চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফশীল ঘোষণা হতে পারে। বিগত ২০১৬ সালের ২২ মার্চ সাতক্ষীরায় ইউপি নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী এবারও আগামী ২২ মার্চ প্রথম ধাপে সাতক্ষীরা জেলা সাত উপজেলার ৬৮টি ইউনিয়ন পরিষদে একযোগে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে পারে।
নির্বাচনী তফশীল ঘোষণা না হলেও চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে টানা বর্তমানে টানা ৩ বার ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতিমধ্যে জোর লবিং গ্রুপিং শুরু করেছেন। অনেকে নির্বাচনী অফিস খুলে নেতাকর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করছেন। একই সাথে মটর সাইকেল শোডাউন, মহল্লায় মহল্লায় উঠান বৈঠক ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে আ’লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে রয়েছেন প্রায় ৫০ জন প্রার্থী। এরা সবাই দলীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সাথে সাথে জেলা ও কেন্দ্রীয় অনেক নেতাদের খুশি করতে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত ২০১৬ সালের ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে তালা উপজেলা ১২টি ইউনিয়নের মধ্য বিদ্রোহীসহ ১০টিতে আওয়ামী লীগের ও ২ জন বিএনপির প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে জয় লাভ করেন। কিন্তু এবার ১২টি ইউনিয়নের সব কয়টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কাজ করছেন দলীয় নেতা কর্মীরা। আর এই ১২ ইউপিতে দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রায় ৫০জন প্রার্থী।
এদের মধ্যে উপজেলার ধানদিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে কাজ করে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা গাজী হামিজউদ্দীন, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যাপক সন্তোষ কুমার বিশ্বাস, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাষ্টার শহিদুল ইসলাম ও ছাত্র নেতা দিদারুল আলম। ধানদিয়া ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১৫ হাজার ৯৩৮ জন, এদের মধ্যে পুরুষ ৭ হাজার ৮৮৪ জন ও মহিলা ভোটার ৮ হাজার ৫৪ জন। বিগত ইউপি নির্বাচনে তালা উপজেলার ধানদিয়া ইউনিয়নে জাহাঙ্গীর আলম ধানের শীষ প্রতীকে ৭ হাজার ২৯০ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। অপর দিকে নৌকা প্রতীক নিয়ে অধ্যাপক সন্তোষ বিশ্বাস পেয়েছিলেন ৫ হাজার ৫৪৭ ভোট।
নগরঘাটা ইউনিয়নে আ’লীগের দলীয় মনোনয়ন চাইবেন, ইউনিয়নের আ’লীগ নেতা ও বর্তমান চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান লিপু, মনোরঞ্জন কুমার ও নেতা জাহাঙ্গীর সরদার। নগরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার ১৬ হাজার ৩৫৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৮ হাজার ২৬৭ জন ও মহিলা ভোটার ৮ হাজার ৮৭ জন। বিগত নির্বাচনে বিজয়ী হন কামরুজ্জামান লিপু।
সরুলিয়া ইউনিয়নে আ’লীগের মনোনয়ন পেতে কাজ করছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ মতিয়ার রহমান, ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস আতিয়ার রহমান, তালা উপজেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি শিক্ষক শেখ আবদুল হাই, শিক্ষক নেতা আবদুর রব পলাশ, তালা উপজেলা কৃষকলীগের সাবেক সদস্য সচিব প্রভাষক আমিনুজ্জামান, তালা উপজেলা কৃষকলীগের সদস্য সচিব কুমার ইন্দ্রজিৎ সাধু ও তালা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান সুমন। এই ইউনিয়নে মোট ভোটার ২৭৮৫৭জন। এদের মধ্যে পুরুষ ১৩ হাজার ৯২১ ও মহিলা ভোটার ১৩ হাজার ৯৩৬ জন।
কুমিরা ইউনিয়নে আ’লীগের মনোনয়ন দৌড়ে আছেন, কুমিরা ইউনিয়নে আ’লীগের নেতা রফিকুল ইসলাম, বর্তামান চেয়ারম্যান শেখ আজিজুল ইসলাম, শেখ শাহাবাজ আলী ও কাজী নজরুল ইসলাম হিল্লোল। ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী এই ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১৭হাজার ৫২৮জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮ হাজার ৮০০ জন ও মহিলা ৮ হাজার ৭২৮ জন।
তেতুঁলিয়া ইউনিয়নে আ’লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে কাজ করে যাচ্ছেন ইউনিয়নে আ’লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ, বর্তমান চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, ইকবাল হোসেন, মোস্তাক আহমেদ। এই ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১৮হাজার ৯৮০জন। এদের মধ্যে পুরুষ ৯ হাজার ৩৭৪জন ও মহিলা ৯ হাজার ৬০৬ জন।
তালা সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দোড়ঝাপ শুরু করেছেন জেলা পরিষদ সদস্য সাংবাদিক মীর জাকির হোসেন ও সরদার জাকির হোসেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এড. আব্দুর রহমান। তালা সদর ইউপিতে মোট ভোটার ২৮ হাজার ৫১৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৪ হাজার ৩২০ জন ও মহিলা ভোটার ১৪ হাজার ১৯৭ জন।
ইসলামকাটি ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন প্রার্থীরা হলেন, ইসলামকাটি ইউনিয়নে আ’লীগ নেতা ও বর্তমান চেয়ারম্যান সুভাষ কুমার সেন, শেখ আবদুল আজিজ, শেখ আফতাব হোসেন। ইসলামকাটি ইউপিতে মোট ভোটার ১৮ হাজার ১২৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ হাজার ২৪৯ জন ও মহিলা ভোটার ৮ হাজার ৮৪৭ জন।
মাগুরা ইউনিয়নে আ’লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে কাজ করছেন, মাগুরা ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি গনেশ দেবনাথ তালা উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম টুটুল, ইউনিয়ন আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উত্তম সেন (বাবু লাল) ও সুনীল দাশ। মাগুরা ইউপিতে মোট ভোটার ১৮ হাজার ৭৫১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ হাজার ৫৭৬ জন ও মহিলা ভোটার ৯ হাজার ১৭৫ জন।
খলিষখালী ইউনিয়নে আ’লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর লোবিং করছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর রহমান, প্রবীণ নেতা অশোক লাহিড়ী, সমীর কুমার দাস ও ইউনিয়ন আ’লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক শরিফুল ইসলাম। খলিশখালী ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১৯ হাজার ৪০৩ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ৯ হাজার ৮৮৬ ও মহিলা ৯ হাজার ৫১৭ জন।
খেশরা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে কাজ করে যাচ্ছেন, বর্তমান চেয়ারম্যান রাজিব হোসেন রাজু। একই সাথে মাঠে রয়েছেন উপজেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম এবং খেশরা ইউপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও তালা উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম লালটু। খেশরা ইউপিতে মোট ভোটার ২৩ হাজার ৬০৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১২ হাজার ১৫৫ জন ও মহিলা ভোটার ১১ হাজার ৪৪৯ জন।
জালালপুর ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন পেতে দোড়ঝাপ শুরু করেছেন, ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি ও সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী রবিউল ইসলাম (মুক্তি), ইউনিয়ন আ’লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রজিত দাস বাপি, যুবলীগনেতা আবু সাইদ মিঠু ও এমএ গফফার। এই ইউপিতে মোট ভোটার ২০ হাজার ৯৩৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১০ হাজার ৭৬৩ জন ও মহিলা ভোটার ১০ হাজার ১৭৪ জন।
খলিলনগর ইউনিয়নে আ’লীগের মনোনয়ন পেতে কাজ করে যাচ্ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আজিজুর ইসলাম রাজু, সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আ’লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক প্রভাষক প্রণব ঘোষ বাবলু, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা দেবব্রত রায় দেব। খলিলনগর ইউপিতে মোট ভোটার ২৬ হাজার ১১৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৩ হাজার ৩৯৮ জন ও মহিলা ১২ হাজার ৭২১ জন।
তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার জানান, আসন্ন ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য অনেকেই দলীয় মনোনয়ন চাইবে। অনেকে ইতিমধ্যে মাঠে কাজ শুরু করেছেন। তবে দলের মনোনীত প্রার্থী বাছাইয়ের ব্যাপারে আমাদের এবার সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রেরণ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে মনোনয়ন নিশ্চিত করা হবে।