শেখ মাহতাব হোসেন:: খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার গ্রামীণ জনপদ উন্নত হবার সাথে সাথে উন্নত হয়েছে উপজেলাবাসীর জীবনমান। কিছুদিন আগেও উপজেলার অধিকাংশ গ্রামীণ সড়কের দুরাবস্থার কারণে জনসাধারণের চলাচলে ভোগান্তির সীমা ছিল না। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে প্রাণহানি ও জানমালের ক্ষতি হতো। যোগাযোগ ব্যবস্থার দুরাবস্থা নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলিকট্রনিক্স মিডিয়ায় সচিত্র সংবাদ প্রকাশের পর মাননীয় ভূমিমন্ত্রী বাবু নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপির সার্বিক পরিকল্পনায় ও এলজিইডির তৎপরতায় উপজেলার সড়ক ও ব্রীজ উন্নয়নে নেওয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি সড়ক ও ১১টিব্রীজসহ বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কের উন্নয়ন কাজ।
ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরখালী ইউনিয়নে যোগাযোগ থেকে শুরু করে পানি পরিশোধন ও সরবরাহ প্রকল্প স্থাপন, মন্দির-মসজিদ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিদ্যুৎসহ প্রায় সব খাতে উন্নয়ন হচ্ছে। এর মধ্যে সমাপ্তকৃত চটচটিয়া সেতু ঘিরে নতুন স্বপ্ন দেখছেন অবহেলিত ইউনিয়নবাসী।
খুলনা ডুমুরিয়া উপজেলার প্রকৌশলী মোহাঃ রবিউল ইসলাম উপজেলার গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ নেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলার রাস্তা, ব্রিজ কালর্ভাট ও সড়ক উন্নয়ন কাজ। উপজেলা প্রকৌশলী আরো বলেন, উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়কের উন্নয়ন কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। শহরের সুবিধা পৌঁছে যাচ্ছে গ্রামেও। ফলে বদলে যাচ্ছে গ্রামীণ জীবন। গ্রামের রাস্তাঘাট উন্নয়নে এখন শহরের সব সুবিধা মিলছে গ্রামে। অধিকাংশ গ্রামেই দেখা মেলে পাকা বা আধাপাকা বাড়ি। সরকারের স্থায়িত্বে উন্নয়নের সুফল প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে আর ক্রমশ বদলে যাচ্ছে সবকিছু। সারাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে এগিয়ে চলছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকাণ্ড। এমনকি এর পাশাপাশি অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে পাল্টে যাচ্ছে গ্রামীণ চিত্র। সরকারের ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ স্লোগানকে বাস্তবে রূপ দিতে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে সূত্র বলছে, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদে এলজিইডির (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর) আড়াইশ প্রকল্পে বদলে গেছে গ্রামীণ জনপদের সার্বিক চিত্র। এর মধ্যে ১৪৯টি প্রকল্পের কাজ শেষ করেছে এলজিইডি। বাকি ১০১টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও সুষম উন্নয়নে পালে হাওয়া লেগেছে। এ ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে গ্রামীণ অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন তাতে দেশের কোনো অঞ্চলই তার দৃষ্টি এড়ায়নি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ অবকাঠামো, রাস্তাঘাট, সেতু, হাটবাজার, পুকুর খনন, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মাণ, উপজেলা কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণের কাজ করে যাচ্ছে। যদিও এক সময়ে অনুন্নত অবকাঠামোগত ব্যবস্থা প্রান্তিক গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় ছিল। তবে সুখবর হলো, এসব সংকট নিরসনে কাজ শুরু করেছে সরকার। বর্তমানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ১০১টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।
এলজিইডি সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করছে সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় রাস্তাঘাট, সেতু, হাটবাজার, পুকুর খনন, ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা কমপ্লেক্স নির্মাণ এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পের মোট ক্রমপঞ্জির ভৌত অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৪৯ শতাংশ। চলমান এ প্রকল্পগুলো বিভিন্ন মেয়াদে শেষ হবে বলে প্রকল্পসূত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ্য এলজিইডি’র উন্নয়নে গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। গ্রামগুলোতে এখন পেয়েছে শহরের ছোয়া।প্রতি বছরই বাড়ছে অবকাঠামো উন্নয়নের পরিমাণ।গত বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে গ্রামীণ রাস্তাঘাট উন্নয়ন পরিকল্পনা দ্বিগুণের বেশি। চলতি বছরেই সড়ক উন্নয়ন ও মেরামত হতে যাচ্ছে প্রায় ১’শ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক। এদিকে কয়েক বছরে ব্যাপক হারে গ্রামীণ রাস্তার উন্নয়নের ফলে গ্রাম অঞ্চলেও শহরের মতো সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে গেছে। যার ফলে গ্রামীণ জীবন ব্যবস্থা পুরোটাই বদলে গেছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ডুমুরিয়া এলজিইডি প্রকৌশলী মোহাঃ রবিউল ইসলাম।
তিনি বলেন , খুলনার ডুমুরিয়া এলজিইডির গ্রামীণ সড়ক রয়েছে ১৫৫০ কিলোমিটার। আর এর মধ্যে মোট ৯৫০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন হয়েছে। যার মধ্যে কার্পেটিং হয়েছে ৮৫০ কিলোমিটার এবং হ্যারিং বা ডাব্লু বিএম বা ইটের সলিং হয়েছে ১০০ কিলোমিটার। গ্রামের অধিকাংশ কাঁচা রাস্তা বর্তমানে কার্পেটিং এবং ইটের হয়ে গেছে। আগের মত এখন কাঁদা-পানিতে ছ্যাত ছ্যাত করে না গ্রামের রাস্তা। ঘরের সাথেই পাকা রাস্তা। যার ফলে গ্রামের রাস্তায় সব সময় বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের অভাব থাকে না। গ্রামের মানুষ এখন কোথাও যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেই বাড়ি হতে বের হওয়ার সাথেই গাড়ি এবং মুহূর্তেই পৌঁছে যাচ্ছে গন্তব্যে।
স্বল্প সময়ের মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। গ্রামীণ অর্থনীতিতেও এসেছে পরিবর্তন। কৃষক তার উৎপাদিত পণ্য সহজেই বাজারজাত করতে পারছেন। শহরের বাজার দরের সাথে গ্রামের বাজার দর এক হয়ে গেছে। কৃষকের লোকসান দিতে হচ্ছে না। চিকিৎসা বা অন্য কোন প্রয়োজনে দ্রুততম সময়ে শহরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারছে গ্রাম। ডুমুরিয়া এলজিইডি’র তথ্য মতে, চলতি অর্থ বছরে সাড়ে ১শ কিলোমিটার বিভিন্ন রাস্তা নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। অধিকাংশ কাজ চলমান রয়েছে।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে খুলনা ৩৭৮.৫ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন হয়। যার এর মধ্যে কার্পেটিং হয়েছে ১৯৬ কিলোমিটার, সংস্কার ১৮৫ কিলোমিটার,ইউনিব্লক ১০ কিলোমিটার, হেরিং আড়াই কিলোমিটার এবং আরসিসি ঢালাই হয়েছে ৭ কিলোমিটার।
ডুমুরিয়া উপজেলা এলজিইডি’র প্রকৌশলী মোহাঃ রবিউল ইসলাম বলেন, গ্রাম অঞ্চলে শুধু সড়ক নয় এলজিইডির প্রতিটা সেক্টর উন্নয়নের ধারা চলমান রয়েছে। ডুমুরিয়া এমন কোন গ্রাম নেই যেখানে পাকা রাস্তা নেই। বর্তমানে গতিশীল উন্নয়ন হচ্ছে। ভুমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এলজিইডির মাধ্যামে ডুমুরিয়ার গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য অর্থ্যাৎ সকল কাচা রাস্তা পাকাকরনের জন্য দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন।বর্তমানে যে সকল উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে এতে গ্রামের চিত্র আরো পরিবর্তন হয়ে যাবে। গ্রামের মানুষ এখন আর কাঁদার মধ্য দিয়ে চলাচল করে না। কৃষকের ফসল উঠানোর জন্য মাঠের রাস্তাও কাঁদা মুক্ত করার জন্য হ্যারিং করা হচ্ছে। এভাবে গ্রামীণ রাস্তা উন্নয়ন হলে আগামী কয়েক বছর পর গ্রামে কাঁচা রাস্তা খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে জানান।