পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমানে প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানের জামিনে দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার রয়েছে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে দেশটির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা দ্য ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এক্ষেত্রে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখার পরামর্শও দিয়েছে আইবি।
শুক্রবার রাজধানী ইসলামাবাদ পুলিশের চিফ কমিশনার নূর-উল-আমিন মাঙ্গেল এবং মহাপরিদর্শক ড. আকবর নাসির খানের কাছে একই চিঠির পৃথক দু’টি অনুলিপি পাঠিয়েছে আইবি। সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ইমরান খান নিয়াজি বহুদিন ধরে তার উসকানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে পাকিস্তানের সাধারণ জনগণকে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতি ক্ষিপ্ত করে তুলছেন এবং তার বিভিন্ন বক্তৃতার জেরে সম্প্রতি রাজধানী ইসলামাবাদসহ দেশজুড়ে একাধিক দাঙ্গা হয়েছে।’
গত মঙ্গলবার ইসলাবাদ হাইকোর্ট থেকে ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর পাকিস্তানজুড়ে যে ব্যাপক বিক্ষোভ-ভাঙচুর হয়েছে— সে সম্পর্কে ইঙ্গিত করে চিঠিতে বলা হয়, ‘মঙ্গলবারের বিক্ষোভে পাকিস্তানের সরকারি ও বেসরকারী সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ইসলামাবাদ বিমানবন্দগামী সড়ক তারা বন্ধ রেখেছে, খাদ্যপণ্য সরবরাহের গাড়ি রাজধানীতে ঢুকতে বাধা দিয়েছে।’
‘এক কথায় বলতে গেলে, জনবিক্ষোভের আবরণে একদল দুষ্কৃতিকারী সেদিন ইসলামাবাদের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে ফেলেছিল।’
‘যদি ইমরান খান নিয়াজি জামিন পেয়ে যান, সেক্ষেত্রে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আরও ভয়াবহভাবে ঘটার সম্ভাবনা আছে। তাই রাজধানী পুলিশের প্রতি আইবির পরামর্শ— ইসলামাবাদের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আপনারা সতর্কতা ও প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন। সেই সঙ্গে ইমরান খান নিয়াজি বর্তমানে যেখানে রয়েছেন, সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠিন ও নিশ্ছিদ্র করুন।’
গত মঙ্গলবার দু’টি মামলার শুনানিতে হাজিরা দিতে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে গিয়েছিলেন ইমরান খান। সেখান থেকে আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে দেশটির আধা-সামরিক বাহিনী রেঞ্জার্স এবং কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো’র (ন্যাব) একটি যৌথ দল। গত ১ মে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল ন্যাব।
ন্যাবের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাজির আহমেদ বাট স্বাক্ষরিত ওই পরোয়ানায় বলা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের সোহাওয়া শহরে আল-কাদির বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পের নামে ব্রিটেনের একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিকে রাষ্ঠীয় কোষাগার থেকে ১ কোটি ৯০ লাখ ডলার দিয়েছিলেন ইমরান খান, তার বর্তমান স্ত্রী বুশরা বিবি এবং ইমরানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের কয়েক জন জেষ্ঠ্য নেতা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে জমি বরাদ্দ নেওয়া হয়েছিল, সেখান থেকেও ইমরান ও বুশরা বিবি অবৈধ সুবিধা নিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয় পরোয়ানায়।
মঙ্গলবার ইমরানকে গ্রেপ্তারের পর নজিরবিহীন বিক্ষোভে ফেটে পড়ে পাকিস্তান। দেশজুড়ে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘাত শুরু হয় পিটিআই নেতাকর্মীদের, রাজধানী ইসলামাবাদসহ পাকিস্তানের চারটি প্রদেশের বিভিন্ন শহরে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন ভবন, সেনানিবাস ও সেনাদপ্তরে হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা।
পরিস্থিতি গুরুতর রূপ নিতে থাকায় মঙ্গলবার ইসলামাবাদ, পাঞ্জাব, খাইবার পাখতুনখোয়া এবং বেলুচিস্তানে সেনা মোতায়েন করা হয়।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আদেশে ইমরান খানকে সর্বোচ্চ আদালতের এজলাসে উপস্থিত করে ন্যাব। শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট ন্যাবের এই গ্রেপ্তারি অবৈধ ঘোষণা করে আগামীকাল শুক্রবার ইমরানকে ফের ইসলামাবাদ হাইকোর্টে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।
সুপ্রিম কোর্ট এই আদেশ দেওয়ার পর ইমরান খান আবেদন জানান, তাকে যেন বাড়ি ফিরে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হয়, তবে তার এই আবেদন নাকচ করে দিয়ে প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল বলেন, এখন থেকে আপাতত ইসলামবাদের পুলিশ লাইন্স অতিথি ভবনে থাকবেন ইমরান খান।