চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের শহরাংশ অর্থাৎ শের-এ বাংলা রোড চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন মিলেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। গতকাল মঙ্গলবার এ প্রকল্পের অনুমোদন হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে স্বল্প সময়ে মানুষ যাতায়াত করতে পারবে, যানজট ও দুর্ঘটনা কমে আসবে এবং নগরীর সৌন্দর্য অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।
জানা গেছে, নগরীর মধ্যে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক শেরে বাংলা রোড। খুলনা-সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, মোংলা, কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাট, দেবহাটা রুটের সকল যাত্রী এ সড়ক দিয়ে শহরে প্রবেশ ও বাইরে যায়। ফলে এসব যাত্রীদের যাতায়াতে প্রতিদিন অসংখ্য রিকশা, ইজিবাইক ও ভ্যান চলাচলের ভীড়ে বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে গল্লামারী ও জিরোপয়েন্ট এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকা গড়ে উঠায় শহর সম্প্রসারিত হচ্ছে। আর ওই সম্প্রসারিত অঞ্চলে বসবাসকারীদেরও প্রতিনিয়ত এ সড়ক ব্যবহার করতে হয়। ফলে সড়কটির ব্যস্থতা বহু গুণে বেড়ে যাওয়ায় প্রায়শই ঘটছে দুর্ঘটনা। এ অবস্থায় সড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণ সময়ের ও খুলনাবাসীর প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ৬ জুলাই তৎকালীন সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রী খুলনা সফর করেন। সফরকালে তিনি নগরীর শের-এ বাংলা রোড সরেজমিনে পরিদর্শন করে গুরুত্ব উপলব্ধি ও গণমানুষের দাবির প্রেক্ষিতে ময়লাপোতা থেকে জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত ৪.৫৫ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের প্রতিশ্র“তি দেন। প্রতিশ্র“তি অনুযায়ী সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর প্রকল্প গ্রহণ করে ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপোজল (ডিপিপি) ঢাকাস্থ সড়ক বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে প্রেরণ করেন। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ৩২ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা। কিন্তু পরে প্রকল্পের সকল কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। সর্বশেষ গত বছর ডিসেম্বরে ফের ১৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ডিপিপি গঠন করে ঢাকাস্থ সড়ক বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে প্রেরণ করা হয়। প্রকল্পে ৪ কিলোমিটার সড়ক ২৫.২ মিটার প্রশস্থ করণ, ভূমি অধিগ্রহন, ডিভাইডার, পথচারীদের হাটার জন্য ফুটপথ ও পয়ঃনিষ্কাষণের জন্য ড্রেন নির্মাণ ইত্যাদি উল্লেখ্য করা হয়। কিন্তু প্রকল্পের ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপোজল পরিকল্পনা কমিশনে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকে। অবশেষে গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন মিলেছে। তবে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা।
নাগরিক নেতারা জানান, নানা জটিলতায় প্রকল্পটি অনুমোদন মিলছিলো না। তবে পদ্মাসেতু চালু হওয়ার আগে শেরে বাংলা রোড চার লেনে উন্নীতকরণ জরুরি। পদ্মাসেতু হয়ে আসা মানুষ জিরোপয়েন্ট থেকে রূপসা বাইপাস, খুলনা-সাতক্ষীরা সড়ক আর শহরে প্রবেশ করতে গেলে শেরে বাংলা রোড ব্যবহার করবে। এ সড়কটি বর্তমানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই গুরুত্ব উপলব্ধি করে প্রকল্প অনুমোদন দেওয়ায় খুলনাবাসীর প্রাণের দাবি পূরণ হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ জর্জিস হুসাইন বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে স্বল্প সময়ে মানুষ যাতায়াত করতে পারবে, যানজট ও দুর্ঘটনা কমে আসবে, যাতায়াত ঝুঁকিমুক্ত হবে, খরচে ও রাস্তার ক্ষয়ক্ষতি কমবে এবং নগরীর শ্রীবৃদ্ধি হবে।
অনুমোদন : চার মহাসড়কে চালক-হেলপারদের জন্য বিশ্রামাগার নির্মাণসহ ১২ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি। এগুলো বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৫ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭৮ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে বেনাপোল স্থলবন্দরে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২৮৯ কোটি টাকা। টেকসই ও নিরাপদ মহাসড়ক গড়ে তোলার জন্য ৪টি জাতীয় মহাসড়কের পাশে পণ্যবাহী গাড়ি চালকদের জন্য পার্কিং সুবিধা সম্বলিত বিশ্রামাগার স্থাপন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২২৬ কোটি টাকা।