চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ চুক্তি স্বাক্ষরের ১৪ মাস অতিবাহিত হলেও এখনও চালু করা সম্ভব হয়নি বাংলাদেশ স্মার্ট ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি লি: এর কার্যক্রম। কোম্পানীর পরিচালক অর্থ ও ওয়েষ্ট জোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানীর সচিব আবদুল মোতালেব বলছেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যেই কোম্পানী থেকে স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার এসেম্বল শুরু হবে। এমন কথা তিনি বিগত সাত মাস আগেও বলেছিলেন। গত বছর ৩১ মার্চ তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, আগামী ২/৩ মাসের মধ্যেই মিটার তৈরির কার্যক্রম শুরু হবে খুলনায় অবস্থিত দেশের একমাত্র ও প্রথম স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার উৎপাদন কারখানার। রূপসা সেতু বাইপাস সড়কের মোহাম্মদ নগর চৌরাস্তা সংলগ্ন মৃধা কমপ্লেক্সের কোম্পানী কার্যালয়ে গতকাল দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, শুধুমাত্র ভবনের সাজসজ্জা ও সাইনবোর্ডই শোভা পাচ্ছে। প্রধান গেটে চলছে ফলক উম্মোচনের জন্য জায়গা নির্ধারনের কার্যক্রম। অন্য কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীও সেখানে ছিলেন না। কথিত আছে ওই ভবনটি ভাড়া নেয়ার নামেও ওজোপাডিকোর একজন কর্মকর্তা গোপন বাণিজ্য করেছেন। দীর্ঘ প্রায় দু’বছর ধরে ওই বাড়িটি ভাড়া দিয়ে ওজোপাডিকোর লক্ষ লক্ষ টাকা গচ্ছা দেয়া হলেও যেমন স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট কারখানাটি উৎপাদনে যেতে পারেনি তেমনি চায়নার হেক্সিং কোম্পানীর সাথে যৌথ মালিকানায় এ কোম্পানীটি পরিচালিত হওয়ায় অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে ওই কোম্পানী থেকে মিটারের যন্ত্রপাতি কেনার ফলে অন্তত ৫০/৬০ কোটি টাকা অতিরিক্ত দিতে হবে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র আশংকা করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা মূল্য ব্যয় ধরে ২০১৮ সলের ২১ অক্টোবর ওজোপাডিকোর সাথে চীনের হেক্সিং ইলেক্ট্রিক্যাল কোম্পানী লিমিটেডের মধ্যে যৌথভাবে চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্যদিয়ে এ কোম্পানীর যাত্রা শুরু হয়। চুক্তি অনুযায়ী কোম্পানীর ৫১% মালিকানা থাকছে ওজোপাডিকোর এবং চীনের হেক্সিং কোম্পানীর মালিকানা ৪৯%। এজন্য ওজেপাডিকোর ১৯১ তম বোর্ড সভায় ওজোপাডিকো ও হেক্সিং কোম্পানীর সাথে যৌথভাবে গঠিত এ কোম্পানীটিকে সরকারি কোম্পানী ঘোষণা করে ডিপিএম পদ্ধতিতে প্রায় ১২৩ কোটি টাকার স্মার্ট প্রে-পেমেন্ট কেনার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু যে প্রতিষ্ঠান একটি বিদেশী কোম্পানীর সাথে চুক্তিবদ্ধ সেটিকে সরকারি কোম্পানী হিসেবে আখ্যা দেয়া কতটা যৌক্তিক তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যে কোম্পানীর কোন অভিজ্ঞতা নেই, সে কোম্পানী থেকে ডিপিএম পদ্ধতিতে মিটার কেনার মানে সরকারি অর্থ লোপাটের শামিল বলেও অনেকে মনে করছেন।
এ ব্যাপারে সম্প্রতি ওজোপাডিকো চেয়ারম্যান বরাবর দেয়া এক লিখিত অভিযোগে বলা হয়, যেখানে ওজোপাডিকো আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে অর্থাৎ সরকারি অর্থ অপচয় রোধে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে কেনার প্রস্তাব দেয় সেখানে কোম্পানীর বোর্ড সভায় কিভাবে ডিপিএম পদ্ধতিতে কেনার অনুমোদন হলো তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তাছাড়া যে হেক্সিং কোম্পানী ওজোপাডিকো থেকে প্রতিটি মিটারের মূল্য নিচ্ছে ৬৯ ডলার সেই একই হেক্সিং কোম্পানী ডেসকোতে ২৭ ডলার দাম ধরে দরপত্র দাখিল করেছে। এতে একটি মিটারের ক্ষেত্রেই ৪২ ডলার অর্থাৎ প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। অর্থাৎ ১২৩ কোটি টাকার এ মিটার কেনার নামে চীনের হেক্সিং কোম্পানীকে অতিরিক্ত দিতে হবে প্রায় ৬০ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে অবশ্য ওজোপাডিকো ৫১% অর্থাৎ প্রায় ৩০ কোটি টাকা লাভ করলেও বাকী অন্তত: ৩০ কোটি টাকা চলে যাচ্ছে চীনের হেক্সিং কোম্পানীতে। যেটি দেশের সম্পদ লুটের একটি মহোৎসব বলেও অনেকে মনে করছেন।
এ ব্যাপারে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ, বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির অন্যতম সংগঠক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত গণশুনানীতে ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের উপস্থিতিতে খুলনার ওজোপাডিকোর অনিয়ম এবং স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার কোম্পানীর মত কোম্পানীর প্রতিষ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি যথাযথ উত্তর দিতে পারেননি। এমনকি বিইআরসির কাছেও ওজোপাডিকোর এমডি যথাযথ উত্তর দিতে পারেননি। গণশুনানীতে বলা হয়েছিল মিটার কোম্পানী প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু তারও কোন আলামত নেই। এমনকি এমডির বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ খন্ডনে তিনি অস্ত্রধারী আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেও সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। এছাড়া ঢাকায় না করে খুলনায় গিয়ে গণশুনানীর জন্য বলা হয়েছিল। তারও কোন লক্ষন নেই।
তিনি আরও বলেন, ওজোপাডিকোতে যে লুটপাটের রাজত্ব চলছে সেটি তিনি এবং খুলনার নাগরিকরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছেন। কিন্তু সেটিকে কেউ কোন পাত্তা না দেয়ার মানেই হচ্ছে এর সাথে আরও অনেকে জড়িত।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব এড. মো: বাবুল হাওলাদার বলেন, ওজোপাডিকোর প্রি-পেইড মিটার থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত সব বিষয়গুলোই অস্পষ্ট। সংবাদ সম্মেলন করে এ ব্যাপারে ওজোপাডিকোর এমডি যে সময় নিয়েছিলেন সে সময়ও ইতোমধ্যে পার হতে চলেছে। কিন্তু প্রি-পেমেন্ট মিটার সংক্রান্ত জটিলতা এখনও দূও হয়নি। তাছাড়া একই দেশে দু’কোম্পানীর কাছে দু’নিয়মে মিটার কেনা বেচার মানে অর্থ তছরুপের শামিল। একদিকে বছরের পর বছর ধরে অফিস ভাড়া দিয়ে অর্থ তছরুপ হচ্ছে অপরদিকে ৫০/৬০ কোটি টাকা অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে জনগনের অর্থ টাকা লুটেপুটে খাওয়ার চক্রান্ত চলছে। সুতরাং জনগনের টাকা বিদেশে পাচার ও জনগনের টাকা দিয়েই একটি কোম্পানীকে লাভবান দেখানোর কোন সুযোগ নেই। তিনি এ ধরনের কাজ থেকে ওজোপাডিকোকে সরে দাঁড়ানোর আহবান জানান।