খুলনা অফিসঃসম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন খুলনা জেলা ও মহানগর শাখা আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেছেন, পাগল কুকুরের ন্যায় ধর্ষকদেরকেও ভ্যাকসিনের আওতায় আনা উচিত। যাতে তারা আর নারীলিপ্সু না হতে পারে। বক্তারা পাটকলের অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে শ্রমিকদের চেয়ে কর্মকর্তা এবং বিজেএমসির অথর্ব প্রশাসনকে দায়ী করেন। কথা বলেন, পদ্মার এপারের একুশ জেলা নিয়ে গঠিত ওয়েষ্ট জোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানীর প্রি পেইড মিটার নামক যন্ত্রদানব এবং শীর্ষ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়েও।
খুলনার পাটকল শ্রমিকদের সৃষ্ট সমস্যা, ধানের ন্যায্য মূল্য, কেডিএ’র অব্যবস্থাপনা নিরসন ও দেশব্যাপী নারী নির্যাতন প্রতিরোধে করণীয় শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠক গতকাল শনিবার সকালে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবির বালু মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
সামাজিক আন্দোলনের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সবুজের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি জিয়াউদ্দিন তারেক আলী। দৌলতপুর (দিবা-নৈশ) কলেজের সহকারী অধ্যাপক রিপন আহমেদ সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সদস্য সচিব কামাল হোসেন জোয়াদ্দারের পরিচালনায় বৈঠকে বিশেষ অতিথি ছিলেন, গ্রীন নারী কল্যান ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ছাকেরা বানু।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন, যুব পাটশিল্প রক্ষা কমিটির আঞ্চলিক আহবায়ক শ্রমিক নেতা নূরুল ইসলাম, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের বদলী সংগঠনের নেতা মানিক পারভেজ, নাগরিক নেতা শাহী জামাল পন, রূপসা কলেজের সহকারী অধ্যাপক আলী আকবর, দৌলতপুর (দিবা-নৈশ) কলেজের অধ্যক্ষ এ এস এম আনিসুর রহমান, যুব পাটশিল্প রক্ষা কমিটির যুগ্ম আহবায়ক অলিয়ার রহমান, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হাসিবুজ্জামান, গ্রীন নারী কল্যাণ ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষক নাসরীন আক্তার, সাম্যবাদী দলের এফএম ইকবাল হোসেন, খ্রিষ্টান এ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি রেখা বিশ্বাস, ছাত্র প্রতিনিধি মোঃ আল আমিন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি আব্দুল হালিম, ছাত্র প্রতিনিধি নাজমুল রাকিব উজ্জল, বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াহিদ মুরাদ, খুলনা জজকোর্টের এপিপি এ্যাড. মোফাজ্জেল আলম বন্দ, বাংলাদেশ যুবমৈত্রীর সাবেক সভাপতি আরিফুর রহমান বিপ্লব, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার রায়, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন খুলনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ডাঃ এম এন আলম সিদ্দিকী, দৈনিক পূর্বাঞ্চলের স্টাফ রিপোর্টার এইচ এম আলাউদ্দিন, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোজাম্মেল হক, এ্যাড. প্রসেনজিৎ দত্ত, ইংল্যান্ড বার, রমিও বাড়ই, আজিজুর রহমান ছবি, মোঃ ইমন, মোঃ রনি, নির্যাতিতা নারী সাবিনা আক্তার শাম্মী প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, অযুত সম্ভাবনাময় আমাদের বাংলাদেশ। এর রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদের এই দেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর উন্নয়নে অগ্রযাত্রায় এগিয়ে চলছে স্বগর্বে। কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি, দেশব্যাপী নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, খুনসহ বিভিন্ন অপকর্ম আমাদের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করছে। বক্তারা সকল অনিয়ম, অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিজ অবস্থান থেকে প্রতিবাদের মাধ্যমে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
বক্তারা আরও বলেন, খুলনায় পাটকল শ্রমিকদের বর্তমানে সৃষ্ট সমস্যার স্থায়ী সমাধান হওয়া দরকার। কৃষি শ্রমিকদের উৎপাদিত পন্যের দাম ব্যয়ের সাথে সংগতি রেখে সরকারকে নির্ধারণ করা প্রয়োজন। খুলনায় ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিঃ এর প্রি পেইড মিটারের বিদ্যমান অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়াও শ্রীলংকায় গির্জায় মোবা হামলা, নিউজিল্যান্ডে মসজিদে হামলার কারণে আমাদের দেশে জঙ্গিবাদ মৌলবাদ যেন কোন ক্রমেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে সেদিকে সরকার এবং জনগনের প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই বলেও বক্তারা উল্লেখ করেন।
প্রধান অতিথি তার বক্তৃতায় বলেন, বিদ্যুৎসহ প্রতিটি মন্ত্রণালয় এখন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্র শক্তিশালী হলে দুর্নীতি দূর হবে। দেশ যেন আমলাতন্ত্রের খপ্পরে না পড়তে পারে সেদিকেও নজর রাখার আহবান জানান তিনি।
ওজোপাডিকোর দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে বক্তারা বলেন, ফ্রি মিটার দেয়ার নাম করে ওজোপাডিকো মিটার ভাড়া কেটে রাখছে। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা মিটার ভাড়া নিয়েছে ওজোপাডিকো। ডিজিটাল মিটার অকেজো করে নিয়ে যাচ্ছে কোম্পানী। কারও কারও মিটার রেখে যাওয়া হলেও সেগুলো কোন কাজে লাগছে না। অথচ তা কেনা হয় ১২শ’ টাকা করে। প্রি পেইড মিটার সংযোজনের নামে বাড়তি টাকা নেয়া হচ্ছে। চায়নার হেক্সিং কোম্পানীর সাথে গোপন আতাত করে ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কোম্পানি সচিব এসেম্বল করার চুক্তি করেছেন। এছাড়া এমডির খুলনা-ঢাকায় একাধিক গাড়ি ব্যবহার, সদর দপ্তরের রেষ্ট হাউজে বিনা ভাড়ায় থাকা, বাগানের ডাব নিজ বাড়িতে নেয়া, সদর দপ্তরকে গ্লাসরুমে আবদ্ধ করে সাধারণ গ্রাহকদের প্রবেশাধিকারের ওপর বাধা দেয়া, ইন্ডিয়ান এলএনটি কোম্পানীর কাছ থেকে অবৈধ সুযোগ নিয়ে কাজ দেয়া, একাধিকবার আমেরিকা, চীন, ভারত সফরের নামে কোম্পানীর অর্থ লোপাট, তেল টেষ্টের জন্য পোল্যান্ড এবং পারিবারিক কাজে ভারত গিয়ে কোম্পানি সচিবের দুর্নীতি, প্রকল্পের গাড়ি সাবেক চেয়ারম্যানকে দেয়া, বরিশাল ও ঝালকাঠিতে উপকেন্দ্র নির্মাণ হলেও অকেজো হয়ে পড়ে থাকা, ওজোপাডিকোর বড় পদে থাকার পরও কোম্পানি সচিবের হেক্সিং কোম্পানীর বড় পদ দখল করে রাখা, ডিপিপি’র বাইরে সাব স্টেশন করার জন্য প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার জমি কেনা, ২৮ লাখ টাকার গাড়ি কিনে কোম্পানি সচিবের খালাতো ভাইকে দিয়ে চালানো, ওজোপাডিকো স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে অন্যান্য দুর্নীতি, বিধি লংঘন করে কোম্পানি সচিবের চাকরীর মেয়াদ বাড়ানো, কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেয়া হলেও কর্মচারীদের পদোন্নতি না দেয়াসহ নানা দুর্নীতি-অনিয়মের তথ্য তুলে ধরেন বক্তারা।
বক্তারা।