সেলিম হায়দার :: মাল্টা ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ একটি ফল। রসালো ফলের মধ্যে এটি অন্যতম। এ ফল চাষ করে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন তালার আব্দুল আলীম। বাজারে চাহিদা ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লাভজনক হওয়ায় এ ফল চাষে তিনি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তিনি মাল্টার পাশাপাশি নিজের জমিতে বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করে আসছেন।
সাতক্ষীরা তালা সদর ইউনিয়নের আগোলঝাড়া গ্রামের মৃত নূর আলীর ছেলে মো: আব্দুল আলীম মোড়ল। তিন বছরেই তিনি আজ সফল মাল্টা চাষি। গাছগুলোতে এখন থোকায় থোকায় ঝুঁলছে মাল্টা।
আব্দুল আলীম মোড়ল সংযুক্ত আরব আমিরাতে ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। দীর্ঘদিন চাকরি করার পরে আসেন নিজ বাড়িতে। এসে মাল্টার বাগান করার পরিকল্পনা করেন। মাল্টার পাশাপাশি বেদানা ফল চাষের প্রতি মনোযোগী হয়ে শুরু করেন নিজ গ্রামে ফলের বাগান। সাইট্রাস পরিবারভুক্ত এই রসালো ফল চাষাবাদে দিন দিন আশার আলো দেখছেন তিনি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, তালা উপজেলায় চলতি বছরে ৫ হেক্টর জমিতে মাল্টার চাষ হয়েছে। তার মধ্য আগোলঝাড়া গ্রামের মাল্টা ও বেদানার ফলের বাগান সরকারীভাবে প্রদর্শনী প্লট হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। উপজেলায় বেলে দোআঁশ মাটিতে পরিমাণ বেশি থাকায় মাল্টা ও বেদানা ফল সহ অন্যসকল ফলের ভালো চাষাবাদ করা সম্ভব। তালা উপজেলায় বারী মাল্টা-১ মিষ্টি (পয়সা মাল্টা) ফলন একটু ভালো হয় ।
মাল্টা চাষি আব্দুল আলীম মোড়ল জানান, বিদেশে ও দেশে ইউটিউবসহ বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে মাল্টা চাষের ওপর প্রতিবেদন দেখে মাল্টা ও বেদানা চাষে আগ্রহী হয়। ২০১৯ সালে ৩৫ শতক জমিতে ১৭০টি মাল্টা ও ১৭০টি বেদানার গাছ দিয়ে শুরু করি ফলের বাগান। মাত্র তিন বছরেই তিনি আজ সফল মাল্টা চাষি।
তিনি আরও জানান, গত বছরে তাঁর বাগানে সামান্য পরিমাণ মাল্টা ফল ধারণ করায় প্রায় ২০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি হয়। তবে বেদানা গাছে এখনো ফল ধরেনি এবছর ফল ধরবে বলে আশাবাদী তিনি। বাগানে মাল্টা ও বেদানা ফলের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির আমগাছ নারকেল, আমড়া ও লিচু গাছের চারা রোপন করেছেন। তবে মাল্টা ও বেদনা চাষের ওপর তিনি বিশেষ নজর রাখেন।
তাঁর বাগানে থাইল্যান্ডের বেড়িকাটা মাল্টা ও ভারতীয় প্রলিত মাল্টা জাতের গাছ আছে। তিন বছর পরে গাছ ভেদে ৩০-৫০টি ফল ধারণ করেছে। বর্তমানে তাঁর বাগান পরিচর্যার জন্য একজন লোক সারাক্ষণ কাজ করেন। সেই সাখে তিনিও ও তার স্ত্রী এক মাত্র ছেলে সাফিউদ্দীন মোড়ল ফল বাগানের কাজে সহয়তা করে যাচ্ছেন সর্বক্ষণ।
এদিকে আব্দুল আলীমের এই মাল্টা বাগান দেখে আশেপাশের অনেক কৃষক এখন এ জাতের মাল্টা চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। অনেকে কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে উদ্যোগী হচ্ছেন এফল চাষে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ হাজিরা খাতুন বলেন, দেশে মাল্টা চাষ করে অনেকের যে সফলতা এসেছে, তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। মাল্টা চাষে অনেক লাভজনক ফল। মাল্টা চাষি দের এনএটিপি-২ প্রকল্প ও জিকেডিএসপি প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনী প্লট করা হচ্ছে বিদেশী ফল চাষের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য। এছাড়া মাল্টা চাষীদের সঙ্গে কৃষি অফিস সার্বক্ষণিক যোগযোগ সহ সকলকে টেকনিক্যাল সাপোর্ট প্রদান করা হচ্ছে। আগোলঝাড়ার আব্দুল আলীম মোড়ল মাল্টা ও বেদানা ফলের চাষ করছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে একজন সফল চাষি হিসেবে সর্বক্ষণ খোঁজ খবর নিচ্ছি।