লিওনার্দো অভিনীত ‘দ্য ওলফ অব ওয়াল স্ট্রিট’-এর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ওই দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ বেশ পুরনো। এজন্য ওই চলচ্চিত্র থেকে পাওয়া পারিশ্রমিক ফিরিয়ে দেওয়ারও দাবি উঠেছিল হলিউড তারকার প্রতি।
চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ২০১৭ সালের জুনের কথা। ‘দ্য ওলফ অব ওয়াল স্ট্রিট’-এ অভিনয়ের জন্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রেড গ্রেনাইটের কাছ থেকে পাওয়া অস্কার পদক ফিরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন হলিউড তারকা লিওনার্দো দ্য ক্যাপ্রিও। অস্কারটি মূলত পেয়েছিলেন মারলন ব্র্যান্ডো। দাতব্য নিলাম থেকে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের হাত ঘুরে উপহার হিসেবে লিওনার্দোর ঘরে গিয়েছিল সেটি।
অস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার কারণ, ওই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মালয়েশিয়ার বিতর্কিত রাষ্ট্রীয় ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ওয়ানএমডিবি’র সংশ্লিষ্টতা।
দাতব্য নিলামে ওই ফান্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে পাওয়া অন্যান্য পুরস্কারও ফিরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন ‘টাইটানিক’ তারকা; যদিও সেসব পুরস্কারের বিস্তারিত তথ্য তিনি প্রকাশ করেননি।
সে বছরের জুলাইয়ে হলিউডের প্রোডাকশন কোম্পানি রেড গ্রেনাইটকে অভিযুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রে একটি সিভিল মামলা হয়। অভিযোগ, লিওনার্দো অভিনীত ২০১৩ সালের চলচ্চিত্র ‘দ্য ওলফ অব ওয়াল স্ট্রিট’-এর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি মালয়েশিয়ার ওয়ানএমডিবি ফান্ড থেকে টাকা পেয়েছিল।
ওই বছরের অক্টোবরে লিওনার্দো বলেন, মামলার তদন্তে তিনি সব ধরনের সহায়তা করবেন এবং প্রশ্নবিদ্ধ কোনো উৎস থেকে পাওয়া যেকোনো উপহার বা অনুদান ফিরিয়ে দেবেন।
এর আগের বছর দুর্নীতিবিরোধী একটি বড় সংগঠন লিওনার্দোর কাছে দাবি রাখেন, তিনি যেন ‘সঠিক সিদ্ধান্তটি নেন’ এবং ‘দ্য ওলফ অব ওয়াল স্ট্রিট’ থেকে উপার্জন করা সব টাকা ফেরত দেন। চলচ্চিত্রটি থেকে তার পকেটে অন্তত ২৫ মিলিয়ন ডলার এসেছিল। মালয়েশিয়ার মাল্টি-বিলিয়ন ডলারের দুর্নীতি প্রকল্প ওয়ানএমডিবির সঙ্গে চলচ্চিত্রটির প্রযোজনা সংস্থার সংযোগ যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ খুঁজে পাওয়ার পর এ দাবি তোলা হয়।
এ প্রসঙ্গে বার্লিনভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সামান্থা গ্র্যান্ট দ্য হলিউড রিপোর্টারকে বলেন, ‘দুর্নীতি ফান্ড থেকে এই চলচ্চিত্রের টাকা এসেছে, এ কথা জানলে লিওনার্দো স্বপ্রণোদিত হয়েই ফিরিয়ে দিতেন।’
সে বছরের ১৮ অক্টোবর এ প্রসঙ্গে লিওনার্দো তার প্রথম বিবৃতিতে জানান, রেড গ্রেনাইটের যুগ্মপ্রতিষ্ঠাতা ও ‘দ্য ওলফ অব ওয়াল স্ট্রিট’-এর প্রযোজক রিজা আজিজ ও জো ম্যাকফারল্যান্ডের সঙ্গে মালয়েশিয়ান ওই ফান্ডের সম্পর্কের ব্যাপারটি তিনি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন।
এদিকে গত বছরের জুলাইয়ে মালয়েশিয়ার গ্রেপ্তার হন রিজা আজিজ। তার সৎ-বাবা ও মা- দুজনেই ওই দুর্নীতি মামলার আসামী। সে সময় আজিজ অবশ্য আদালতে দাবি করেন, তিনি কোনো অপকর্মের সঙ্গে জড়িত নন।
এদিকে, মঙ্গলবার ওয়ানএমডিবি কেলেংকারির মূলহোতা, মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে দোষী সাব্যস্ত করে ১২ বছরের কারাবাস এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে ২১ কোটি রিঙ্গিত ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেন দেশটির আদালত। নিশ্চিতভাবেই ঐতিহাসিক এ রায়ে হলিউড পাড়ায় আবারও সোরগোল হবে ‘দ্য ওলফ অব ওয়াল স্ট্রিট’ নিয়ে। লিওনার্দো কী প্রতিক্রিয়া দেখান, সেটিই সময়ই বলে দেবে।
সূত্র: দ্য হলিউড রিপোর্টার, রয়টার্স ও বিবিসি