রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নাগরিকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী বলেছেন, এখন পরিস্থিতি ‘অনেক ভালো’। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শনে এসে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ল অ্যান্ড অর্ডার ভেরি গুড ইনশাআল্লাহ। একটা-দুইটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বড় কোনো ঘটনা বলতে পারবেন না।
তিনি বলেন, আমি মনে করি বিচ্ছিন্ন এক-দুইটি, মেইনলি মোবাইল ছিনতাই ব্যতীত কোনো অপরাধ নেই। ল অ্যান্ড অর্ডারে কোনো সমস্যা নেই, এভরিথিং ইজ নরমাল ইনশাআল্লাহ।
সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোডে একটি রিকশাকে ধাক্কা দেয় বেপরোয়া গতির একটি মোটরসাইকেল। সেখানে আরেকটি মোটরসাইকেলে থাকা এক যুগল এর প্রতিবাদ জানান।
এরপর রিকশায় ধাক্কা দেওয়া বাইকের আরোহীরা ওই দম্পতিকে হুমকি দেয় এবং একপর্যায়ে ‘কিল-ঘুসি’ মারে। পরে তারা ফোন করে আরও কয়েকজনকে ডেকে আনলে তারা অস্ত্রসহ ওই যুগলের ওপর চড়াও হয়।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, একটি ঘটনা সিগনিফিক্যান্ট ঘটনা দুই দিন আগে হয়েছে উত্তরায়, যেটা ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সেই ঘটনায় ৫ জনকেই অ্যারেস্ট করা হইছে।
তিনি বলেন, আমরা সাকসেসফুলি সেটা হ্যান্ডল করছি। আমার অফিসার, ফোর্স- সবাই আমরা মনোবল ফিরে পেয়েছি এবং চমৎকারভাবে কাজ করতেছি।
জামিনে থাকা ‘শীর্ষ’ সন্ত্রাসীদের কারণে একুশে ফেব্রুয়ারির নিরাপত্তায় কোনো শঙ্কা রয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে সমস্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে আছে, তাদের এরিয়া অব ক্রাইম বা এরিয়া অব অপারেশন এক জিনিস। আর শহিদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ ভিন্ন জিনিস। এখানে তো তাদের কোনো ইন্টারেস্ট নেই।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ইন্টারেস্ট ভিন্ন ক্ষেত্রে, তারা চাঁদা আদায় বা এটা সেটায় তাদের ইন্টারেস্ট। আর তারা যারা বাইরে আছে আমরা জানি, তাদের আমরা ট্রেস করতেছি, তারা কোণঠাসার মধ্যেই আছে। একেবারে তারা যে ফ্রি অপারেশন করতে পারছে- এমন কিছু নয়।
শহিদ মিনারে ব্যাপক জমায়েতের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনার সাজ্জাত বলেন, এজন্যই ভিভিআইপি, ভিআইপিদের বিদায়ের পর ঢাকাবাসীকে আসার অনুরোধ করছি। তার জন্য সময় নির্ধারণ করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা মনে করছি রাত ১২টা ৪৫ মিনিটের ভেতরে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টাসহ ভিআইপিদের কার্যক্রম শেষ হয়ে যাবে। তারপর সবার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাবে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, সাধারণ মানুষের ভিড়ের মধ্যে যারা আসবেন, তাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ- যেন নিজের নিরাপত্তা, মোবাইল, মানিব্যাগের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।
তিনি বলেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা তিন-চার স্তরে নেওয়া হয়েছে। আজকে সন্ধ্যায় প্রথমে ৫টায়, পরে রাত ৮টা থেকে ডিএমপির অফিসার ফোর্স নিয়োজিত থাকবেন। আগামীকাল বেলা ২টা পর্যন্ত আমাদের ফোর্স এবং অফিসাররা পুরো এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন।
এছাড়া শহীদ মিনারের চতুর্পাশে এক কিলোমিটারের ভেতরে বিভিন্ন মোবাইল টিম সতর্ক অবস্থায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) সরওয়ার বলেন, আমাদের চারপাশে এক কিলোমিটার পর্যন্ত টিম রেডি আছে, যাতে সেখানে গাড়ি প্রবেশ করতে না পারে। যেহেতু এখানে ব্যাপক জনসমাগম হবে। সেজন্য মূলত সাতটা স্থানে রোড বন্ধ করে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, শাহবাগ, নীলক্ষেত, শহীদুল্লাহ হল, হাই কোর্ট, চানখাঁরপুল, পলাশী ও বকশিবাজার ক্রসিং দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে। এখান দিয়ে মানুষ আসতে পারবে না; শুধুমাত্র পলাশী থেকে জগন্নাথ হল হয়ে শহিদ মিনারে যেতে পারবেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দোয়েল চত্বর হয়ে বের হতে পারবেন।
তিনি বলেন, সাধারণত সন্ধ্যা ৬টায় সড়কগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এবার সেটাকে পিছিয়ে সর্বশেষ ৯টা বা ৮টায় বন্ধ করা হবে। সেটা নির্ভর করে শাহবাগ এলাকায় কোনো আন্দোলন বা অবরোধ থাকবে কি না, সেটা হলে ক্লিয়ার করে আমরা বন্ধ করব সর্বশেষ ৯টায়।
এদিকে সব ধরনের ঝুঁকি পর্যালোচনা করে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে শহিদ মিনারকেন্দ্রিক নিরাপত্তা জোরদারের কথা জানিয়েছে র্যাবও।
অবজারভেশন পোস্ট এবং চেকপোস্ট স্থাপনের কথা জানিয়ে বাহিনীর এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শহিদ মিনারের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে র্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড প্রয়োজনীয় সুইপিং সম্পন্ন করবে। পাশাপাশি যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য র্যাবের স্পেশাল ফোর্স সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিভিন্ন এলাকা থেকে শহিদ মিনারমুখী রাস্তার মোড়সমূহে চেকপোস্ট স্থাপনের মাধ্যমে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় তল্লাশির মাধ্যমে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।