খুলনার নাগরিকদের সাথে ওয়েষ্ট জোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড কর্তৃপক্ষের বৈঠকে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ¦ তালুকদার আব্দুল খালেক বলেছেন, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার মধ্যদিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ নিশ্চিত করার শ্লোগানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কোন অবস্থাতেই যেন এটি ব্যাহত না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। তবে প্রি পেইড মিটার বিষয়ে সৃষ্ট সমস্যা এবং দুর্নীতি-অনিয়মের বিষয়গুলো একদিনেই সমাধানযোগ্য নয় উল্লেখ করে সিটি মেয়র বলেন, আলোচনার পথ খোলা রাখতে হবে। ওজোপাডিকো কর্তৃপক্ষের সাথে সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ যাতে সহজেই কথা বলতে পারেন সেদিকেও নজর রাখার আহবান জানান তিনি।
বুধবার বিকেলে নগর ভবনে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় বৈঠক থেকে সভাপতির বক্তৃতাকালে সিটি মেয়র এ আহবান জানান। তিনি আরও বলেন, কারও কোন কর্মকান্ডের ফলে সরকার যাতে প্রশ্নের সম্মুখিন না হয় সেদিকেও সবার নজর রাখা উচিত।
এসময় খুলনার নাগরিকদের পক্ষ থেকে প্রি-পেইড মিটারের অস্বচ্ছতা ও ওজোপাডিকো’র কোন কোন কর্মকর্তার দুর্নীতি-অনিয়ম বিষয়ে সিটি মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি পর্যায়ক্রমে ওজোপাডিকোর এমডিকে উত্তর দেয়ার পরামর্শ দেন।
প্রি পেইড মিটারে বিদ্যমান দুর্নীতি প্রতিরোধে সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক ডা: শেখ বাহারুল আলম প্রথমে নাগরিকদের পক্ষ থেকে কথা বলেন। কথা বলেন, প্রি পেইড মিটারের অস্বচ্ছতা নিয়েও। বিশেষ করে বিইআরসির নির্দেশনা না মেনে দু’বছরেরও অধিক সময় দু’শ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিলের রিবেট না দেয়ার কারণ জানতে চান তিনি। এছাড়া বিনামূল্যে মিটার দেয়ার কথা বলে ভাড়া নেয়া, কতকাল এ ভাড়া নেয়া হবে তা স্পষ্ট করা না থাকা, খাতওয়ারি টাকা কেটে নেয়ার বিষয়ে গরমিল, বিএসটিআই বা বুয়েটের মত কোন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রি পেইড মিটারের মান যাচাই না করা, ডিজিটাল মিটারের চেয়ে প্রি পেইড মিটারের অধিক বিল আসা, ভ্যাট রেজিষ্ট্রেশন সনদ ছাড়া ভ্যাটা আদায়, মিটার লক হয়ে গেলে অতিরিক্ত টাকা কেটে নেয়া, নো ট্রেস বিলের নামে অনেক পুরাতন আমলের বিল আদায় করা ইত্যাদি বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য দাবি করেন।
এছাড়া নগরবাসীর পক্ষ থেকে বলা হয়, নগরীর দেবেন বাবু রোডের ৫৩ নম্বর হোল্ডিংয়ের পিন্টুর লন্ডির দোকানে অবৈধ মিটার স্থাপন, প্রি পেইড মিটার নষ্ট হলে পুরাতন বিল সমন্বয় না করা, অতিরিক্ত বিল আদায়, ঐচ্ছিক না করে প্রি পেইড মিটারকে বাধ্যতামূলক করা, মালিক ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে মিটার ভাড়া নিয়ে দ্বন্দ্ব, হেক্সিং কোম্পানী মানসম্মত না হলেও বার বার তাদের সাথে কেন চুক্তিতে আবদ্ধ হয়, মিটার সরালেই বাড়তি টাকা দাবি করাসহ নানা বিষয়ে শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে বলে নাগরিক নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন।
জবাবে ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো: শফিক উদ্দিন বলেন, প্রি পেইড মিটার ওজোপাডিকোর একক কোন সিদ্ধান্ত নয় এটি সরকারের সিদ্ধান্তেই লাগানো হয়েছে। তবে এনালগ মিটারে বিদ্যুৎ চুরি ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্ষেত্র বিশেষে ৪০% সিস্টেম লস ছিল এনালগ মিটারে। কিন্তু ডিজিটাল মিটার আসার পর সিস্টেম লস কমেছে। তবে প্রি পেইড মিটার কেন লাগানোর প্রশ্ন আসল সে বিষয়ে তিনি শুধুমাত্র সরকারের সিদ্ধান্তের কথা বলেই পুরো বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, মিটার ভাড়া নেয়া হলেও ১০ বছর পর কোন ভাড়া নেয়া হবে না। এই ১০ বছরের মধ্যে মিটার নষ্ট হলে ওজোপাডিকো নিজ উদ্যোগে সেরে দেবে। চীনের হেক্সিং কোম্পানী সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশের বিউবোসহ ডেসকো, ডিপিডিসি, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও নেসকোও এ কোম্পানীর মিটার ব্যবহার করছে। খুলনার যৌথ মালিকানাধীন মিটার কোম্পানীটি একটি সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার এর ৫১% মালিক। নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে ভ্যাট ও স্টোর চার্জ গ্রহণ এবং দেবেন বাবু রোডের অবৈধ সংযোগ এবং জনৈক গ্রাহকের মিটারের টাকা নতুন মিটারে যোগ না হওয়ার বিষয়টি আমলে নিয়ে পরে তদন্ত করে দেখার প্রতিশ্রুতি দেন ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তবে এ ক্ষেত্রে তিনি বলেন, ১১ হাজার গ্রাহক ওজোপাডিকোতে। এতো বিপুল পরিমান গ্রাহক সামাল দিতে গিয়ে তাদের নিজেদেরও কিছু ত্রুটি থাকতে পারে। পরে দেখবেন বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত বিলের বিষয়টিও। নগরীতে খোলা তারে ঢাকনা দেয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, বর্তমানে ওজোপাডিকোতে চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে। একটি প্রকল্প আসছে যার মাধ্যমে মাটির উপরে কোন তার থাকবে না। আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবলের মাধ্যমে সব তার যখন মাটির নিচ দিয়ে নেয়া হবে তখন আর এসব সমস্যা থাকবে না বলেও এমডি উল্লেখ করেন।
ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ওজোপাডিকোর নির্বাহী পরিচালক(অর্থ) রতন কুমার দেবনাথ, নির্বাহী পরিচালক(প্রকৌশল) হাসান আলী তালুকদার, প্রি পেমেন্ট মিটার প্রকল্পের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রকিবুল ইসলাম, প্রি পেইড মিটারে বিদ্যমান দুর্নীতি প্রতিরোধে সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব মহেন্দ্রনাথ সেন, মোড়ল নূর মোহাম্মদ, শাহ মামুনুর রহমান তুহিন, ওয়ার্কার্স পার্টির মফিদুল ইসলাম, ন্যাপ নেতা তপন রায় ,সাবেক ছাত্রলীগ ফোরামের নেতা শেখ জাহাঙ্গীর হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম বন্দ, নাগরিক নেতা শাহীন জামাল পন, মো: শহীদুল হাসান, মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম ,এড. মেহেদী ইনসার, রুস্তুম আলী হাওলাদার, শেখ আব্দুল হালিম, এসএম সোহরাব হোসেন, সেলিম বুলবুল, কবি রুহুল আমিন সিদ্দিকী, জেলা স্বেচ্ছাস্বেবকলীগের এস এম আজিজুর রহমান রাসেল, সাংবাদিক এস এম রাশীদুল আহসান বাবলু, মুক্তিযোদ্ধা সুবোধ, জেসমিন জামান, প্রমুখ।
সভায় ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো: শফিক উদ্দিন এবং কোম্পানি সচিব আবদুল মোতালেবের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কিছু দুর্নীতির তথ্য প্রমান সিটি মেয়রের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিকে প্রি পেইড মিটারে বিদ্যমান দুর্নীতি প্রতিরোধে সংগ্রাম কমিটির ডা: শেখ বাহারুল আলম ও সদস্য সচিব মহেন্দ্রনাথ সেন এক বিবৃতিতে আগামী ২৮ জুন বিকাল ৩টায় বিএমএ ভবনের জরুরী সভার আহবান করেছেন। বিজ্ঞপ্তি