সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃবিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটারে সূক্ষ্ম দুর্নীতি ও পরিকল্পিত জালিয়াতির অভিযোগ এনে বিষয়টিকে গ্রাহক প্রতারণার শামিল বলে আখ্যায়িত করেছেন নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন ওয়েষ্ট জোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড (ওজোপাডিকো)র চুরি ও দুর্নীতির মাধ্যমে গ্রাহক সমাজকে বিভ্রান্ত করছে। তারা সরকারের সাফল্যকে ম্লান করে দিতে চাইছে। এর প্রতিকার হওয়া দরকার।
গতকাল শনিবার দুপুর ১২ সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের স ম আলাউদ্দিন মিলনায়তনে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ ও খুলনা প্রি-পেইড মিটারে অনিয়ম দুর্নীতি প্রতিরোধের সংগ্রাম কমিটি আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় একথা বলেন আলোচকরা। তারা আরও বলেন প্রি-পেইড মিটার জনবান্ধব নয়, বুয়েট ও বিএসটিআই’র কোন অনুমোদনও দেয়নি। বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরে তারা আরও বলেন তাদের ঘোষণায় শতকরা এক টাকা রিবেট দেওয়ার কথা থাকলেও তা গ্রাহকরা পাচ্ছেন না। এই খাতে জমা হওয়া কয়েক কোটি টাকা কোন হিসাবে রয়েছে বলেও প্রশ্ন তোলেন তারা। আলোচনায় উঠে আসে বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে আগের ডিজিটাল মিটারের জামানত পড়ে থাকা বিষয়। অথচ এই হিসাবের টাকা গ্রাহকদের হাতে পৌঁছায়নি। কোন কোন ক্ষেত্রে আট থেকে ১০ বছরের আগের পুরনো বিলের তাগাদাও দিচ্ছে ওজোপাডিকো।
অভিযোগ করে তারা আরও বলেন, কম বিদ্যুৎ খরচে বেশী চার্জ হচ্ছে না এমন প্রমান এখন পর্যন্ত ওজোপাডিকো দিতে পারেনি। কেবলমাত্র সাধারণ গ্রাহক নাগরিকদের ওপর এই প্রি-পেইড মিটার চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে অথচ বড় বড় শিল্প কারখানায় তা চালু করা হয়নি উল্লেখ করে তারা বলেন প্রি-পেইড মিটার বাধ্যতামূলক না করে ঐচ্ছিক হওয়া উচিত। নিয়ম অনুযায়ী প্রি-পেইড মিটার চালু করা হলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত থাকতে হয়। খুলনা অঞ্চলে তা থাকছে না জানিয়ে বক্তারা বলেন, বিদ্যুৎ না থাকা এবং ঘন ঘন ভোল্টেজ আপডাউন হলে বিদ্যুতের চার্জ লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে তারা বেলাল শিকদার নামের একজন ভুক্তভোগী গ্রাহকের লিখিত অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, তিনি নিয়ম অনুযায়ী তার সমুদয় টাকা পরিশোধ করার পরও ওজোপাডিকোর হিসাব অনুযায়ী কয়েক লাখ টাকার বিল বাকি পড়েছে তার।
মতবিনিময় সভায় প্রশ্ন তোলা হয় প্রি-পেইড মিটারে কোন বিল হবার কথা নয় অথচ ওজোপাডিকো কিভাবে এমন ভৌতিক বিল দিয়েছে? এর জবাবে ওজোপাডিকো জানিয়েছে তাদের সফটওয়্যারে ত্র“টি ছিল। এজন্য বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে এমনকি বেলাল শিকদারকে জেলে যেতে হয়েছিল’। এ প্রসঙ্গে তারা আরও বলেন, প্রি-পেইড মিটারে যে দুর্নীতি হচ্ছে এটা তার স্পষ্ট প্রমাণ।
সভায় সাতক্ষীরা পৌর ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শফিক উদ দৌলা সাগরকে ওজোপাডিকো কর্তৃক শোকজের তীব্র নিন্দা জানানো হয়। সেপ্টেম্বরে খুলনা বিভাগসহ ২২টি জেলার নাগরিকদের কে নিয়ে কনভেশন আয়োজনের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
জেলা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি এড. ফাহিমুল হক কিসলুর সভাপতিত্বে এবং সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের সহ-সভাপতি জাসদ নেতা ওবায়দুস সুলতান বাবলুর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য প্রি-পেইড মিটারে দুর্নীতি প্রতিরোধের সংগ্রাম কমিটি খুলনার আহ্বায়ক ও বিএমএর সভাপতি ডাঃ শেখ বাহারুল আলম, সদস্য সচিব মহেন্দ্রনাথ সেন, যুগ্ম-আহ্বায়ক ও রাজটিকের নির্বাহী পরিচালক মোড়ল নুর মোহাম্মাদ, যুগ্ম-সদস্য সচিব শাহ মামুনুর রহমান তুহিন, নাগরিক নেতা সেলিম বুলবুল, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সভাপতি অধ্যাপক আবু আহমেদ, অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. মুস্তফা নুরুল আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুজ্জামান খোকন, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ সুভাষ সরকার, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এাড. শাহ আলম, সাবেক পিপি এড. ওসমান গণি, সুধাংশু শেখর সরকার, সাংবাদিক সুভাষ চৌধুরী, প্রথম আলোর স্টাফ রিপোর্টার কল্যাণ ব্যনার্জী, সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ, ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা স্বপন কুমার শীল, বাসদ নেতা নিত্যানন্দ সরকার, রওনক বাসার, এড. খগেন্দ্র নাথ, মাধব চন্দ্র দত্ত, এড. রেজওয়ান, মেহেদী আলী সুজয়, এড. ইকবাল লোদী, উদীচী সাতক্ষীরার সভাপতি শেখ সিদ্দিকুর রহমান, ব্যবসায়ী নেতা আহছানুল কাদির স্বপন, জাহিদা জাহান মৌ, ছাত্রমৈত্রীর নেতা প্রণয় সরকার প্রমুখ।