কেটে গেছে দীর্ঘ ৩১টি বছর, কেউ খবর রাখেনি বোমা হামলায় নিহত শিক্ষার্থী উত্তম বিশ্বাসের পরিবারের। পুত্রশোকে পাগলপ্রায় বাবা অমল কান্তি বিশ্বাস ২০০৫ সালে ও মা লক্ষ্মী বিশ্বাস মারা গেছেন ২০১২ সালে।
জানা গেছে, এরশাদ সরকারের শাসনামলে ১৯৮৯ সালের ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানাধীন পাথরঘাটার বাসা থেকে স্কুলের উদ্দেশ্যে বের হয়ে বোমা হামলার শিকার হন ৭ম শ্রেণির ছাত্র উত্তম। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে উত্থাল নগরের রাজপথে ছিল মিছিল। সেই মিছিলের পেছন দিকে ছিলেন উত্তম। পাথরঘাটা গির্জা এলাকায় হঠাৎ উড়ে আসা বোমার আঘাতে ঘটনাস্থলেই তার শরীরের একাংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। ছত্রভঙ্গ মিছিল থেকে কয়েকজন ছুটে এসে তাকে নিয়ে যায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। খবর পেয়ে ছুটে যান মা। সেখানে মায়ের কোলেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন উত্তম।
পরদিন বেলা ১২টায় উত্তমের মরদেহ পুলিশ পাহারায় নিয়ে আসা হয় ব্রিকফিল্ড রোডের বাসায়। এরপর মাত্র কয়েক মিনিট সময় দিয়ে দুইজন আত্মীয়কে নিয়ে শ্মশানে সম্পন্ন হয় সৎকার।
এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সারাদেশে ১২ জানুয়ারি পূর্ণদিবস ও ১৩ জানুয়ারি অর্ধদিবস হরতাল পালন করে। এ সময় সংগঠনটি এক বিবৃতিতে হরতাল চলাকালে মিছিলের ওপর জামায়াত-শিবিরের বোমা হামলায় উত্তম বিশ্বাস নিহত হয় বলে দাবি করে।
ঘটনার ১৪ দিন পর ২৫ জানুয়ারি দুপুরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাথরঘাটায় উত্তমের বাসায় এসে তার বাবা-মা, ভাই-বোনকে সান্ত্বনা দিয়ে যান। এছাড়া আরো অনেকে আসেন তাদের বাসায়। সবাই দিয়েছিলেন এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস, পরিবারটির পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি।
শহীদ উত্তমের এক বছরের বড় বোন অলকা বিশ্বাসের বয়স তখন সাড়ে ১২ বছর। আরেক বোন সুলেখা বিশ্বাস। ভাই হারানোর যন্ত্রণার পাশাপাশি পরিবার নিয়ে অভাব-অনটনে এখন দিন কাটছে তাদের। অলকা বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, ভাইটা প্রতিদিনের মতো স্কুলে যাওয়ার পথে সেদিন বোমা হামলায় মারা যায়। এ ঘটনায় বাবার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়, সন্তান হারিয়ে মা হয়ে যান নির্বাক।
‘উত্তম হত্যায় কোনও মামলা না হওয়ায় আমরা বিচার পাইনি। তৎকালীন সময়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের বাসায় এলে বাবা একটি দরখাস্ত দিয়েছিলেন। দাবি ছিল- আমাদের বাসাটা ‘শহীদ উত্তম ভবন’ নামকরণ করা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় গেলে এই দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর সে আবদার পৌঁছাতে পারিনি। ’
শহীদ উত্তমের আরেক বোন সুলেখা বিশ্বাস বলেন, চোখ বুজলে এখনও দেখি- দাদার রক্তাক্ত দেহ হাসপাতালের বেডে পড়ে আছে। আমাদের ঘরটা জরাজীর্ণ। বর্ষার বৃষ্টিতে ভিজে আর চৈত্রের রোদে শুকায়। প্রভাবশালীরা শেষ আশ্রয়স্থলটাও কেড়ে নিতে চায়। আমরা রাজনীতি করি না, রাজনীতি বুঝিও না। শুধু ভাই হত্যার বিচার চাই, পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকতে সরকারের সহায়তা চাই। আমরা দুই বোন অনেকবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছি, কিন্তু পারিনি।
কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীপক ভট্টাচার্য্য বাংলানিউজকে বলেন, এরশাদ সরকারের শাসনামলে স্কুলে যাওয়ার পথে বোমা হামলায় নিহত হন উত্তম বিশ্বাস। আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সন্তানহারা পরিবারটিকে দেখতে এসেছিলেন। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাই, অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ালে শহীদ উত্তমের আত্মা শান্তি পাবে।
চসিক নির্বাচনে পাথরঘাটা ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী পুলক খাস্তগীর বাংলানিউজকে বলেন, উত্তম বিশ্বাসের পরিবার অসহায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে পরিবারটির খোঁজখবর রাখছি। উত্তম হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই সরকারের কাছে। মানবতার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলেই এই হত্যাকাণ্ডের বিচার যেন তার পরিবার দেখে যেতে পারে-সে প্রত্যাশা আমাদের।