসায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসে।
কিন্তু পরের দিন ১৭ সেপ্টেম্বর শূরা সদস্যদের সিদ্ধান্তকে অমান্য করে মাওলানা আনাস মাদানী অনির্দিষ্টকালের জন্য মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়ার পাঁয়তারা করলে, পুনরায় ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তখন শাহ আহমদ শফি মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। ছেলে মাওলানা আনাস মাদানীর দীর্ঘদিনের অনিয়ম, ছাত্র-শিক্ষকদের প্রতি জুলুম নির্যাতনসহ নানা দুর্নীতি তাঁর সামনে স্পষ্ট হলে তিনি আনাস মাদানীর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে স্বেচ্ছায়-স্বজ্ঞানে মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করে শূরার সদস্যের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, একটি চিহ্নিত দালাল গোষ্ঠি আহমদ শফিকে জিম্মি করে হাটহাজারী মাদরাসায় ব্যক্তিতন্ত্র কায়েম করে রেখেছিল। সেখানে নানা অনিয়ম এবং ছাত্রদের ওপর অব্যাহত হয়রানি ও নির্যাতন চালিয়ে তাদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। এছাড়া বেশ কিছু স্বনামধন্য শিক্ষককে মাদ্রারাসা থেকে অন্যায়ভাবে চাকুরিচ্যুত করে দেওয়া হয়, যা ছিল অত্যন্ত অবমাননাকর। তাদের অনিয়ম ও হয়রানিতে অতিষ্ঠ হয়ে হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্ররা তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনে নামে।
এ সময় নুরুল আফছার আজাহারী বলেন, আল্লামা আহমদ শফির মৃত্যু স্বাভাবিক ছিলো। কিন্তু তাঁর স্বাভাবিক মৃত্যুর তিন মাস পর তাঁর মৃত্যুকে অস্বাভাবিক আখ্যা দিয়ে একটি মিথ্যা মামলাও দায়ের করা হয়।
অনতিবিলম্বে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করা না হলে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা শাহ মহিবুল্লাহ্ বাবুনগরী, দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসার শূরা কমিটির সদস্য মাওলানা নোমান ফয়েজী, মাওলামা ইয়াহিয়া, মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মুফতি জসিম উদ্দিন, হেফাজতের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদরিসসহ হেফাজত নেতারা।