আন্তর্জাতিক ডেস্কঃবিশ্ব অর্থনীতিতে প্রবল অস্থিরতা এবং পরিবেশের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের চরম নেতিবাচক প্রভাবজনিত দুর্ভোগের মধ্যে ফ্রান্সে এক টেবিলে বসেছেন জি৭ নেতারা। অর্থনৈতিকভাবে অন্যতম শক্তিধর এসব দেশের এ সম্মেলন থেকে অবশ্য খুব বেশি কিছু আশা করছেন না বিশ্লেষক ও সমালোচকরা। এমনকি সম্মেলনে আয়োজক দেশের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাখোঁ পর্যন্ত সম্মেলনের ফলের ব্যাপারে আশাবাদী নন।
অবকাশ যাপনে আগ্রহী মানুষের অন্যতম পছন্দের জায়গা ফ্রান্সের বিয়ারিত্জ শহরে গতকাল শনিবার থেকে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী জি৭ সম্মেলন। সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী নেতাদের মধ্যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ছাড়া বাকি সবারই নিজ নিজ দেশে সমর্থন পড়তির দিকে। তা সত্ত্বেও ওই নেতারা সম্মেলনে আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছতে আগ্রহী, কিন্তু ট্রাম্প নন। ফলে সম্মেলন ফলপ্রসূ হওয়ার আশা তাঁরা করছেন না।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ স্পস্টই জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তন রোধ সংক্রান্ত ইস্যু নিয়ে সম্মেলনে যৌথ ঘোষণা দেওয়া হলে তাতে ট্রাম্পের সম্মতি দেওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। গত বছরের সম্মেলনেও যে ট্রাম্প যৌথ ঘোষণায় সম্মতি না দিয়ে আগেভাগে সম্মেলন ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, সে কথা বলতে ভোলেননি এই ফরাসি রাষ্ট্রপ্রধান। তাই ম্যাখোঁ এবার বলে দিয়েছেন, এবারের সম্মেলনে কোনো যৌথ ঘোষণা দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে গত সপ্তাহের শুরুর দিকে তিনি বলেছিলেন, ‘পরিস্থিতিটা কঠিন, কারণ বাণিজ্য, ইরান ও জলবায়ুর মতো ইস্যুগুলোয় এই প্রথমবারের মতো একমত হতে পারেনি সাতটি দেশ। তাই মূল্যহীন যৌথ ঘোষণার বিষয়টা আমি এড়াতে চাই। এর পরও আমি মনে করি, যৌথ ঘোষণা অপরিহার্য, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের লেনদেন করতে হবে, কারণ আমাদেরকে একবিন্দুতে মিলতে হবে, কারণ আমি মনে করি, আমাদের স্বার্থেই আমাদেরকে সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে।’
জি৭ সম্মেলন থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো ফল না আসা নতুন কিছু নয়। কিন্তু এ বছর কোনো রকম কূটনৈতিক সংঘাতে যেতেই চাচ্ছেন না জোটের নেতারা। তাঁরা চেষ্টা করছেন, যতটুকু সম্ভাবনা আছে, সেটাকে যেন কাজে লাগানো যায়। পাশাপাশি নিজ নিজ দেশের জনগণের কাছে নেতারা এটাও দেখাতে চান, বিশ্বাঙ্গনে তাঁদেরও ভূমিকা আছে।
সাত দেশের জোটের এ সম্মেলনের দিকে নজর রাখা গবেষক ট্রিস্টেন নেইলর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আচরণের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘এমন কোনো ব্যক্তি যদি থাকে, যার অবস্থান, যার বাতিক, যার আগ্রহ ক্ষণে ক্ষণে পাল্টায়, তার ওপর নির্ভর করে কোনো সমন্বিত নীতির পরিকল্পনা করা অসম্ভব। আমার ধারণা, অনাকাঙ্ক্ষিত পর্বটা শেষ হওয়ার অপেক্ষায় বসে আছে বেশির ভাগ দেশ। এর আগ পর্যন্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোয় কোনো বড় ধরনের অগ্রগতি হবে না।’
নেইলর আরো বলেন, ‘সাতটি দেশের একজোট হয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের সম্ভাবনা নেই। রক্ষণশীলদের বাণিজ্যিক বাধা দূর করার ব্যাপারেও কোনো অগ্রগতি হবে না। সুতরাং তারা সর্বোচ্চ যেটুকু করতে পারে, তা হলো স্রোতটা বয়ে যেতে দিতে পারে এবং পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়া ঠেকাতে পারে। আমার মনে হয়, এটাকেই সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখবে জি৭। সূত্র : এপি।