শেখ মাহাতাব হোসেন, ডুমুরিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি:: খুলনার ডুমুরিয়াসহ সারাদেশে কচুশাক খুবই পরিচিত একটি শাক, এই শাক বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষদের জনপ্রিয়। খুব সহজে এই খাবাপর উদ্ভিদটি বাড়ির সন্নিকাট- যেমন ধানের ক্ষেতের আইলে, খাল-বিলের ধারে যত্রতত্র বিনা যত্নে পাওয়া যায়। গ্রামের মানুষ কখনো এই কিনে খায় না। এই কচুশাক বিভিন্নভাবে রান্না করে খাওয়া হয়। বিশেষ করে ভর্তা ও তরকারি বেশ জনপ্রিয়। ইলিশ মাছ, ছোট মাছ, চিংড়ি বা মাছের শুটকি দিয়ে কচু শাকের তরকারি অসাধারণ হয়। শাকটি সহজলভ্য বলে অনেকেই গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু এই কচু শাকই একমাত্র দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদার পূরণ অগ্রণী ভুমিকা রাখতে পারে। ভিটামিন এ এর খুব ভালো উত্স এই কচুশাক। ভিটামিন এ-এর অভাবে হওয়া সকল ধরনের রোগ প্রতিরোধে কচুশাক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে যেমন- রাতাকানা রোগ। এবং এই কচুশাক আয়রনসমৃদ্ধ বলে অনেকেই এর সমাদর বেশি করে। অনেকের শরীরে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ স্বল্পতা দেখা দিলে সব ডাক্তাররাই কচু শাক খাওয়ার পরামর্শ দেন। কচুশাক এ শুধু ভিটামিন এ রয়েছে তা নয়, এর পাশাপাশি এতে রয়েছে ভিটামিন বি এবং সিও। এমনকি মুখ ও ত্বকের রোগ প্রতিরোধেও কচুশাক সর্বাধিক ভূমিকা রাখে।
এ শাকের মধ্যে উপাদান রয়েছে উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম, যা হৃদরোগ ও স্ট্রোকের মত মৃত্যুর ঝুঁকি থেকে বাঁচায়। তাহলে আসুন আমরা সচেতনভাবে জেনে নেওয়া কচু শাক এর কার্যকারীতা, উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণের কথা। কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা চেহারা থেকে বয়সের ছাপ দূর করতে এবং কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে। কচু শাকে থাকা ভিটামিন এ এটি দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখতে সাহায্য করে এবং চোখ সম্পর্কিত জটিলতা কমায়। প্রতি ১০০ গ্রাম কচুশাকে ৩৯ গ্রাম প্রোটিন, ৬.৮ গ্রাম শর্করা, ১৫ গ্রাম চর্বি, ২২৭ মিলি গ্রাম ক্যালশিয়াম, ১০ মিলি গ্রাম আয়রন ও ৫৬ মিলিগ্রাম খাদ্যশক্তি থাকে।
বানিজ্যিক ভাবে কচুশাক চাষ করেছেন খর্নিয়া ইউনিয়নের আংগারদহ গ্রামের মোঃ গোলাম নবী ফকির, তিনি জানান, সে ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি ও কর্মকর্তার পরামর্শে এ বছর বাণিজ্যিকভাবে কচুশাকের চাষ করেছেন সে। আশা করছে অল্প জমিতে অনেক টাকার কচু শাক বিক্রি করতে পারবেন।
জেনে নেওয়া যাক কচুশাকের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা-
কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকায় রক্তশূন্যতায় ভোগা মানুষদের কচুশাক খাওয়া একরকম আবশ্যক। কচুশাক রাতকানা ও চোখের ছানি পড়াসহ চোখের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে এবং দৃষ্টিশক্তি বুদ্ধি করে। এই কচু শাকে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ বা ফাইবার, যা যেকোন খাবারকে দ্রুত হজম করতে সহযোগীতা করে। ডাক্তাররা বহু রোগীকে বলে থাকেন যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে, তাঁরা যেন বেলায় বেলায় খাবারে কচুশাক আইটেম রাখন।
কি নাই কচু শাক আর কচুতে? কচুশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ যা মানব শরীরে লৌহ উপাদান সহজে আত্তীকরণ হয়ে যায়। এছাড়া ভিটামিন সি শরীরের ক্ষত শুকাতে সাহায্য করে। তাই প্রতিটি শিশুকে ছোট বেলা থেকেই কচু শাক খাওয়ানো অভ্যাস করা।
এব্যাপারে ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, মানবশরীরে কচু শাক অক্সিজেনের সরবরাহ সচল রাখতে অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। এই কচুশাকের আয়রন ও ফোলেট মানবদেহে রক্তের পরিমাণ বাড়ায়। যার ফলে অক্সিজেন সংবহন অবস্থা পর্যাপ্ত থাকে। এতে উপস্থিত ভিটামিনকে কাটাছেঁড়া রক্তপাতের সমস্যা প্রতিরোধ করে। কচু শাকের মূল উপকারিতা হল প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাংগানিজ ও ফসফরাস থাকা। স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বলছে দাঁত ও হাড়ের গঠনে এবং ক্ষয়রোগ প্রতিরোধে কচু শাকের গুরুত্বঅপরিসীম।
ডাক্তার দিন মোহাম্মদ খোকা বলেন, কচুশাকে বিদ্যমান নানা রকমের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান গর্ভবর্তী মা ও শিশুর জন্য অনেক উপকারী। কচু শাক সহজ লভ্য তাই দরিদ্র পরিবারের গর্ভবতী মহিলারা ভিটামিন ও আয়রনের চাহিদা পূরণের জন্য এই কচুশাক খেতে পারেন। কচুশাক খেলে রক্তের কোলেস্টরেল মাত্রা কমে যায়, এবং উচ্চরক্ত চাপে ভোগা রোগীদের জন্য কচুশাক এবং কচু বেশ উপকারী। নিয়মিত কচুশাক খেলে কোলন ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমে। অনেকের কচু শাক বা কচু খেলে গলা চুলকায় কারন অক্সলেট নামক একটি উপাদান থাকার কারণে। তাই কচু রান্না করার সময় লেবুর রস বা সিরকা ব্যবহার বাঞ্চনীয়। তবে যাদের শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদের কচু বা কচুশাক না খাওয়াই ভালো।