বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন সাবেক এমপি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী বুধবার (১৪ আগস্ট)। এ উপলক্ষ্যে রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এবং তাঁরই প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা খুলনার ঐতিহ্যবাহী দারুল কুরআন সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসায় আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলসহ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ জমিয়তে মুফাসসিরিন, বাংলাদেশ মাজলিসুল মুফাসসিরিন, বাংলাদেশ মুফাসসির পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্র কল্যাণ পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের উদ্যোগে অনুরূপ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
জানা গেছে. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম মুসুল্লি পরিষদের উদ্যোগে বুধবার (১৪ আগস্ট) বিকেল ৪টা থেকে এশা পর্যন্ত আলোচনা ও দোয়া মাহফিল চলবে। এ ছাড়া একই দিন সকাল ১০টা থেকে বাংলাদেশ মাদরাসা ছাত্রকল্যাণ পরিষদ খুলনার উদ্যোগে তাঁরই প্রতিষ্ঠিত খুলনার ঐতিহ্যবাহী দারুল কুরআন সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা মিলনায়তনে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (রহি.) এর জীবন কর্মের উপর আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. ইদ্রিস আলী। প্রধান আলোচক থাকবেন বাংলাদেশ মাদরাসা ছাত্রকল্যাণ পরিষদ খুলনা মহানগরীর উপদেষ্টা আরাফাত হোসেন মিলন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ছাত্রকল্যাণ পরিষদ খুলনা দারুল কুরআন সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসার আহবায়ক জি এম সাইদুল ইসলাম। উক্ত আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে স্থানীয় জনসাধারণ, মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দকে যথাসময়ে উপস্থিত হওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
এদিকে আগামী ১৬ আগস্ট জুম্মাবাদ খুলনার দারুল কুরআন সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা প্রাঙ্গনে অবস্থিত সিদ্দিকীয়া জামে মসজিদের মসল্লীদের উদ্যোগে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন সিদ্দিকীয়া জামেয়া-ই মাদানীয়া ট্রাস্টের চেয়ারম্যান শামীম সাঈদী। বিশেষ অতিথি থাকবেন পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী। আগামী ২৪ আগস্ট (শনিবার) মাদরাসার উদ্যোগে অনুরূপ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া চট্রগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ, বগুড়া, পিরোজপুর ও সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ জমিয়তে মুফাসসিরিন, বাংলাদেশ মাজলিসুল মুফাসসিরিন, বাংলাদেশ মুফাসসির পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্র কল্যাণ পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের উদ্যোগে অনুরূপ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।।
উল্লেখ্য, কারাবন্দি অবস্থায় ২০২৩ সালের ১৩ আগস্ট দুপুরে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে অসুস্থতার কথা বলে কারাকর্তৃপক্ষ পরিবারকে না জানিয়ে আল্লামা সাঈদীকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। শারীরিক জটিলতা বিবেচনা করে আল্লামা সাঈদীকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। ওই দিনই কারা কর্তৃপক্ষ তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার পিজি হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য নিয়ে আসেন। এ সময় তিনি কারারক্ষীদের কাঁদে ভর দিয়ে এ্যাম্বুলেন্স থেকে নামেন এবং হাত উচু করে জাতীয় উদ্দেশ্যে মিস্টি মধুর হাসি দিয়ে ছালাম দেন। তবে পরিবারের সাথে তাকে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। ১৪ আগস্ট রাত ৮টা ৪০ মিনিটে পিজি হাসপাতালে তিনি ইন্তিকাল করেন। হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. এস এম মোস্তফা জামান ষড়যন্ত্র করে তাঁকে হত্যা করেছে বলে ওই সময় পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী একজন বিশ্বনন্দিত বাংলাদেশী ইসলামিক বক্তা এবং সফল রাজনীতিবিদ ও প্রাক্তন সংসদ সদস্য। যিনি ১২ জুন ১৯৯৬ থেকে ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ পর্যন্ত একজন সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সংসদীয় দলের উপনেতা এবং ধর্মমন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবেও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪০ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী গ্রামে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা মাওলানা ইউসুফ সাঈদী যিনি একজন স্বনামধন্য ইসলামী পন্ডিত এবং ফুরফুরা দরবার শরীফের খলিফা ছিলেন। তার মায়ের নাম গুলনাহার বেগম।
১৯৬৭ সাল থেকে তিনি “দায়িইলাল্লাহ” হিসেবে আত্মনিয়োগ করেন। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পৃথিবীর অর্ধশতেরও বেশি দেশের সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক আমন্ত্রিত হয়ে ইসলামের সুমহান আদর্শ মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন। পবিত্র কাবা শরীফের সম্মানিত ইমাম তার মাহফিলে দু’বার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ১৯৭৫ সালের ২৯ জুলাই কোন মামলা ছাড়াই শেখ মুজিবুর রহমানের রোষানলের শিকার হয়ে প্রথম কারাবরণ করেন। দ্বিতীয়বার তারই কন্যা শেখ হাসিনার রোষানলের শিকার হয়ে ২০১০ সালের ২৮ জুন গ্রেফতার হন। এরপর কথিত যুদ্ধাপরাধের মামলায় আদালত তাকে আমৃত্যু কারাদন্ড দেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে রাজপথে আন্দোলনের সময় দেড় শতাধিক মানুষ শহীদ হন। বিশ্বের দরবারে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এই মহান দাঈ আজীবন সংগ্রাম করেছেন। শত অত্যাচার ও নির্যাতনেও তিনি এই আদর্শ থেকে ও এই ইসলামী আন্দোলন থেকে সরে আসেননি।